বদদ্বীন স্বামীকে দ্বীনের পথে আনা ও নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার পদ্ধতি-

বদদ্বীন স্বামীকে দ্বীনের পথে আনা ও নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার পদ্ধতি-

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক সুখকর এবং ইহকালীন ও পরকালীন স্থায়ী শান্তির আশায় প্রত্যেক মুসলমান মেয়ের উচিত দ্বীনদার মুত্তাকী ছেলেদের নিকট বিবাহ বসতে চেষ্টা করা এবং অভিভাবকদেরও যিম্মাদারী যে, দ্বীনদার ছেলে দেখে তার নিকট নিজেদের অধীনস্থ মেয়েদেরকে বিবাহ দেয়ার ব্যবস্থা করা।

হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে-

اذا خطب اليكم من ترضون دينه وخلقه فزوجوه ان لا تفعلوه تكن فتنة فى الارض رفساد عريض

অর্থ: কেউ যদি তোমাদের নিকট বিবাহের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বীনদারী ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তাহলে অচিরেই বিবাহের ব্যবস্থা কর, নতুবা সমাজে মারাত্মক ফিতনা-ফাসাদ বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। (তিরমিযী শরীফ ১/ ২০৭)

এক্ষেত্রে অভিভাবকদের অবহেলায় বা বাস্তব পর্যবেক্ষণের অসম্পূর্ণতায় কেউ বদদ্বীন স্বামীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকলে, তখন তার উচিত স্বামীকে দ্বীনদার বানানোর সকল চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তাকে হাক্কানী আলেমের সাথে সম্পর্ক গড়তে ও তাবলীগ জামা‘আতের সাথে জুড়তে উৎসাহিত করা এবং স্বামী যদি সুদ-ঘুষ খেতে অভ্যস্ত থাকে অথবা অন্য কোন অবৈধ রোজগারে অভ্যস্ত থাকে, তাহলে বিনয়ের সাথে তাকে বুঝাবে যে, আমার দামী দামী খানা-পিনা ও পোশাক, অলংকারের কোন দাবী বা চাহিদা নাই। আমি শুধু এতটুকু চাই যে, আমার জন্য দু’বেলা দু’মুঠো হালাল ডাল ভাতের ব্যবস্থা করবেন। সাধারণ কাপড় পরাবেন যাতে আমরা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হই। দুনিয়া তো একভাবে চলেই যাবে। সুতরাং, আপনার রোজগারের মধ্যে কোনভাবে হারামের সংমিশ্রণ যেন না হয় সেদিকে আপনি খুবই সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।

সেই সাথে স্ত্রী নিজেও পরিপূর্ণ দ্বীনদারীর সাথে চলতে চেষ্টা করবে। নিজেদের সুন্দর, সুখময় দাম্পত্য জীবনের জন্য সর্বদা আল্লাহর দরবারে দু‘আ করতে থাকবে। শরীয়তের আওতায় থেকে স্ত্রী নিজেকে সবসময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে। যাতে স্বামী তার রূপ-লাবণ্যে, সৌন্দর্যে এবং ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে অন্য সব কিছু ভুলে যায় এবং দ্বীনদার হওয়ার চেষ্টা করে।

স্বামীর সাংসারিক কাজে ত্রুটি না ধরে আন্তরিকভাবে তার খেদমত ও সহযোগিতা করবে, তার আয়-উন্নতির ব্যাপারে সহযোগিতা করবে, কোন জিনিসের দাবী করবে না, বেহুদা খরচ করবে না। স্বামী প্রদত্ত প্রত্যেক জিনিসের প্রতি খুশী থেকে তার শুকরিয়া আদায় করবে এবং তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের খেদমত করে দু’আ নিতে থাকবে।

উপরোক্ত কাজগুলো ইন্‌শাআল্লাহ ফলদায়ক হবে এবং ধীরে ধীরে স্বামী দ্বীনের দিকে ও স্ত্রীর দিকে আকৃষ্ট হতে থাকবে। এরপরও যদি ফল না হয়, স্বামীর বদ-দ্বীনী বাড়তে থাকে, তাহলে নিজের ও সন্তানদের আখিরাতের চিন্তায় মুরব্বীর মাধ্যমে স্বামী থেকে খোলা তালাক গ্রহণ করে তার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার অবকাশ রয়েছে।

উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে অনেক মূর্খ মহিলা যাদু-টোনা, তাবীজ-কবজের মাধ্যমে স্বামীকে নিজের মুঠের মধ্যে রাখতে চেষ্টা করে, এটা জঘন্য অপরাধ।
কারণ, পুরুষদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তুলনামূলক জ্ঞান বুদ্ধি বেশি দিয়েছেন, তার অভিজ্ঞতাও বেশী। সুতরাং, সে স্বাধীনভাবে মুরব্বীদের পরামর্শে চললে তার নিজের, বিবি বাচ্চাদের সকলের উন্নতি হবে। সংসারে শান্তি আসবে।

আর যদি অবৈধ পন্থায় তার স্বাধীনতা হরণ করে তাকে বেকুব বা গর্দভ বানিয়ে রাখা হয়, তাহলে এ ধরনের অকেজো স্বামী নিজ স্ত্রীর গোলামী করলেও তার দ্বারা স্ত্রীর নিজেরও কোন কল্যাণ হবে না; বরং ভবিষ্যতে মারাত্মক বিপদে পড়তে হবে।

সারকথা, স্বামীর স্বাধীনতা হরণ করাও নাজায়েয এবং যাদু টোনা করাও হারাম কাজ। আর কোন কোন অবস্থায় কুফরী কাজ। সুতরাং, কোন অবস্থাতেই স্বামীকে বশ করার জন্য এ সব হারাম কাজ করে নিজের আখিরাত বরবাদ করবে না। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪/ ৮৭, ৬/ ১৯৮)

আল্লাহ তা‘আলা সকল দম্পতিকে তাঁর হুকুম এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকা মত চলে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

~ মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
প্রধান মুফতী ও শাইখুল হাদীস,
জামি’আ রাহমানিয়া মাদরাসা,ঢাকা।

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *