পর্দা বলতে শুধুই আপাদমস্তক ঢাকা?

বইমেলার কয়েকটা ছবি ফিডে আসলো । ছবিগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে মেলাতে লোকজনের ভিড় সুস্পস্ট । তন্মধ্যে দু একটা ছবিতে এত এত পুরুষের ভিড়ের মাঝখানে কালো জিলবাবে আবৃত বেশ কিছু পর্দানশীন বোনদের মাথাও দেখা যাচ্ছিলো ।

আমার সম্মানিত বোনরা !
আপনাদের কেন বই মেলায় এত পুরুষের ভিড়ে যেতে হবে ?
আপনাদের যাদের মাহরাম আছে তাদের পাঠান বই কিনে আনতে । এছাড়া এখন তো অনলাইনেও বিভিন্ন অফার সহ বই কিনতে পাওয়া যায় । যার মাহরাম নাই সেও তো অনলাইনের সুবিধা নিতে পারে ।
এত সুবিধা পেয়েও কেন আপনাদের মেলার মত অনুত্তম জায়গায় ভাইদের মাঝে ভিড় ঠেলে বই কিনতে যেতে হবে ?

যেসব বোনরা মাহরাম নিয়ে যান তাদের মাহরাম পুরুষগুলোই বা কেমন !!
অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় ভাবে ঘরের মেয়েদেরকে বাজারে নিয়ে আসেন যেখানে পুরুষ নিজে গিয়েও কাজটা সারতে পারছেন !!

সপ্তাহের প্রথম কয়েকটা দিন আমার ছোট বাচ্চাগুলোকে স্কুল থেকে আনতে হয় যেহেতু তাদের বাবা জবে থাকেন । ঐ সময়টা আমার সবচেয়ে নিকৃষ্ট সময় মনে হয়,যেহেতু স্কুল ছুটির পর প্রচুর ভিড় হয় ।
খুব সাবধানে হাঁটলেও দেখা যায় কারও না কারও সাথে ধাক্কা লেগে যায়,যেহেতু অন্যান্যরা হাঁটার সময় হায়া মেইনটেইন করেন না ।

জরুরতে মেয়েদের বাইরে যাবার অনুমতি আছে । অথচ তারপরও মাঝেমাঝে মনে হয় জরুরতও অনেক সময় ফিতনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে,যেহেতু সারা দুনিয়া এখন জাহেলিয়্যাতে ভরপুর ।

কিছুদিন আগে হিজাব নিয়ে শাইখ মামুনুর রশীদের একটা লেকচার দেখার পর, অন্তর চক্ষু খুলে গেলো ।
মনে হলো, এরকম করে তো কখনও ভাবা হয়নি ।

শাইখ বলছিলেন,
” নারীর হিজাবের প্রথম স্তর বলো সে ঘরে থাকবে । পর্দার প্রথম নির্দেশনা আসে সুরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াত যেখানে নারীদেরকে ঘরের ভিতরে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে । এ আয়াত নাযিল হবার পর আম্মাজান সাওদা রাদিআল্লাহু আনহা রাতে প্রাকৃতিক কাজ সারতে বের হন,যেহেতু তখন ঘরের সাথে টয়লেট ছিলোনা ।

পথিমধ্যে উমার রাদিআল্লাহু আনহু আম্মাজান সাওদাকে দেখে চিনে ফেলেন,কারণ তিনি অন্যান্য আম্মাজানদের চেয়ে হাইটের দিক থেকে তুলনামূলক লম্বা ছিলেন ।
উমার রাদিআল্লাহু আনহু আম্মাজান সাওদাকে পর্দার নির্দেশ হিসেবে আসা প্রথম এই আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন – আপনি কেন ঘর থেকে বের হলেন ? আপনি তো জানেন আল্লাহর পক্ষ থেকে মেয়েদের ঘরে থাকার নির্দেশ এসেছে ।

আম্মাজান সাওদা রাদিআল্লাহু আনহা উমার রাদিআল্লাহু আনহুর সাথে কোন রুপ তর্ক না করে, যুক্তির দোহাই না দিয়ে ঘরে চলে আসেন,
অথচ উনি কিন্তু একান্ত জরুরতে-ই বাইরে গিয়েছিলেন । এ আয়াতের হাকীকত উনি সেভাবেই বুঝে নিয়েছেন যেভাবে উমার রাদিআল্লাহু আনহু সহ অন্যান্য সাহাবীরা বুঝেছেন ।

অবশ্য পরবর্তীতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা একই সুরার ৫৯ নং আয়াত নাযিল করে সুস্পষ্ট করে দেন যে, নারী যখন জরুরতে ঘরে থেকে বের হবে,তখন যেন জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয় এবং এটি হলো নারীর হিজাবের দ্বিতীয় স্তর ।

প্রথম স্তর – সে ঘরে থাকবে।
দ্বিতীয় স্তর – জরুরতে বের হলে পরিপূর্ণ শরয়ী পর্দা করে বের হবে। ”

আমি কিভাবে উপকৃত হলাম শাইখের এই কথাগুলো থেকে ?

ঘরে থাকা যে ইনফ্যাক্ট পর্দার-ই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ সেটা বুঝলাম এতদিন পরে এসে ।

আমি ভাবতাম পর্দা হলো বাইরে যাবার সময় আমরা যে জিলবাব বা বোরকা নিকাব পরি সেটাই হলো পর্দা । সুবহান আল্লাহ !

ইলম অনেকের থাকে,কিন্তু অন্তরদৃষ্টি সবার থাকেনা । শাইখের লেকচারে মাঝে মাঝে এমন সব কথা শুনি,যেগুলো অতীতেও শুনেছি বহুবার কিন্তু শাইখ যে বিষয়গুলো পয়েন্ট আউট করে আনেন – মনে হয় এই মাত্র যেন নতুন কিছু শিখলাম ।

আর আরেকটা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শাইখ পরিস্কার করেছেন ।
সেটা হলো, নারীর হিজাবের বাহ্যিক অবস্থা হলো শরয়ী পর্দা কিন্তু আভ্যন্তরীন হিজাব হলো নারীর হায়া ।

তাই দেখা যায় আমাদের অনেক বোনেরা শরয়ী পর্দা করে ঠিকই কিন্তু অন্তরের পর্দা যে – হায়া, সেটা নাই ।

যার কারণে আমরা চারপাশে তাকালে দেখি বাহ্যিক ভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করেও অনেক বোন হারাম রিলেশন চালিয়ে যায়, কখনও প্রকাশ্যে সমাজের অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের প্রচারকারী আমেরিকা ফেরত নায়কের হাতে নির্লজ্জের মত চুমু খায়, কখনও ছেলের সাথে খোলা মাঠে সানন্দে ক্রিকেট খেলে যায় আবার কখনও নিজের যাবতীয় প্রাইভেসি ব্রেক করে পাবলিক ভ্লগিং করে বেড়ায় অবলীলায় ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করুন । বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন উভয় দিক থেকে পর্দা মেনে চলার তাওফিক্ব দিন ।

তো বোনরা যারা মেলায় গিয়েছেন,তারা একটু ভেবে দেখবেন আখেরে এই যাওয়ার ফায়দা কি উপরন্তু যদি গুনাহ কামাই করতে হয় ।
আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যাননি কিংবা যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পেরেছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন ।

উল্লেখ্য হিজাবের প্রথম স্তর, সুরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াত –

“ তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবেনা । নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। ”

হিজাবের দ্বিতীয় স্তর, সুরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াত –

“ হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। ”

 

বোন নুসরাত জাহান লিখেছেন

Leave a Comment