নৌকায় ভোট না দিলে কবরস্থানে জায়গা হবে না বলে ভোটারদের হুমকি দিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. শাহ আলম। গত সোমবার রাতে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মনির মার্কেট এলাকায় নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণার কার্যালয় উদ্বোধনকালে তিনি এ হুমকি দেন।
এর আগের ইউপি নির্বাচনেও পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসেন বিতর্কিত এই চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের ছোট ভাই।
দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর এই ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় ভোটাররা বলেন, নৌকা প্রতীকের কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় কয়েক শ ভোটার জড়ো হন। এলাকার নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরার একপর্যায়ে শাহ আলম উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘যাঁরা যাঁরা নৌকায় ভোট দেবেন না, তাঁদের চিহ্নিত করা হবে। তাঁদের কবরস্থানে কবর দিতে দেওয়া হবে না। এটা আমার কবরস্থান। সোজা কথা, আমার কবরস্থানে তাঁদের কবর দিতে দেওয়া হবে না। তাঁদেরকে চৌধুরীপাড়া (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর এলাকা) নিয়ে কবর দিতে হবে। এমনকি তাঁদের মসজিদেও নামাজ পড়তে দেওয়া হবে না।’
সভায় উপস্থিত স্থানীয় ভোটার কামাল আহমদ বলেন, নির্বাচনে যে কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ আছে। নির্বাচনে হারজিতও আছে। ক্ষমতাসীন দলের একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নামাজ পড়া এবং কবরস্থানে লাশ দাফনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দেওয়ায় হতাশ হয়েছেন ভোটাররা।
জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমার পাড়ায় আমার সমাজে সবাই আমার আত্মীয়স্বজন। নির্বাচনে তাঁরা আমার বিপক্ষে অবস্থান নিলে তাঁদের কবরস্থানে জায়গা দেওয়া হবে না। মসজিদেও নামাজ পড়তে দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাড়ার মসজিদ এবং কবরস্থান আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে করা হয়েছে। আমার বিরোধিতা যারা করবে, তাদের স্থান এখানে হবে না।’
২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনেও শাহ আলম আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন। তখন নির্বাচনের আগে ১৬ মার্চ রাতে হলদিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিরঘোনা এলাকায় নির্বাচনের একটি প্রস্তুতি সভায় পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে নৌকায় ভোট নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শাহ আলম চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, ‘সরকার কার? সরকার শেখ হাসিনার, নৌকাও সরকারের। ভোট জোর করে নিতে পারলে নৌকা মার্কার সরকার পারবে। চেয়ার মার্কা, কলসি মার্কার পক্ষে তা মোটেও সম্ভব নয়। সরকারি গুন্ডারা কার? পুলিশ সরকারি গুন্ডা, তারা (পুলিশ) হচ্ছে নৌকা মার্কার লোক। ভোট নিলে নৌকা মার্কার লোকজন নিতে পারবে, পিটিয়ে পিটিয়ে। আর সেই নৌকা আমার।’
তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় হয়েছিল।