প্রসঙ্গ: হাদীস প্রচারে সচেতনতা

প্রসঙ্গ: হাদীস প্রচারে সচেতনতা

আগে প্রায় সময়ই বোনেরা প্রশ্ন করতেন বিভিন্ন হাদীস দেখিয়ে, “এটা কি সহীহ?”
প্রতিবারই বলতাম, আমার হাদিসের রেফারেন্স লাগবে সহীহ কিনা খোঁজার জন্য। আল্লাহর ইচ্ছায় প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে আলোচ্য বিষয় দিয়ে খুঁজলেও মূল হাদীস পাওয়া যায় বেশিরভাগ সময়। কিন্তু যেগুলো আসলে হাদীসই না, মানুষ “হাদীসে আছে” বলে ভাইরাল করে দিচ্ছে, সেসব তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব না! তাই রেফারেন্স চাওয়া। সাধারণত সেই হাদীস নিয়েই প্রশ্ন আসতো যেগুলো হাদীস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই কিছু খুঁজে পাওয়াও যেত না। এসব অনেক আগের কথা- এখন বোনেরা জানেন যে রেফারেন্স না থাকলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা মুশকিল।

এবার দুইটা পোস্টে চোখ পড়লো। একটিতে দুর্বল হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে একটি ফটোতে। না সাহাবার নাম আছে, না হাদীস গ্রন্থের রেফারেন্স, আর না হাদীসের পর্যায় কী (সহীহ না দুর্বল) লেখা আছে। শুধু শেষে লেখা “~রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”! অদ্ভুত না? এটা তো ডেল কার্নেগীর কথার উদ্ধৃতি দেয়া হচ্ছে না, আপনার আমার কথারও না-  আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস তুলে ধরা হচ্ছে- সেটার জন্য কিছু নিয়ম তো মানা উচিত? আদবের সাথে বলা উচিত, তাই না?

আরেকটি পোস্ট দেখলাম। বনী ইসরাইলের অনেক অদ্ভুত কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, হাদীসে আছে বলে। তার নিচে আরেকটি এক লাইনের হাদীস সংযোজন করা হয়েছে। এবার সেই দ্বিতীয়টির রেফারেন্স দেয়া আছে- আবু দাউদ। প্রথমটির কোনো রেফারেন্সই নেই। কোনো উপায়ে খুঁজে উদ্ধার করতে পারলাম না, না আরবীতে, না বাংলায়, না ইংলিশে যে, এটা আদৌ হাদীস কিনা! অথচ সাধারণ মানুষ এই পোস্ট দেখে দ্বিতীয় হাদীসের রেফারেন্স নিয়েই মেনে নিবে প্রথমটিও আছে! ফলাফল- পোস্ট ভাইরাল। ভয়ঙ্কর ফলাফল- হাদীস না এমন অনেক কথা মানুষের মাঝে প্রচলিত হয়ে যাচ্ছে হাদীস হিসেবে। যাঁরা জানেন বা বোঝেন যে এগুলো হাদীস না, তাঁদের মনেও তথ্যটা থেকে যাচ্ছে- মন হয়তো তথ্যের ভিড়ে একসময় এটাই ভুলে যাবে যে, এটা তো হাদীসই না!

হাদীস শাস্ত্র নিয়ে উলামগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সমস্ত হাদীসের বিস্তারিত এখন সংরক্ষিত। এবং এই যুগে আলহামদুলিল্লাহ, সেসব জানার জন্য অনেক পরিশ্রম করার প্রয়োজন নেই। একটু সচেতন হওয়াই যথেষ্ট। নিজে হাদীসের কথা বলার সময় একটু রেফারেন্স দেয়া। আর অন্যের পোস্টে সেই রেফারেন্স আছে কিনা দেখা। সেই অন্য মানুষটা পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য হলে ঠিক আছে। না হলে কষ্ট করে সেই রেফারেন্স খুঁজে দেখা- হাদীসটি যদি পাওয়া যায়, সেটা নিয়ে উলামারা কী বলেছেন জানা। আর রেফারেন্স ছাড়া কোনো কথা নিজেও না দেখা আর অন্যকেও না দেখানো। এইটুকুই কাজ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে কেউ যেন ভুল কিছু মানুষের মাঝে ছড়িয়ে না দেয়, তার জন্য এইটুকু কষ্ট কি আমরা করতে পারবো না?

একদিকে হাদীস শাস্ত্র নিয়ে কোনো রকম পড়ালেখা না করে মানুষ হাদীস অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। অন্যদিকে একদল মানুষ যেকোনো কিছুকে হাদীস বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আমাদের সামান্য সর্তকতা এবং সচেতনতা হাদীসের মর্যাদার বিষয়ে মানুষকে অবগত করবে। আমরা কি আল্লাহর দ্বীনের জন্য এইটুকুও করবো না? আমরা বলি আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালোবাসি। তাঁর হাদীস সঠিকভাবে প্রচারের জন্য, আর তাঁর নাম করে মিথ্যা উদ্ধৃতি ছড়ানো বন্ধ করার জন্য এইটুকু সচেতনতা কি আমরা তৈরী করবো না?

অনুগ্রহ করে সকলে, যার যার পরিচিত মানুষের মাঝে এই বিষয়টি তুলে ধরুন। হাদীস নিয়ে যেকোনো কথাবার্তা এখন থেকে হোক রেফারেন্স সহ। আর যাচাইকৃত রেফারেন্স ছাড়া হাদীস সংক্রান্ত যেকোনো পোস্ট এখন থেকে হোক উপেক্ষিত। তাহলে একসময় সবাই সঠিকভাবে, সুন্দর করে হাদীসের উদ্ধৃতি দিবে, ইন শা আল্লাহ।

 

উস্তাযা নায়লা নুযহাত

Leave a Comment