সারা দেশে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ে সর্বস্তরের নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব ও কোন্দল লেগেই আছে। এ কারণে তৃণমূলে সংগঠনে বিরাজ করছে লেজে-গোবরে অবস্থা। দলকে শক্তিশালী করতে অন্যতম অন্তরায় এই বিরোধ। তবে তৃণমূলের বিরোধের অবসান ঘটাতে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার জেলার সঙ্গে চকোরিয়া উপজেলার নেতাদের মধ্যকার কোন্দল দূর করা হয়েছে। ওই দুই সাংগঠনিক জেলার নেতারা বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
সোমবার (১৪ জুন) কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিকালে হবিগঞ্জ জেলার কমিটি নিয়ে আলোচনায় বসেন ওই জেলার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সব সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা। এরপর বুধবার (১৬ জুন) চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা। ২৪ জুন কুমিল্লা উত্তর জেলার বর্ধিত সভা, ২৬ জুন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার কর্মিসভা করবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ১৯ ও ২০ জুন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে বিদ্যমান বিরোধ মেটাতে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংগঠনকে একেবারে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ শুরু করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘শুধু দূরত্ব বা বিরোধ দূর করাই এই কার্যক্রমের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। সংগঠনের সর্বস্তরে চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনা ও শক্তিশালী করাও এর উদ্দেশ্য।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৫ জুন) পাবনা জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ওই জেলার ৫ উপজেলার নেতাদের নিয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হেসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠকে বসবেন। সেখানেও বিরোধ দূর করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উপায় বের করা হবে। পাবনা জেলা-উপজেলার নেতারা ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এস এম কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে সংগঠনের অভ্যন্তরে পরস্পর বিরোধী গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এরা দলের ক্ষতি করছে। অধিকাংশ এলাকাই দেখা যায়, ব্যক্তি স্বার্থে দলাদলি। প্রভাব বিস্তার করে রাখার বিরোধ। এগুলো দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছি।’
ক্ষমতাসীন দলের সূত্র জানায়, মূলত স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ। তাই দ্রুত বিরোধ দূর করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী নেতারা বলেন, দলাদলি ও বিরোধ জিইয়ে রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সুফল ঘরে তোলা কঠিন হবে। তাই যত দ্রুত অভ্যন্তরীণ বিরোধ সামাল দেওয়া যাবে, দলের জন্য তা মঙ্গল হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে দলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। এসব দিক আমলে নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনারও বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে নেতাদের প্রতি। গত শনিবার (১২ জুন) আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের বলেন, ‘দলের বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এর মাশুল গুণতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করলেই কেবল যেকোনও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা সম্ভব। ’
মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘দলের সর্বস্তরে ঐক্য ফেরাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কাজ করছেন। তৃণমূলে সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মূল লক্ষ্যই হলো— সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করা।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় সাংগঠনিকভাবে জিমিয়ে পড়েছে। নেতায়- নেতায় বিরোধও রয়েছে বেশকিছু জেলায়। ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিরোধপূর্ণ জেলা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিরোধ দূর করবেন।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘এবার নতুন কৌশলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। করোনা বিধি মেনে স্বল্প পরিসরে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বসছি। আবার জেলা-উপজলা ও পৌরসভার নেতাদের সঙ্গেও বসছি। তাতে করে সুফল আসছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বল্প পরিসরে বৈঠকগুলোতে সবাই মন খুলে কথা বলতে পারেন। সমস্যার সমাধানও হয়ে যাচ্ছে।’ স্বপন বলেন, ‘নেতায়-নেতায় থাকা দূরত্ব দূর করাসহ সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই মূলত কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা। নেতাদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর ক্ষেত্রে আমার ভেতরে একটা কনফিউশন কাজ করতো। পরে দেখা যায়, ওইসব নেতা ঢাকায় ডাকলে সম্মানিতবোধ করেন।’