বরিশালে ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

বরিশালে ইউএনও’র বাসভবনে হামলাবরিশালে ইউএনও’র বাসভবনে হামলা

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় সিভিল প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে। দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে স্থানীয় এই ঘটনা এখন সারা দেশের মানুষের কাছেই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা এ ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন।  

ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের এক বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, ‘আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বক্তব্যের সঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগের তেমন দ্বিমত নেই। তবে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ও সব জেলায় (বরিশাল) ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।’

অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। সিভিল প্রশাসন একজন নির্বাচিত মেয়রকে এভাবে বলতে পারে কি না, তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে দলটির নেতাদের মধ্যে। কেউ কেউ মনে করেন, এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি বা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

অবশ্য দলটির নেতারা এ–ও বলছেন, প্রশাসনের এই অবস্থান একটি নির্দিস্ট এলাকা ও নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে। একে পুরো দলের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। পাশাপাশি ওই নেতারা মনে করেন, বরিশালের ঘটনার সমাধান আরও ভালোভাবে করা যেত। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসন এবং মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ পরিস্থিতি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। যার কারণে সিভিল প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দল—দুই পক্ষের মধ্যেই অস্বস্তি, সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

ঘটনার পর সরকারের মন্ত্রীরা এ ঘটনা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, তা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথায় উঠে এসেছে। গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, তিনি পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, নিজ দলেরও নেতাকর্মী হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বরিশালের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা জানেন। শিগগিরই এর একটা সমাধান হয়ে যাবে। এই নেতা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এখন যদি দলের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের দ্বন্দ্ব থাকে, সেটা কারোর জন্যই ভালো নয়। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ এই দায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, তথা আওয়ামী লীগকেই দেবে। তবে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রীরা ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলেছেন। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠনের বিবৃতিটা আরও পরিমার্জিত হতে পারত।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, গণমাধ্যমে খবর দেখে এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করার কিছু নেই। তা ছাড়া বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাও তিনি নন। হানিফ বলেন, কোনো সমস্যা হলে চিন্তা করে দল ও সরকার যেটা করণীয়, সেটা করবে।

শুক্রবার সকালে আলাপকালে একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তা–কর্মচারী মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে দায়িত্ব পালনে সমস্যা হয়। মূলত এ কারণেই অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এমন প্রতিক্রিয়া। এই সচিব মনে করেন, কোথাও কোথাও সরকারি দলের কর্মীরা কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। মাঠ প্রশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। এ অবস্থায় প্রশাসন চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, সেখানে এটাই বলতে চাওয়া হয়েছে যে যার যার কাজ তাকে করতে দিতে হবে। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তায় কারও বাধা মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।


বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছাসংবলিত ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এ সময় ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাঁদের পরিচয় জানতে চান। পরে তাঁরা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতা হাসান আহেমদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি আতিকুল্লাহ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব খান, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।

ইউএনও মুনিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসেন। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাঁদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তাঁরা আমাকে গালিগালাজ করেন। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালান।’


এই ঘটনা পুলিশ ও ইউএনও দুটি মামলা করেন। এতে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই ডজন নেতা–কর্মীর নামও রয়েছে।

বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবাই যদি ঠান্ডা মাথায় বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করতেন, তবে ঘটনা এত দূর গড়াত না। এখন আমরা চাই, এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সম্পাদক বলেন, তাঁরা যতটুকু জেনেছেনতা হলো, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের দ্বন্দ্বের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে। এর মধ্যে ইউএনও কীভাবে এলেন, তাঁর বাসায় কেন হামলা করা হলো, এটা একটা রহস্য। স্থানীয় রাজনীতির একটা বিষয় এখন সরকারের ওপর এসে পড়েছে, দলের ওপর পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, আলোচনার সময় আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এই ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এত ছোট ইস্যুকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দুষছেন তাঁরা। প্রশাসনের বিবৃতিতে যে ভাষায় বলা হয়েছে তা শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না বলে মনে করছেন নেতারা। ’

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *