নিজের সন্তানকে কোন হুজুরের কাছে ইলম শিক্ষার জন্য তুলে দিচ্ছেন!

নিজের সন্তানকে কোন হুজুরের কাছে ইলম শিক্ষার জন্য তুলে দিচ্ছেন!

টিউশন এর এক ছাত্রের মাধ্যমে আজ এক তিক্ত অভিজ্ঞতা হল-

দুই কি তিন দিন আগের কথা; হঠাৎ করে ছাত্র জিজ্ঞেস করতেছে, স্যার – নবীজি (ﷺ) কি নূরের তৈরী নাকি মাটির তৈরী?

আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে বললাম – মাটির তৈরি।

সে বলল- তাকে যে হুজুর কোরআন পড়ায়, সে বলেছে নবীজি (ﷺ) নাকি নূরের তৈরী। আর যারা নবীজিকে (ﷺ) নূরের তৈরী বলে মানে না- তারা ওয়াহাবি , তারা রসূলকে (ﷺ) ভালোবাসে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।

এরপর আমি সে সময় আর কথা না বাড়িয়ে বললাম আপাতত তুমি নিজের পড়া পড়ো। আমি বাসায় গিয়ে তোমাকে বিস্তারিত এ ব্যাপারে কিছু লিখা আর ভিডিও দিব। তুমি সেগুলো দেখে নিও। তোমার হুজুরকেও দেখতে বলিও। ইনশাআল্লাহ।

যথারীতি বাসায় এসে মুফতি মনসুরুল হক দা.বা. এর ওয়েবসাইট থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত একটি লিখা দিলাম। আর ভিডিও হিসেবে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহি., শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফি. , মিজানুর রহমান আজহারী হাফি. এর ভিডিও দিলাম। কারণ ছাত্রের পরিবার এই তিনজন বক্তার সাথে খুব ভালো রকমের সুপরিচিত।

এর পরের দিনের ঘটনা- মুফতি মনসুরুল হক দা.বা. এর ওয়েবসাইট দেখে সে হুজুর বলল- এটাই তো ওয়াহাবীদের ওয়েবসাইট। এরা রসূলকে (ﷺ) ভালোবাসে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
ছাত্রের মুখ থেকে এসব শুনে খুব হেসেছি। সেদিন আর কিছু বলিনি। বাসায় চলে আসলাম। ঘটনা শেষ ভাবছেন? না, মূল কথা এখন আসবে-

আজকে গিয়ে শুনি আমি যে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহি. এর ভিডিও দিয়েছি সে সেটার ব্যাপারে বলেছে- “এই লোক এসব হাবিজাবি আজব কথা বলেই এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে। ”
উপরের উদ্ধৃতিটি আমি পরিবর্তন করলাম না তিক্ত রক্তক্ষরণের বিষয়টি বোঝার সুবিধার্থে।

এতদিন পর্যন্ত সব ঠিক ছিল কিন্তু, এটা কি রকমের মানসিকতা। আর এটা কোন দ্বীনের ইলমওয়ালা মানুষের কথা? নিজের মাসলাকের না এজন্য কারো মৃত্যু সম্বন্ধে এরকম ধারণা করা কতটুকু ঠিক তা আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতার বাইরে।

এখনো মনে পড়ে ২০১৮ সালে দ্বীনে ফিরে যখন প্রথমবার জানতে পারি স্যার আর বেঁচে নেই। তখন খুব ইচ্ছে হচ্ছিল স্যার কে যদি একবার দেখতে পারতাম!! একবার মুসাফাহা করতে পারতাম!! আফসোস নেই। ইনশাল্লাহ জান্নাতে দেখা হবে যা দুনিয়ার চেয়ে অগণিত গুন উত্তম মিলিত স্থল। আল্লাহ কবুল করুন, আমিন।

এই লিখাটি অনেকেই পড়বে, একসময় আমরা সকলে অভিভাবক হবো । আমার আকুল আবেদন সবার প্রতি- নিজের সন্তানকে কোন হুজুরের কাছে ইলম শিক্ষার জন্য তুলে দেওয়ার আগে সে হুজুরের ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজ নেওয়া জরুরী, তার সাথে দ্বীনের ব্যাপারে কথা বলা উচিত, মানসিকতা বুঝতে সহায়ক বিষয়ে কথা বলার ব্যাপক প্রয়োজন আছে। একজন ব্যক্তির জ্ঞান কখনোই তাকে পরিপূর্ণভাবে জ্ঞানী করে তুলবে না যদি তার আখলাক-ই ঠিক না থাকে।

১২ মে ২০১৬ সালের ইউটিউবের এক ক্লিপে স্যারের মৃত্যুর সময়ের এক্সিডেন্টের ফুটেজে স্যারের এক্সিডেন্ট অবস্থার চেহারা দেখছিলাম খুব মনোযোগ দিয়ে। কি প্রশান্তিময় সেই মুখ! যেমন, হাস্যজ্জ্বল মুখ স্যার – এর সব লেকচারে আমরা দেখে থাকি। কোথায় জানি পড়েছিলাম, মৃত্যুর সময় সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তে, নেক বান্দাদের সুন্দর মৃত্যুর আলামত হচ্ছে প্রশান্তিময় চেহারা। আল্লাহু আ’লাম।

কথা অনেক লম্বা হয়ে গেল মনে হয়। নিজেকে সুন্নি দাবি করা মানে কি এটা হতেই হবে যে নিজে শতভাগ নাজাত প্রাপ্ত ? আর বাকিরা সবাই কঠিন হিসাবের মধ্য দিয়ে যাবে? আমার ছাত্রের সেই হুজুরকে আল্লাহ সঠিক বুঝ দান দিন। এরকম মানসিকতা আমাদের মধ্যে কারো থেকে থাকলে আল্লাহ তাকেও সঠিক বুঝ দান দিন। আমাদেরকে নিজেদের ‘বান্দার’ অবস্থানে থেকে নিজের আমলের ব্যাপারে অধিক ফিকির করার তৌফিক দিন, আমীন।

হৃদয় টা ভারাক্রান্ত হয়ে আছে। হায় উম্মাহ, এসব মানসিকতা ততদিন কি ঠিক হবেনা যতদিন কু কু রে র মত মার খেয়ে নিজেদের সর্বস্ব শেষ হয়ে যাবে …???

~কালেক্টড

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *