ভারতে সরকারি নীরবতা ও বিজেপির কৌশল

ভারতে সরকারি নীরবতা ও বিজেপির কৌশল

বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর দুর্গাপূজার সময় এমন আক্রমণ সাম্প্রতিককালে আর ঘটেনি। এত মন্দিরে ভাঙচুর হয়নি, এত প্রতিমাও নষ্ট করা হয়নি। তবু ভারতের শাসক হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি নীরব। সরকারও চুপ। শেখ হাসিনার সরকারের ওপর ভরসা জ্ঞাপন ছাড়া সরকারিভাবে ভারত এসব ঘটনার নিন্দা বা সমালোচনামূলক একটি বিবৃতিও দেয়নি। সরকার ও শাসকের আশা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক সরকার কড়া হাতে এই ঘটনাবলির মোকাবিলা করবে। দোষীদের শাস্তি দেবে।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মুচকুন্দ দুবে মনে করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সাম্প্রতিককালে যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তাতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনার প্রকাশ্য সমালোচনা ও নিন্দা করা কঠিন। মঙ্গলবার রংপুর ডেইলীকে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কঠোর বিবৃতি না দিয়ে ভারত ভালোই করেছে। কারণ, তাতে আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ত। তা ছাড়া তাতে লাভও হতো না। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওপর ভরসা রেখে ভারত নীরব থাকতে বেশি পছন্দ করছে। কিন্তু মুচকুন্দ দুবে এ কথাও মনে করিয়ে দেন, সাম্প্রতিককালে ভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যেসব ঘটনা ঘটেছে ও এখনো বিক্ষিপ্তভাবে ঘটে চলেছে, তাতে বাংলাদেশের এই ঘটনার নিন্দা করার মুখ ভারতের নেই। তিনি বলেন, কাচের ঘরে বাস করে অন্যের প্রতি ঢিল ছোড়া যায় না। বাংলাদেশের ঘটনাবলির নিন্দা করার নৈতিক অধিকার উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারত হারিয়ে ফেলেছে।

সরকারিভাবে ভারতের এই নীরবতা একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখতে চাইছেন বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো ও বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত। মঙ্গলবার রংপুর ডেইলীকে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন যা, তাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কিছু বলা হাসিনার পক্ষে বিড়ম্বনার হতো। স্বাভাবিকভাবেই ভারত তাঁকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চাইছে না। তাই এই নীরবতা। তবে শ্রীরাধা বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, এই দুঃখজনক ঘটনাবলি নিয়ে নিশ্চয়ই দুই দেশের নেতৃত্বের মধ্যে কথা হয়েছে। এটা স্পষ্ট, হাসিনার ওপর ভারতের ভরসা আছে। সেই ভরসার জায়গা ভারত হারাতে চায় না।’

বীণা সিক্রি (২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন)
এ ঘটনার পর দুই দেশের নেতৃত্বের পারস্পরিক বাক্যালাপ নিয়ে বীণা সিক্রিও নিশ্চিত। ভারতের এই সাবেক কূটনীতিক ও বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার মঙ্গলবার রংপুর ডেইলীকে বলেন, ‘হাসিনার সঙ্গে ভারতের যা সম্পর্ক, তাতে প্রকাশ্য সমালোচনা বা কড়া প্রতিক্রিয়ার স্থান নেই। উচিতও নয়। কারণ তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা। দেখতে হবে হাসিনার ওপর ভারত যে ভরসা রেখেছে, তা যেন বিফলে না যায়। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক ও দ্রুত শাস্তি হওয়া দরকার। আমার মনে হয় ভারত সরকার ও ভারতের শাসক দল বিজেপি এই কারণেই এখনো পর্যন্ত এই নারকীয় কাণ্ড নিয়ে মুখ খোলেনি।’

সাবেক কূটনীতিক ও বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে সে দেশের সাধারণ শান্তিপ্রিয় ও অসাম্প্রদায়িক মানুষ যেভাবে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন, যেভাবে রাস্তায় নেমেছেন, তাতে স্পষ্ট—দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র শেষ হয়ে যায়নি। তবে বীণা সিক্রি মনে করেন, এত বড় মাপের ঘটনার আগাম হদিস বাংলাদেশের গোয়েন্দারা না পেলে তা অবশ্যই চিন্তার। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দুশ্চিন্তার, আগাম খবর সত্ত্বেও ব্যবস্থা যদি গ্রহণ না করে থাকে। তিনি বলেন, গত মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় গোটা দেশে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। গোয়েন্দারা তা থামাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবারেও তথৈবচ। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তাঁর মতে, সরকারকে বিপাকে ফেলতে এটা যদি চক্রান্ত হয়ে থাকে, তা হলে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পক্ষে তা চিন্তার। তাঁকে নড়েচড়ে বসতে হবে।

দলগতভাবে বিজেপি ও সরকারের দিক থেকে নীরবতা পালিত হলেও সংঘ পরিবার ও হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজেপির দিক থেকে এটা একধরনের রাজনৈতিক কৌশল। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ, অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়েরা মঙ্গলবার দিল্লিতে যন্তরমন্তরে ‘বাঙালি হিন্দু বাঁচাও সমিতি’র পক্ষ থেকে এক বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। শেখ হাসিনাকে তাঁরা শক্ত হতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভারত কীভাবে বারবার বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে তা তিনি ভুলে যেতে পারেন না। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রোশ দিবস পালনের কর্মসূচি নিয়েছে। মঙ্গলবার তারা দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলে, পৃথিবীর যেখানে মুসলমানেরা সংখ্যাগুরু, হিন্দুরা সেখানে উৎপীড়িত। এই সংগঠনের নেতা সুরেন্দ্র জৈন বলেন, সরকারের উচিত বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া। স্যোশাল মিডিয়ায় বিজেপিও এ ঘটনা নিয়ে অতি সক্রিয়।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *