ভোটের দিন মরল ৭ জন

সংঘাত-সংঘর্ষ, রক্তক্ষয়, প্রাণহানি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৮৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি ভোটারের এ ইউনিয়নগুলোতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর তা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে কমপক্ষে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে আরও কয়েকশ মানুষ। এছাড়া ভোটকেন্দ্র দখল, ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্স ছিনতাই এবং প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিতও করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটগ্রহণ চলাকালে গতকাল নরসিংদীর রায়পুরায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে কমপক্ষে তিনজনের প্রাণ গেছে। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার দুটি ইউনিয়নে আলাদা সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন দুজন। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ গেছে একজনের। এছাড়া কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এবারের ইউপি নির্বাচন শুরুর পর থেকেই সহিংসতার ঘটনা বাড়ছিল। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। বাড়তে থাকা সহিংসতার প্রেক্ষাপটে তা রোধে ইসির পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও তাতে প্রাণহানি ঠেকানো যায়নি।

অবশ্য নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানির দায় নিতে রাজি নয় ইসি। এমনকি গতকালের নির্বাচনকে ‘খুব ভালো নির্বাচন’ বলে দাবি করেছেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এর দায় প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের।’ অন্যদিকে ইউপি নির্বাচনে ‘একটু ঝগড়াঝাঁটি হয়েই থাকে’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে ইসি ‘ভালো নির্বাচন’ হয়েছে বলে দাবি করলেও সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, একে নির্বাচন বলা চলে না, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। এছাড়া দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের ফলে সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে বলেও মনে করেন তিনি। যেকোনো নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সচরাচর ইসি সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করে থাকলেও গতকাল তা করতে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হয়। প্রথমে ইসির জনসংযোগ বিভাগ থেকে গতকাল কোনো ব্রিফিং করা হবে না বলে জানানো হয়। অবশ্য পরে সন্ধ্যার পরপর প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর। এর আগে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে গতকাল বিকেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এর দায় প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের। এত বড় নির্বাচন। ৮৪৫টি ইউনিয়নে ভোট হলো। আমরা তো মনে করি খুব ভালো ইলেকশন হয়েছে। দুয়েকটি ঘটনা, যেমন যে যে জায়গায় ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কেন্দ্রগুলো আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। ছয়টা জায়গায় আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে, সেই ছয়টা জায়গায় কেন্দ্রেই ভোট বন্ধ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেটা নরসিংদীতে দেখেছি, ওই যে রায়পুরাতে, এটি সকাল বেলা প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মারা গেল। আরেকটি ঘটনাতেও প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে ইমোশনাল হয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, এক পর্যায়ে একটি ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ যত ঘটনা ঘটেছে এভাবেই ঘটেছে। নিঃসন্দেহে এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু এত বড় নির্বাচন, আমরা যদি গত ২০১৬ সালের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে এটি কোনো ব্যাপারই… ইয়ে মানে তুলনাই করতে পারেন না। অনেক কম, অনেক কম।’ সংহিতা প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের বিষয়টি হলো একটি জীবনও যাতে না যায়। এটি হলো আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা। এটি আমরা মনে করি পরবর্তী যে নির্বাচন হবে, যারা প্রার্থী আছে, প্রার্থীর অনুসারী আছে এবং অন্যান্য সেবাগ্রহীতা যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে, সবাই সহনশীল হবেন। আমরা মনে করি এটি পরবর্তী সময়ে আরো ভালো নির্বাচন হবে। হতাহতের ঘটনা আরও কম ঘটবে। পরবর্তী নির্বাচনে যে যে জায়গায় ত্রুটি হচ্ছে সেটা তো আমরা ধরতে পারছি এবং আমরা আরও কঠোর হব এবং ভালো নির্বাচন হবে।’ ইসি সঠিক ভূমিকা নিলে সহিংসতা এড়ানো যেত বলে অনেকে মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে আপনারা দায় নেবেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘এই দায় অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নয়। এই দায়টি হলো যারা প্রার্থী, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, আমি বলব যে তারা, তাদের অনুসারীদের দায় এটা। ধরুন এই যে একটি ঘটনা ঘটল, অভিযোগ হলো, আমরা কিন্তু তদন্তে দিই। প্রতিবেদন এলেই কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনারা দেখবেন যে, এই যে শরীয়তপুরে আমরা দেখেছি সব প্রার্থীকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে বলেছে যে শুধু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতবে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছি। তদন্ত করে দেখেছি। এটি সত্য বলে প্রতীয়মান হওয়ার সেই ইউপির তফসিলই আমরা বাতিল করে দিয়েছি। নতুন করে আবার নির্বাচন হবে। অর্থাৎ যেই যেই জায়গাতে সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর ওপর কমিশন কিন্তু তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে।’ তবে ইসি সচিবের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই নির্বাচন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। যাকে নির্বাচন বলা চলে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সাধারণত উৎসবমুখর হয়ে থাকে। এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন মানে কোনো নির্বাচনই হয়নি। নির্বাচন মানে বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। যেখানে বিকল্প নেই, তার মানে সেখানে নির্বাচন নেই। এসব জায়গায় নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই যে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, এর মূল কারণ হলো রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। একটি গোষ্ঠী দলীয় স্বার্থে রাজনীতি করে, জনস্বার্থে নয়। পদ-পদবি পেলেই বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা পাবে। অন্যায় করে পার পেয়ে যাবে, এজন্যই তারা মরিয়া এবং সহিংস আচরণে লিপ্ত হয়।’ দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের ফলে সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়া মানেই নির্বাচিত হয়ে যাওয়া। এজন্যই তারা মরিয়া। এ কারণেই তারা বিভিন্ন রকম অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। মনোনয়ন বাণিজ্যসহ সহিংসতায়।’ নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি বলেও মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘তারা যদি যারা অন্যায় করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিত, কঠোর ব্যবস্থা নিত। এরপরও নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচন বাতিল করতে পারত। এ অপারগতা, অদক্ষতা, সবচেয়ে বড় কথা হলো তাদের ওপর কারও আস্থা নেই। এ নির্বাচন কমিশন নির্বাসনে চলে গিয়েছে।’

