প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলা হয় শাকিবকে

একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে তাঁরা তিনজন কাজ করেন। তবে সময়মতো বেতন পান না। তাই কুরিয়ার সার্ভিসে কাজের সেই অভিজ্ঞতা থেকে নিজেরাই প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসার পরিকল্পনা করেন। মালামাল সরবরাহের জন্য তাঁদের একটি পিকআপ দরকার ছিল। এ কারণে শাকিব নামের এক পিকআপচালককে ঠিক করেছিলেন। শাকিবকে ব্যবসায়িক অংশীদার করার প্রস্তাবও দেন তাঁরা। শাকিব এতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ক্ষোভ থেকে তাঁকে হাত-পা বেঁধে গভীর রাতে নদীতে ফেলে দেন।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদী থেকে এক মাসে আগে পিকআপচালক শাকিবের হাত-পা বাঁধা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত তিন ব্যক্তির মধ্যে দুজন গতকাল রোববার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার দুজন শাকিব হত্যার কারণ হিসেবে নৌ পুলিশের কাছে এসব কথা বলেন।

নৌ পুলিশ জানিয়েছে, কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার দুজন হলেন মিজানুর রহমান ও সিয়াম। এ ছাড়া রিয়াজ নামের আরও একজন শাকিবকে হত্যায় অংশ নেন। তাঁরা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্থানীয় একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী। তিনজন পরিকল্পনা করে হাত-পা বেঁধে পিকআপচালক শাকিবকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেন।

নৌ পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, মুন্সিগঞ্জে আলু সরবরাহের কথা বলে প্রথমে শাকিবকে অগ্রিম ৫০০ টাকা দেওয়া হয়।

এরপর শাকিবকে মোহাম্মদপুরের বাসায় ডেকে নেন মিজানুর, সিয়াম ও রিয়াজ। তাঁকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরবরাহ করে আয় করা অর্থ ভাগভাগির প্রস্তাবও দেওয়া হয় শাকিবকে। তবে শাকিব এ প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর রশি দিয়ে শাকিবের হাত-পা বাঁধার পাশাপাশি মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ভয় দেখানো হয়। এতেও রাজি না হওয়ায় ক্ষোভ থেকে গভীর রাতে শাকিবকে পিকআপে করে ভাঙ্গাবাড়ী সেতুর পূর্ব পাশে নদীতে ফেলে দেন।

নৌ পুলিশ বলছে, গত ৩ নভেম্বর পিকআপসহ নিখোঁজ হন শাকিব। এর দুই দিন পরে ৫ নভেম্বর শাকিবের পিকআপটি কেরানীগঞ্জের ভাঙ্গাবাড়ী সেতুর পূর্ব পাশের ফাঁকা জায়গা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর আশপাশের এলাকায় চালকের খোঁজ করতে থাকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ। ৬ নভেম্বর কেরানীগঞ্জের রায়েরচরের বুড়িগঙ্গার শাখা নদী থেকে শাকিবের লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।

নৌ পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, শাকিব হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা প্রথমে পিকআপটি নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো থাকলে ধরা পড়তে পারেন, এমন ভয় থেকে তাঁরা পিকআপ রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় রেখে দেন। তাঁদের ধারণা ছিল, যদি ট্র্যাকার লাগানো না থাকে, তবে সেটি মালিক খুঁজে পাবেন না। তখনই তাঁরা সেটি নিজেদের হেফাজতে নেবেন। কিন্তু দুই দিনের মধ্যেই পিকআপ উদ্ধার হওয়ায় তাঁরা ভয় পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

 

Leave a Comment