বিমানের টিকিট প্রতারণায় ‘৫০ কোটি টাকা’ লোপাট

বিমানের টিকিট প্রতারণায় ‘৫০ কোটি টাকা’ লোপাটবিমানের টিকিট প্রতারণায় ‘৫০ কোটি টাকা’ লোপাট

ই–কমার্সের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিমানের টিকিট বিক্রির নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ‘৫০ কোটি টাকা’ আত্মসাতের খবর দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এই প্রতিষ্ঠানের নাম টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকম। বিদেশগামীদের জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং দেখিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে টাকা নেয় তারা। পরে ওই ব্যক্তিরা ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখেন তাঁদের নামে কোনো টিকিট বুকিং নেই।

একটি ট্রাভেল এজেন্সির একজন কর্মকর্তার মামলার পর টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মিজানুর রহমান সোহেল ও রাকিবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান জানান, প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য জানা গেছে। গতকাল মিজানুর রহমানকে সদরঘাট থেকে এবং এর আগে ৪ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা থেকে রাকিবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের প্রতারণার ধরন সম্পর্কে সিআইডি জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) অনুমোদনপ্রাপ্ত বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বাকিতে টিকিট নিত। তারপর ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে টিকিট বুকিং রাখত। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসার কাজ চলছিল।

হঠাৎ তারা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বড় ক্ষতির আশঙ্কা থেকে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তখন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা টিকিট ফিরিয়ে দিতে শুরু করে। টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকম ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিল, তারাও গ্রাহকদের টিকিটের নিশ্চয়তা দিয়ে আসছিল। একপর্যায়ে যাত্রীরা বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখেন, তাঁদের নামে কোনো টিকিট নেই।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন ইউনিক ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. মুসা মিয়া সাগর। তিনি বলেন, ছোটখাটো সমস্যা থাকলেও তাঁরা টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিলেন। হঠাৎ করে গত এপ্রিলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ‘টেকনিক্যাল’ সমস্যার কারণে তাদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। এরপর তাঁরা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের পর সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু ঈদের পরও সমাধান হয়নি। যাত্রীরা বিমানবন্দরে গিয়ে দেখেছেন তাঁদের টিকিট নেই।

মুসা মিয়া বলেন, ‘অনেক প্রবাসী ভাইকে অনেক বেশি দামে জরিমানা দিয়ে নতুন টিকিট করে দিয়েছি। আবার অনেককে করে দিতে পারি নাই। তাতে অনেক প্রবাসী ভাইয়ের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। ভিসার মেয়াদ না থাকার কারণে তাঁরা আর যেতে পারেন নাই।’

গ্রাহকেরা এই সমস্যায় পড়ায় মুসা মিয়া তাদের অফিসে যান। গিয়ে দেখেন তাদের সব অফিস বন্ধ, মালিকদের ফোনও বন্ধ। তারপর ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে পারে, টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকম আইএটিএর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার পরও তারা এই সংস্থার এজেন্ট ইস্ট ওয়েস্ট, আল রাজি, টেলন, সানজার এভিয়েশন লিমিটেডসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে টিকিট দিত। টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের লোকজন পালিয়ে যাওয়ার পর আইএটিএর প্রতিনিধিরা টিকিট গণহারে ফিরিয়ে দিতে থাকেন। তাদের প্রত্যেকেই অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেউ চার কোটি, কেউ দুই কোটি আবার কেউ দেড় বা এক কোটি টাকা করে পেত।

মামলার বাদী টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকমের পাশাপাশি আইএটিএর বড় প্রতিনিধিদেরও দুষছেন। তাঁরা কেন এত টিকিট বাকিতে দিলেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন তিনি।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *