পোস্টমর্টেম কিভাবে করে? ময়না তদন্ত রিপোর্ট? আত্মহত্যার আগে পড়তেই হবে

থার্ড ইয়ার থেকে মেডিকেল স্টুডেন্টদের ফরেনসিক ক্লাস শুরু হয়।
ক্লাসের একটা পার্ট হচ্ছে পোস্ট মর্টেমে উপস্থিত থাকা; কীভাবে করা হয় দেখা ও শেখা ।
.
আমরা একদম প্রথম যে দুইটা কেস পেয়েছিলাম-
দুইটাই মেয়ে,অল্প বয়সী।
দুইটাই সুইসাইডাল কেইস।
একজন গলায় ফাঁস,আরেকজন বিষ খেয়ে মরা।
.
প্রথমেই ডেড বডির শরীর থেকে কাপড় সব খুলে ফেলা
হয়। ডাক্তার , স্টুডেন্ট ,পুলিশ এবং ডোম ( যারা কমনলি লাশ কাটে,
হ্যান্ডেলকরে ) সবাই উপস্থিত থাকে সেখানে। এরপর গলা
থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত ছুরি দিয়ে চামড়া
কাটা হয়। এরপর গরুর যেভাবে চামড়া ছাড়ায় সেভাবে চামড়া ছাড়ায়।
তারপর বুকের পাঁজর যেভাবে যেভাবে কাটে সেটাকে ঠিক
কাটা বলা যায় না; ভাঙে বললেই ভালো! গরুর হাড় যেভাবে কশাইরা
কাটে অনেকটা সেরকম।
কন্ঠনালী অনেকটা টেনে হিঁচড়ে বের করে জিহ্বা সহ।
এরপর হার্ট, লিভার, পাকস্থলি কেটে প্রিজার্ভ করা হয় ।
.
বেশি খারাপ লাগে যখন মগজ বের করে। আমাদের দেশে
‘ইলেক্ট্রিক স’ নাই, মাথার খুলি কাটার জন্য। ওরা যেটা করে-
কাঠমিস্ত্রির দোকানে হাতুড়ি বাটাল হয়ত দেখে থাকবেন, ওই হাতুড়ি
বাটাল দিয়ে বাড়ি দিয়ে দিয়ে খুলি ফাটায়; খুলি ভাঙার শব্দটা খুব অদ্ভুত!
তার আগে মাথার মাথার চামড়া সহ চুল মোটামুটি বলা যায় হ্যাঁচকা টানে
খুলে ফেলা হয়। তখন মানুষটাকে আর মানুষ মনে হয় না ।
এক্সামিন শেষে ব্রেইনটাকে পেটের ভেতর পুরে দিয়ে
সেলাই করে দেয়।
.
সত্যি বলতে কোরবানির সময় গরু ছাগল জবাই থেকে মাংস কাটা
সবই দেখেছি, করেছি।
আমার কাছে মনে হয়েছে গরু ছাগলও অনেক যত্ন নিয়ে
কাটে মানুষ! কারণ ওটার চামড়া দামী, মাংস দামী। চামড়াটা যেন অক্ষত
থাকে, চামড়া যেন থেতলে না যায়; এমন অনেক কিছু
মেইনটেইন করা লাগে। শুধু পোস্ট মর্টেমের সময়
যেভাবে ডেড বডির সাথে বিহেভ করা হয়, সেটা দেখে প্রত্যেক ডাক্তার আর মেডিকেল স্টুডেন্ট মনে মনে এই
দোয়া করতে কখনও ভুলে না- খোদা , আমাকে এমন মৃত্যু দিও না যে আমার মৃতদেহের পোস্ট মর্টেম করার প্রয়োজন
পড়ে ।
!
এইগুলো সাধারণত পাবলিকলি না বলাই ভালো। কিন্তু এতকিছু আজকে
বললাম শুধু নিউজ ফিডে একটা সুইসাইডাল মৃত্যুর খবর বেশ ঘুরপাক
খাচ্ছে দেখে। সেই পুরাতন প্রেম, প্রেমে ব্যর্থতা, হতাশায় ডুবে যাওয়া
এরপর মেয়েটার/ছেলেটার সুইসাইড; মরার আগে ছেলেটাকে/মেয়েটাকে দায়ী করে যাওয়া।
.
একবার আমার ফ্রেন্ড লিস্টের একটা মেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিল
‘এই দেশে যতটুকু শালীনতা এখনও আছে ধর্মীয়
মূল্যবোধের কারণেই’।
মেয়েটা হিন্দু; এইরকম স্ট্যাটাস সাধারণত মুসলমানেরাও খুব একটা
ওপেনলি দেয় না।

যাই হোক, সেই সুইসাইডের দোষ কাকে দেব?
মেয়েটাকে?
ছেলেটাকে? নাকি বাবা- মাকে?
আজকাল এইসব ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বলাও
তো মুশকিল। আর কে কাকে শেখাবে! এই জেনারেশনের কাছে এইসব রিলেশন প্রেম-প্রীতিই মূখ্য বিষয়। ব্রেইনের
কর্টেক্স জুড়ে এছাড়া আর কিছু আছে বলেও মনে হয় না।
.
টাইমলাইন জুড়ে এইসবই দেখি প্রতিদিন । ফেইসবুকে এই রকম
ফ্লার্টিং এর কাহিনী সবাই পড়ে, জানে। তবুও কেন যেন ‘আমার ও এইরকম না’ এমন অ্যটিচ্যুড প্রত্যেকটা মেয়েই ধারণ করে।
.
মেয়েদের বলে রাখি- দুনিয়ার সব ছেলেকেই দেহ দান করার পর ফ্লার্ট বলার আগে শুরু থেকেই ফ্লার্ট ভাবাটা সেইফ।
আমি ছেলে হলেও এই কথাই বলব।
নিজের নিপাট ভদ্র কলেজ ফ্রেন্ডটাও যখন এক মেয়ের জীবন নষ্ট করে বলে ‘এই
মুহূর্তে আমার বিয়ে করা সম্ভব না’, এরপর আরেক মেয়েকে
পারিবারিক ভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় তখন পুরুষ জাতির কাউকে
বিশ্বাস করতে বলার মুখ থাকে না ।
.
আর যে তোর জীবন নষ্ট করল তার জন্য নিজের জীবন
শেষ না করে দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বেঁচে থাক!
নারে , বাপ মায়ের এতদিনের জমানো ভালোবাসা এত সস্তা করে
দেওয়ার অধিকার কেউ তোকে দেয় নাই। আর একদল আছে
এদের প্রতি সিম্প্যাথি দেখিয়ে আহা-উহু করে এই ওয়েকে উৎসাহিত করে ৷
.
মনে রেখ, তোমার বোনটা বা ভাইটা তোমার ওই আহা উহু
দেখে মনের মধ্যেগেঁথে নেয়-
‘Suicide is a noble way to get public sympathy.’
.
আর হ্যাঁ, যাদের মন এখনও বলে সুইসাইড জিনিসটা মন্দ না;
তাদের বলছি- এই স্ট্যাটাসের প্রথম অংশটা আবার একটু পড়ে নাও।
.
মনে রাইখ , তুমি মরে মনে করছ হিরো হয়ে যাচ্ছ! অথচ
ডোমের ছুরি আর হাতুড়ি বাটালের নিচে তোমার মূল্য কোরবানির
গরুর সমানও থাকে না ।
.
If you still think suicide is a good way, then get ready for
Jahannam.


©ডা.সালমান প্রিন্স


Leave a Comment