একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষক শামীম শিকদার আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আজ মঙ্গলবার বিকেলে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শামীম শিকদার স্কাল্পচার পার্কের কিউরেটর ইমরান হোসেন বলেন, শামীম শিকদার রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মারা যান।
বাসসের খবরে বলা হয়, ১৯৭৪ সালে এই ভাস্কর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থিত। শামীম শিকদার ২০০০ সালে একুশে পদক অর্জন করেন।
শামীম শিকদার চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ললিতকলা অনুষদের একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন।
ইমরান হোসেন বলেন, মাস ছয়েক আগে লন্ডন থেকে দেশে আসেন শামীম সিকদার। ফুলার রোড এলাকায় ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম’-এ তাঁর করা ১১৬টি ভাস্কর্য রয়েছে। এখানে তিনি আরও ১৩৪টি ভাস্কর্য তৈরির কাজের বিষয়ে দেশে আসেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। ঢাবির চারুকলা অনুষদে জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যটিও তিনি নতুন করে করতে চেয়েছিলেন।
৭০ বছর বয়সী শামীম সিকদার হৃদ্রোগ, শ্বাসতন্ত্র, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। অসুস্থ হওয়ায় চার মাস আগে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি না হওয়ায় মার্চের শুরুতে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছয় দিন ধরে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন।
বাসসের খবরে বলা হয়, শামীম সিকদার ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়ার মহাস্থান গড়ের চিংগাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। পরে ১৯৭৬ সালে তিনি লন্ডনের স্যার জন কাস স্কুলে চলে যান।
শামীম শিকদার এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। দুজনই লন্ডনে বসবাস করেন। আগামীকাল মোহাম্মদপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। এর আগে মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।