নরসিংদীতে দিনভর সংঘর্ষে নিহত ৩ : দিনভর সংঘাত-সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্স লুটের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নরসিংদীর ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। কেন্দ্র হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্স লুটের অভিযোগে রায়পুরার দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্র দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ীতে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনজন নিহত হওয়ার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাঁশগাড়ীতে তিন নিহতের পর মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে এলাকার বিবদমান দুটি পক্ষ। যেকোনো মুহূর্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। তবে পরবর্তী সংহিংসতা রোধে এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতরা হলেন বাঁশগাড়ী গ্রামের হেকিম মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিন মিয়া (৪৫), একই এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (৪৫) ও হক মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর (২৭)। এর মধ্যে সালাউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রাতুল হাসান জাকিরের সমর্থক। আর নিহত দুলাল বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী আশরাফুল হকের সমর্থক বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানায়, বাঁশগাড়ী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফুল হক সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রাতুল হাসান জাকিরের উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে গত বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি চালানো হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সালাউদ্দিন, জাহাঙ্গীর ও দুলাল মিয়া মারা যান। আহত হন কমপক্ষে ২০ জন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কুমিল্লায় নিহত ২ : কুমিল্লার তিতাস এবং মেঘনা উপজেলার ১৬ ইউপিতে নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতায় জেলার মেঘনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার সদর ইউপির আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভাওরখলা ইউপির খিলারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আলাদা দুটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নিহতরা হলেন মেঘনা উপজেলার সানাউল্লাহ ঢালী এবং একই উপজেলার ভল্লবের কান্দি গ্রামের শাওন।

কক্সবাজারে সহিংসতায় নিহত ১ : কক্সবাজারে নির্বাচনী সহিংসতায় আখতারুজ্জামান (৩০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি খুরুশকুল ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) শেখ কামালের ছোট ভাই। গতকাল সকালে সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়ায় এলাকায় ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মেম্বার প্রার্থী শেখ কামালসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত আকতারুজ্জামান পুতু মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ফটিকছড়িতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত ১ : ফটিকছড়ির লেলাংয়ে ইউপি নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মোহাম্মদ শফি নামে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর ২টার দিকে লালপুল তোফায়েল আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ফুটবল প্রতীকের মুরাদ ও মোরগ প্রতীকের জামাল পাশার সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর আগে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছেন। এছাড়া ফটিকছড়ির বাগানবাজারে নির্বাচনী সহিংসতায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী রুস্তম আলী ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সাজুর কর্মী-সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সংঘর্ষের পর সীতাকু-ে কেন্দ্র স্থগিত : চট্টগ্রামের সীতাকু-ের নয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের আগের রাত থেকে শুরু করে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একটি কেন্দ্রের ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। অন্য একটি কেন্দ্রে ব্যালটে সিল মারার ঘটনায় ৩০০ ব্যালট বাতিল করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট। এদিকে কুমিরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসার সময় গাড়িচাপায় শামশুল আলম (৯০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।

