প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প চুয়াডাঙ্গার কিশোর-কিশোরী ক্লাবে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার বরাদ্দের অর্থ ও উপকরণ কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।অভিযোগে জানা গেছে, জেলার ৪১টি ক্লাবে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতিদিন সকালে ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও অর্ধেক টাকার নাশতা দেওয়া ও ক্লাবের সরঞ্জাম কেনাকাটার অধিকাংশ বরাদ্দের হিসাব নেই কারও কাছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষকদের সম্মানী নিয়েও রয়েছে নয়-ছয় হিসাব। এতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, এ প্রকল্পের সব বরাদ্দই সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হয়।তবে অভিযোগের বিষয়টি নজরে আসলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সৃজনশীল ও গঠনমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল এবং দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে চুয়াডাঙ্গায় চালু হয় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম। জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় সব ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪১টি ক্লাবে অন্তত ১২ শ কিশোর-কিশোরী সপ্তাহে দুদিন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে নাশতা ও খেলাধুলার উপকরণ সরবরাহ করা হয়। সপ্তাহে দু’দিনের প্রতি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ টাকা সমপরিমাণের নাশতা সরবরাহের কথা রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের অর্ধেক টাকার নাশতা দিয়েই দায় সারছে কর্তৃপক্ষ। বাকি অর্ধেক টাকা কোথায় যায় তার স্পষ্ট ধারণা নেই কারও। কিশোর-কিশোরীদের জন্য খেলা ও সংস্কৃতি সামগ্রীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে এসব ক্লাবে। কিন্তু কিছু কিছু ক্লাবে এসব সামগ্রী দিলেও তার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া সঠিক নজরদারি নিয়েও অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা।
নেহালপুর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী প্রিয়া আক্তার বলেন, আমাদের জন্য নাশতার বরাদ্দ ৩০ টাকা থাকলেও আমাদের নাশতা দেওয়া হয় ১২ থেকে ১৫ টাকার। একটি কলা একটা কেকের সঙ্গে ছোট লাড্ডু দেওয়া হয় আমাদের।রেল-বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, নাশতায় দুই টাকার একটি বিস্কুটের প্যাকেট, দুই টাকা দামের একটি লাড্ডু ও সাত টাকা দামের একটি কমলা লেবু দেওয়া হয় আমাদের প্রশিক্ষক সম্রাট অভিযোগ করে বলেন, ক্লাবের সরঞ্জাম কেনাকাটার অধিকাংশ বরাদ্দের টাকার কোনো হিসাব নেই। গানের ক্লাসের বরাদ্দকৃত টাকায় তবলা, হারমোনিয়ামসহ যেসব সরঞ্জাম কেনা হয়েছে তা দেখলেই বোঝা যাবে কতটা দুর্নীতি এখানে করা হয়েছে।
কিশোর-কিশোরী ক্লাবের প্রশিক্ষক আফসানা জানান, করোনাকালীন ক্লাস নিলেও সেই সময়ে সম্মানী পাননি প্রশিক্ষকরা। প্রশিক্ষণার্থী কোমলমতি শিশুদের দেওয়া হয়নি কোনো নাশতা। দীর্ঘদিন ধরেই বরাদ্দের অর্ধেক টাকার হিসাব মেলে না। এ প্রশ্নের উত্তরও কেউ দিতে পারে না। এসব ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েও মেলেনি সমাধান।তবে চুয়াডাঙ্গা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাকসুরা জান্নাতের দাবি সব অভিযোগই অসত্য।তিনি বলেন, এ প্রকল্পের সব বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা হয়। শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকদের অভিযোগও সঠিক না। মনগড়া কথা বলেছে সবাই।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূঁইয়া জানান, কিশোর-কিশোরী ক্লাবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি। অভিযোগ শোনার পরে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির সদস্যরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন।জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে, অপসংস্কৃতি হটাতে কিশোর কিশোরী ক্লাব সাহায্য করবে।সৃজনশীল ও গঠনমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের অবস্থান দৃঢ় করাসহ কিশোর-কিশোরী ক্লাবে সরকারি বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।