নগদের দুই দিনে ‘৪৭ কোটি টাকা’ বেহাত

এত দিন তাহলে কারা ছিলেন নগদের মালিকানায় ?এত দিন তাহলে কারা ছিলেন নগদের মালিকানায় ?

প্রতারণার মাধ্যমে দুই দিনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান। এ অভিযোগে সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক জুয়েল রানার (২২) বিরুদ্ধে মামলা করেছে নগদ।

মামলায় নগদ বলেছে, গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম থেকে বিভিন্ন নগদ অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একের পর এক ‘রিফান্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠিয়ে এ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি জানার পর নগদের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জে নগদের কয়েক হাজার অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ টাকা যে কয়েকটি অ্যাকাউন্টে গেছে, সেগুলো সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের মালিক জুয়েল রানা এবং তাঁর স্বজনদের। এ ঘটনার পর জুয়েল রানা পলাতক, তাঁর মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।  

জুয়েল রানাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রাশেদুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নগদের টাকা আত্মসাতে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ঘটনা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সিরাজগঞ্জ সদরের প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম তাদের বিক্রীত পণ্যের দাম বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এ কাজের জন্য গত ১৪ মার্চ তারা নগদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করছিল নগদ।

এ কাজের সুযোগ নিয়ে ৩০ ও ৩১ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম তাদের বিভিন্ন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরত দিতে ‘রিফান্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠায়। এ প্রক্রিয়ায় ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ টাকা যাওয়ার পর নগদের ডিজিটাল সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি ধরা পড়ে। সেখানে দেখা যায়, অস্বাভাবিক মাত্রায় বেশি পরিমাণে ফেরতের অনুরোধ (রিফান্ড রিকোয়েস্ট) এসেছে। পণ্য সরবরাহ হয়েছে এমন ক্রয়াদেশের বিপরীতেও ‘রিফান্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ক্রয়াদেশের টাকার চেয়ে বেশি টাকা ফেরতের অনুরোধ করা হয়েছে। আবার গভীর রাতেও টাকা ফেরতের অনুরোধ এসেছে।

নগদের আইন শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গত ১৩ সেপ্টেম্বর বনানী থানায় এ মামলা করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানার পর সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের মালিক জুয়েল রানাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। পরে গত ২ সেপ্টেম্বর জুয়েল রানা একটি চিঠি পাঠান। এরপর থেকে তিনি আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগদের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, সিরাজগঞ্জ শপের মালিক জুয়েল রানাসহ তাঁর আত্মীয়স্বজনকে আটটি নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে অস্বাভাবিকভাবে ‘রিফান্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠানো হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টের লেনদেন এখনো স্থগিত রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগদের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম নামের প্রতিষ্ঠানটি রিফান্ড রিকোয়েস্টের নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নগদের ৪৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জুয়েলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিশ্চয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করবেন।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের বাহিরগোলা ও এম এ মতিন সড়কে সিরাজগঞ্জ শপ ডটকমের প্রধান ও আঞ্চলিক কার্যালয় বন্ধ পাওয়া গেছে। জুয়েল রানার বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে জুয়েলের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, নগদের কাছে তাঁদেরই টাকা আটকে আছে।

এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেল আহমেদ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে চিঠি দিয়ে জানান, সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ শপ ও আলাদিনের প্রদীপ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রিফান্ড রিকোয়েস্টের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এ বিষয়টি চিহ্নিত করার পাশাপাশি রিফান্ড রিকোয়েস্ট সংশ্লিষ্ট ১৮ হাজার অ্যাকাউন্টের স্থিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হোল্ড (স্থগিত) রাখা হয়। এর মধ্যে আলাদিন প্রদীপের পক্ষ থেকে ‘রিফান্ড অ্যামাউন্ট’ ট্রান্সফার হয়েছিল, কিন্তু নিয়মবহির্ভূত লেনদেন না হওয়া ৭২৮টি নগদ অ্যাকাউন্ট আবার চালু হয়েছে। বাকি ১৭ হাজার ৫৯৪টি অ্যাকাউন্টও আবার চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ওই সব অ্যাকাউন্টে নিয়মবহির্ভূতভাবে যাওয়া অর্থ আটকে সে অ্যাকাউন্টগুলো সচল করা হচ্ছে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *