লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে ঠান্ডায় প্রাণ হারিয়েছিলেন সাত বাংলাদেশি। ওই নৌকায় যাত্রী ছিলেন ২৮৭ জন। তাঁদের মধ্যে ২৭৩ জনই বাংলাদেশি। অন্যরা মিসরীয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস এসব তথ্য জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে এ প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।বাংলাদেশ দূতাবাস ২৫ জানুয়ারি জানতে পারে, সাত বাংলাদেশি দীর্ঘ সময় তীব্র ঠান্ডায় থাকায় ‘হাইপোথার্মিয়া’য় মারা গেছেন। এরপর দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি কাতানিয়া ও পালেরমোতে বাংলাদেশের অনারারি কনসালদের মাধ্যমেও প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধান ও করণীয় নির্ধারণে কাজ করছে। দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রমকল্যাণ) মো. এরফানুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ২৬ জানুয়ারি লাম্পেদুসা পৌঁছায়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঠান্ডায় যে সাত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশি।
মো. এরফানুল হকের ২৭ জানুয়ারি লাম্পেদুসার ডেপুটি মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল। মেয়র শহরের বাইরে থাকায় সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। গতকাল শুক্রবার তিনি ইতালি কোস্টগার্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, সাতটি মরদেহ দেশে আনা বা দাফনের আগপর্যন্ত সিসিলি প্রদেশের আগ্রিজেন্তো এলাকার মর্গে রাখা যাবে। মরদেহগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। মরদেহ পরিদর্শনের জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় দূতাবাস গতকাল পর্যন্ত সেগুলো পরিদর্শন করতে পারেনি। দুর্ঘটনাস্থল থেকে জীবিত উদ্ধার করা ব্যক্তিদের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে এবং দূতাবাসের প্রতিনিধিদল তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছে।
দূতাবাস মানব পাচারকারী চক্র থেকে সাবধান থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দূতাবাস দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।এর আগে ২৫ জানুয়ারি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে সাত বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। অবৈধভাবে তাঁরা নৌকাযোগে লিবিয়া থেকে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। ঠান্ডায় তাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন। বিবৃতিতে ইতালির আগ্রিজেন্তোর প্রসিকিউটর লুইগি প্যাত্রোনাজিও বলেন, ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসায় ওই বাংলাদেশিরা প্রাণ হারিয়েছেন।
লামপিওনের উপকূল থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ওই নৌকার সন্ধান পান। এরপর সেখানে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর লুইগি প্যাত্রোনাজিও।ইউরোপে অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশী ঢোকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইতালির উপকূলকে। গত কয়েক মাসে এমনভাবে নৌকাযোগে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপে ঢোকার প্রবণতা বেড়েছে। চলতি বছর ১ হাজার ৭৫১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী উপকূল থেকে ইতালির বিভিন্ন বন্দরে নেমেছেন।