বাদাম আমদানি বেড়ে দ্বিগুণ

বাদাম

একসময় উচ্চ আয়ের মানুষের খাদ্যতালিকাতেই আটকে ছিল বিদেশি হরেক রকমের বাদাম। অভিজাত রেস্তোরাঁয় সুস্বাদু খাবার এবং আইসক্রিম ও বেকারি কারখানায় বিভিন্ন পণ্য তৈরিতেই কেবল এসব বাদাম ব্যবহার করা হতো। সীমিত চাহিদার কারণে আমদানিও ছিল সামান্য। আর শোভা পেত বিভিন্ন সুপারশপ ও অভিজাত দোকানগুলোতে। এটা অবশ্য পাঁচ–সাত বছর আগের কথা।

সেই বাদাম এখন উচ্চ, মধ্যম ও স্বল্প আয়নির্বিশেষে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের খাদ্যতালিকায় ঢুকে গেছে। হাত বাড়ালেই মিলছে পাড়ামহল্লা ও অলিগলির দোকানে। বিক্রি হচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট প্যাকেটে। দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আমদানি বাড়িয়ে চলেছেন। দেশে মূলত চার ধরনের বিদেশি বাদাম আমদানি হয়। এগুলো হচ্ছে—কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, আখরোট ও পেস্তাবাদাম। এ ছাড়া খুব অল্প পরিমাণে হ্যাজেলনাটও আমদানি হয়। সবই আসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) প্রভৃতি দেশ থেকে এসব বাদাম আমদানি হয়।

কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত ২০১৩–১৪ অর্থবছরে বিদেশি বাদাম আমদানি হয়েছিল ৬০৬ টন, যার সিংহভাগই কাঠবাদাম। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই আমদানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে আমদানির তালিকায় হরেক রকমের বাদাম যুক্ত হয়। ফলে ২০১৯–২০ অর্থবছরে সব মিলিয়ে বিদেশি বাদাম আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৫১৯ টন। পরের অর্থবছরেই (২০২০–২১) আমদানি বেড়ে একলাফে দ্বিগুণের বেশি হয়, যা পরিমাণে ৫ হাজার ৪৪৯ টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আমদানি বেড়েছে ১১৬ শতাংশ।

করোনা অতিমারির কারণে যেখানে অনেক পণ্যের আমদানি কমেছে, সেখানে বাদাম আমদানি বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, আগে রেস্তোরাঁ এবং আইসক্রিম ও বেকারি পণ্য তৈরিতেই মূলত বিদেশি বাদাম ব্যবহৃত হতো। এর বাইরে উচ্চবিত্তরা ছিল এসব বাদামের ভোক্তা। এখন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের মধ্যেও বিদেশি বাদামের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসচেতন তরুণেরা সময়ে সময়ে বিদেশি বাদাম খাচ্ছেন। সার্বিকভাবে ভোক্তা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে। সেই সুবাদে বেড়েছে আমদানি।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ফারুক আহমেদ বলেন, ধারাবাহিকভাবে আমদানি বাড়ছে—এটা ঠিক। যেভাবে চাহিদা বাড়ছে, তাতে এখানে বিদেশি বাদামের বড় বাজার তৈরির সুযোগ আছে। বিশ্ববাজারেও বাদামের চাহিদা বেশি। তাই দেশীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানির জন্যও কারখানায় বিনিয়োগ করেছি। প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে এই বাদাম রপ্তানি করেছি ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১০ সালে ৩১৩ টন বাদাম আমদানি হয়, যার দাম ছিল ২০ কোটি টাকার মতো। দেশীয় কাস্টমস বিভাগের আমদানিসংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাত বছর আগে খুচরা মূল্যে বিদেশি বাদামের বাজারের আকার বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। বিদেশি বাদাম আমদানিকারকের সংখ্যাও বাড়ছে। দুই বছর আগেও বিদেশি বাদাম আমদানি করতেন মাত্র ২৫ জন ব্যবসায়ী। গত অর্থবছরে এই সংখ্যা বেড়ে ৭৪ জনে উন্নীত হয়েছে।

উদ্যোক্তা বাড়ছে
বিদেশি বাদাম মূলত আমদানিনির্ভর। বিদেশি বাদামের মধ্যে শুধু কাজুবাদামই দেশে উৎপাদন হয়। তা–ও চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। এরপরও আমদানির পরিবর্তে দেশীয় বাজার ধরতে দেশে কারখানা গড়ে তুলছেন উদ্যোক্তারা। দেশে বর্তমানে চট্টগ্রাম ও নীলফামারীতে কাজুবাদামের দুটি বড় কারখানা আছে। এ ছাড়া ছোট আকারের ১০টি কারখানা রয়েছে।

দেশে পার্বত্য অঞ্চলে বছরে দেড় হাজার টনের মতো কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। এসব বাদাম প্রক্রিয়াজাত করে ২৫০–৩০০ টনের মতো প্রস্তুত বাদাম তৈরি হচ্ছে। উদ্যোক্তারা খোসাসহ কাঁচা কাজুবাদাম আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করছেন। এতে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সরকারও উদ্যোক্তাদের জন্য করভার কিছুটা কমিয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা রপ্তানিমুখী কারখানার জন্য কাজুবাদাম আমদানিতে আরও শুল্কছাড় চাইছেন। নীলফামারী জ্যাকপট কেশোনাট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কারখানা বান্দরবানে উৎপাদিত বাদাম প্রক্রিয়াজাত করে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে
রপ্তানি করেছে।

নীলফামারী জ্যাকপট কেশোনাট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইবনুল আরিফুজ্জামান বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ছে। শুধু দেশীয় নয়, বিশ্ববাজারেও বাদামের চাহিদা বেশি। তাই দেশীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানি করার জন্যও কারখানায় বিনিয়োগ করেছি। প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রে এই বাদাম রপ্তানি করেছি ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *