পুলিশের ভুলে কারাবাস করল রুবেল

মো. রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় কোনো মামলা নেই। শুধু নামের মিল থাকায় পারিবারিক আদালতে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অপরাধী না হয়েও এক দিন কারাবাস করেন নিরপরাধ মো. রুবেল। অথচ প্রকৃত আসামি ঘুরছেন। নিরপরাধ ও প্রকৃত আসামি দুজনের বাবার নামও এক।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিরপরাধ রুবেল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। পেশায় তিনি কৃষক। কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে বারবার বলা হলেও শোনেনি। তারা আমাকে ধরে নিয়ে যায়। অপরাধী না হয়েও আমাকে এক দিন কারাবাস করতে হয়।’ দোষী পুলিশের শাস্তি চান রুবেল।

আদালত সূত্র জানায়, জেলার হাটহাজারীর দেওয়ান নগর এলাকার আছমিদা আক্তার তাঁর স্বামী মুহাম্মদ রুবেলের বিরুদ্ধে দেনমোহরের টাকার জন্য চট্টগ্রামের পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। রুবেলের বাবার নাম নুরুল আলম আর মায়ের নাম লায়লা বেগম। রুবেল পেশায় জিপগাড়ির চালক। আদালত পরে রুবেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এই পরোয়ানায় হাটহাজারী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন পশ্চিম দেওয়ান নগরের সন্দীপপাড়ার নুরুল আলমের ছেলে মো. রুবেলকে গত রোববার রাত ১২টার দিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সোমবার তাঁকে আদালতে হাজির করে। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই রুবেলের মায়ের নাম ছদুরা খাতুন। পরে রুবেলের স্বজনেরা তাঁর মুক্তির জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন।

মামলার বাদী আছমিদা আক্তারের আইনজীবী সাহেদা বেগম বলেন, ‘তারা যে রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, পুলিশ সেই রুবেলকে গ্রেপ্তার করেনি। নিরীহ আরেকজনকে ধরে নিয়ে এসেছে। আমরা প্রকৃত আসামির শাস্তি চাই, নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন।’

আসামি না হয়েও গ্রেপ্তার হওয়া রুবেলের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, নামের মিল থাকলেও দুই রুবেলের ঠিকানা ভিন্ন। দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে উপস্থাপন করা হয়। বাদীপক্ষও জানিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া রুবেল তাঁদের মামলার আসামি নন। আজ মঙ্গলবার জামিনের আবেদন করলে চট্টগ্রাম পারিবারিক আদালতের বিচারক নিশাত সুলতানা জামিন মঞ্জুর করেন। পরে আদেশনামাটি কারাগারে পাঠানোর পর সন্ধ্যায় মুক্তি পান রুবেল।

নিরপরাধ রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হাটহাজারী থানার এএসআই আমির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইচ্ছা করে গ্রেপ্তার করা হয়নি। নামের মিল থাকায় ধরা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর নাম-ঠিকানা যাচাই–বাছাই করা হয়নি কেন, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখেছি। গ্রেপ্তার ব্যক্তি বলার পরও কেন যাচাই করা হয়নি, প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি এএসআই আমির

হোসেন।’

রুবেলের বড় ভাই মো. খোকন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের তিনটি সন্তান। কখনো কৃষিকাজ আবার কখনো নির্মাণশ্রমিকের সহকারী হিসেবে কাজ করে সংসার চালান। মামলা না থাকলেও রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। তবে ভবিষ্যতে নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য দায়ী পুলিশের ব্যবস্থা হওয়া উচিত।’

প্রকৃত আসামিকে বাদ দিয়ে নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করায় হাটহাজারী থানার এএসআই আমির হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিতে কাল বুধবার আদালতে আবেদন করবেন বলে জানান রুবেলের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।

Leave a Comment