তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্পের ১০ দিন পার হয়েছে। এখনো ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আটকে পড়া মানুষদের জীবিত উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। ভূমিকম্পের ২৪৮ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৭ বছর বয়সী কিশোরী আলেয়েনা ওলমেজকে। তুরস্কের কাহরামানমারাসে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম টিআরটি হাবের।
এদিকে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের আনতাকিয়া শহরে ২২৮ ঘণ্টা পর এক মা ও তাঁর দুই শিশুসন্তানকে উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। সংবাদ সংস্থা আনাদোলু জানায়, আনতাকিয়ায় উদ্ধার ওই নারীর নাম ইলা। তাঁর দুই সন্তান মেসাম ও আলী। একটি ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। এর আগে গতকাল বুধবার কাহরামানমারাসে উদ্ধার হন দুই নারী। তাঁদের একজনের বয়স ৪২ বছর। তাঁর নাম মেলিকে ইমামোগ্লু। এ ছাড়া একই শহর থেকে ৭৪ বছর বয়সী আরেক নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়া ও তুরস্কে সবশেষ মৃতের সংখ্যা জানা গেলেও এই দুই দেশে ঠিক কী পরিমাণ মানুষ নিখোঁজ, তা এখনো জানা যায়নি। গত মঙ্গলবার রাতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কেই মৃত্যু ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া আরও ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ১৩ হাজার মানুষ এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তুরস্কের আনতাকিয়ায় ৯ দিন পর উদ্ধার হওয়া এক মা ও তাঁর দুই সন্তানের অবস্থা সম্পর্কে উদ্ধারকারী মেহমেত এরিলমাজ জানান, বেঁচে যাওয়া ওই নারীর নাম ইলা। উদ্ধারের সময় তাঁর জ্ঞান ছিল। মেহমেত বলেন, ‘আমি তাঁর হাত ধরি। তিনি তখন কথা বলে ওঠেন। আমরা তাঁকে সান্ত্বনা দিই। এরপর আমরা কাজ চালিয়ে যেতে থাকি। আমরা খুশি যে আমরা জীবিত হিসেবে পঞ্চম কাউকে উদ্ধার করলাম।’
উদ্ধারকারী মেহমেত ও তাঁর দল খনিতে উদ্ধারকাজ চালানোয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, উদ্ধারের সময় ইলা প্রথমেই পানি চেয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক দল না আসা পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, আজ কী বার? ইলা ও তাঁর দুই সন্তানকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া স্বাস্থ্যকর্মী আলী পারলাস বলেন, তিনজনের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের অবস্থা ভালো ছিল।
এদিকে তুরস্কের আদিয়ামান শহরের একটি সাততলা অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসস্তূপ থেকে মঙ্গলবার গভীর রাতে ৭৭ বছর বয়সী এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম ফাতমা গুঙ্গর। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ভূমিকম্পের প্রায় ২১২ ঘণ্টা পর ফাতমাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফাতমা উদ্ধার হওয়ার পর স্বজনেরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাঁরা উদ্ধারকারী দলকে জড়িয়ে ধরেন।
অক্ষত ভবন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে এই অঞ্চলের প্রতিটি শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্পের পরপরই তুরস্কের এসব শহর পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। সেই পথে হাঁটতে শুরু করল দেশটি। প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে, যেসব ভবনের বেশির ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
ভূমিকম্পে তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হাতায় প্রদেশ। সরকার বলছে, সেখানকার শহরগুলোর অর্ধেকের বেশি ভবন হয় ধসে গেছে, নয়তো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া অনেক ভবন এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী করার কোনো উপায় নেই।
এ প্রসঙ্গে তুরস্কের পরিবেশ ও গৃহায়ণবিষয়ক মন্ত্রী মুরাত কুরুম এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, যেসব ভবন একবারে গুঁড়িয়ে দেওয়া দরকার, সেগুলো দ্রুত গুঁড়িয়ে দেব আমরা। এসব স্থানে নিরাপদ বাড়ি নির্মাণ করা হবে।’
বিভিন্ন দেশ থেকে যাঁরা উদ্ধারকাজে অংশ নিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় গিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের কার্যক্রম প্রায় গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেক উদ্ধারকর্মী ইতিমধ্যে ফিরে গেছেন নিজ দেশে। বাকিরা ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
তবে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এরদোয়ান বলেন, ‘ধসে যাওয়া ভবনের নিচে পড়ে থাকা শেষ নাগরিকটিকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত আমরা অভিযান চালিয়ে যাব।’