না.গঞ্জে কেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষ : নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষ ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে ১৬টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটগ্রহণ চলাকালে বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নে ৭নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে সদস্য প্রার্থী মনির ও রনির সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউপি নির্বাচনে একাধিক অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলজার হোসেন।  দুপুরে সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে ভোট চলাকালে পুলিশ ও র‌্যাবের পিটুনিতে আহত হয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও তার কর্মীরা। এছাড়াও তিনটি উপজেলার একাধিক ইউনিয়নের কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাতক্ষীরা সদরে আ.লীগ প্রার্থীসহ সমর্থকরা আহত : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের খলিলনগর কেন্দ্রে দুপক্ষের সংঘর্ষে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুজ্জামান অসলেসহ আটজন আহত হয়েছেন। পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া একই ইউনিয়নের কাথন্ডা ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবদুল জলিলের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছেন।

বেগমগঞ্জে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ গুলিবিদ্ধ ৪ : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা হলেন ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুর রহমান (৪০), সাইফুল ইসলাম (২৬), আবদুস সবুর (৩০) ও মামুনুর রশিদ (৩০)। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

কালকিনিতে সংঘর্ষে শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ : মাদারীপুরের কালকিনির সাহেবরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩নং ওয়ার্ডের আন্ডারচর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি ছোড়ে। এছাড়া কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় দেড় ঘণ্টা ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল।

মাগুরায় আ.লীগ নেতা জখম : মাগুরা সদর উপজেলার আঠারোখাদা ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভাইয়ের হামলায় সুজন বিশ্বাস (৩২) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা জখম হয়েছেন। আহত সুজন আঠারোখাদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জে ব্যালট পেপার ছিনতাই : হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জুলসুখা ইউনিয়নে ভোট গণনার সময় ব্যালট পেপার ছিনতাই ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। ওই কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

গাইবান্ধায় ফাঁকা গুলি : গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে গতকাল দুটি কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সকালে মালিবাড়ী ইউনিয়নের কাবিলের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা হামলা করার চেষ্টা করলে পুলিশ ৯ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে দুপুরে বাদিয়াখালী ইউনিয়নের পুরাতন বাদিয়াখালী মাদ্রাসা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে পুলিশ নৌকা প্রতীকের চার সমর্থককে আটক করে।

পঞ্চগড়ে ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ১নং বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে ৪নং সিপাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে হামলা এবং ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ ভোটকেন্দ্রে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ভোটকেন্দ্র ভাঙচুর ও ব্যালট বক্স ও পেপার ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। এরপর পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

জামালপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা : সাংবাদিকদের ওপর চেয়ারম্যান প্রার্থীর হামলা, ভোটকেন্দ্র স্থগিতের মধ্য দিয়ে জামালপুরে ১৫ ইউপির ভোটগ্রহণ হয়েছে। দুপুরে তিতপল্ল্যা ইউনিয়নের তিতপল্ল্যা কানাইকুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সাংবাদিকরা জাল ভোট দেওয়ার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আজিজুর রহমান আজিজের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ও সাংবাদিকদের মারধর ও লাঞ্ছিত করে। এতে নিউজ টুয়েন্টিফোরের সাংবাদিক তানভীর আজাদ মামুন, এনটিভির আসমাউল আসিফ, আজকের বিজনেস বাংলাদেশের খন্দকার রাজু আহমেদ, নিউজ টুয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপারসন শাকিল আহম্মেদ, মাই টিভির ক্যামেরাপারসন শাওন মোল্লা, একুশে টিভির ক্যামেরাপারসন সালাউদ্দিন আহমেদ মিঠু আহত হন। অন্যদিকে মেষ্টা ইউনিয়নের বুখুঞ্জা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপারভর্তি ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা, পরে কেন্দ্রটি স্থগিত করা হয়।

শেরপুরে দিনভর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া : দিনভর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে। কেন্দ্র দখল ও নানা অনিয়মের অভিযোগে কুরিয়া ইউনিয়নের গনই ভরুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরশেরপুরসহ তিনটি ভোটকেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ অন্তত তিনটি কেন্দ্রে প্রচুর ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখে। এ সময় অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

চাঁদপুরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া : চাঁদপুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থীদের সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ ১০ থেকে ১২ জনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রশিদ।

বড়াইগ্রামে সংঘর্ষে আহত ১০ : নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যানের কর্মীদের মধ্যে গতকাল চান্দাই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই সংঘর্ষ হয়। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা

Leave a Comment