দেশের ১ শতাংশ ধনীর আয় ১৬.৩ শতাংশ

দেশের ১ শতাংশ ধনীর আয় ১৬.৩ শতাংশ

২০২১ সালে দেশে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর আয় মোট জাতীয় আয়ের ৪৪ শতাংশ। একই সময় দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয় ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে পিছিয়ে থাকা ৫০ শতাংশ মানুষের আয় ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ শীর্ষ আয়ের মানুষের সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের ব্যবধান যোজন যোজন।আর শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর বেলায় দেখা যায়, ২০০৫ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর আয়ের অনুপাত ছিল মোট জাতীয় আয়ের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২১ সালে যা নেমে এসেছে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশে। সম্পদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে এই শ্রেণির হাতে সম্পদ ছিল মোট জাতীয় সম্পদের ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে যা ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে।প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাব সম্প্রতি বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদন ২০২২ প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ ও আয়ের অনুপাত কিছুটা কমেছে। আবার একই সময়ে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে ছয় গুণের বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয়ের অনুপাত ছিল মোট জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৭ সালে তা ১৭ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়। তবে ২০২১ সালে যা নেমে আসে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশে।সম্পদের ক্ষেত্রেও একই ধারা দেখা যায়। ২০০৫ সালে শীর্ষ ধনীদের আয়ের অনুপাত ছিল মোট জাতীয় আয়ের ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১ সালে যা নেমে এসেছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে। অর্থাৎ মোট জাতীয় আয়ের সাপেক্ষে শীর্ষ ধনীদের আয় ও সম্পদের অনুপাত কিছুটা কমেছে।আর শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর বেলায় দেখা যায়, ২০০৫ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর আয়ের অনুপাত ছিল মোট জাতীয় আয়ের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২১ সালে যা নেমে এসেছে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশে। সম্পদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে এই শ্রেণির হাতে সম্পদ ছিল মোট জাতীয় সম্পদের ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে যা ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে।

এই চিত্র দেখে মনে হতে পারে, দেশে অসমতার মাত্রা কিছুটা কমেছে। কিন্তু ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আকার বেড়েছে ছয় গুণের কিছু বেশি। শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর সম্পদ ও আয়ের অনুপাত কিছুটা কমলেও জিডিপির বহর যে হারে বেড়েছে, তাতে এই শ্রেণির মানুষের সঙ্গে বাকিদের ব্যবধান আরও বেড়েছে। তবে এই ২০ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। অনেক মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে দেশে দৃষ্টিকটুভাবে বৈষম্য বেড়েছে
অন্যদিকে এই তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিশ্লেষকেরা। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশের তথ্য-উপাত্ত নির্ভরযোগ্য নয়, বিশেষ করে সম্পদের উপাত্ত পাওয়া একরকম অসম্ভব।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত, উন্নয়নশীল দেশের ধনীদের সম্পদের একটি বড় অংশ থাকে বিদেশে। দ্বিতীয়ত, দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে যে সম্পদ কর দিতে হয়, সেই বিবরণী থেকে সম্পদের উপাত্ত সংগ্রহ করা হলে তার নির্ভরযোগ্যতা নেই বললেই চলে। মানুষ কর ফাঁকি দিতে সম্পদের প্রকৃত বিবরণী দেয় না।সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর দেশের ১ শতাংশ শীর্ষ ধনীর বাড়িতে যেতেই পারে না। আবার হতদরিদ্রদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব কারণে আয়ের পরিসংখ্যানও নির্ভরযোগ্য নয় বলেই মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তবে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের পরিসংখ্যান কিছুটা নির্ভরযোগ্য। এই পরিস্থিতিতে বাস্তব চিত্র প্রতিবেদনের ভাষ্যের চেয়ে যেমন ভালো হতে পারে, তেমনি খারাপও হতে পারে। তবে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, উন্নত দেশগুলোর তথ্য-উপাত্তের নির্ভরযোগ্যতা থাকায় এই দেশগুলোর অতিধনীদের হাতে বিশ্বের কত সম্পদ আছে, তা বের করা সম্ভব।

অসমতার অন্যান্য দিক

সম্পদ ও আয় অসমতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও অসমতার মারাত্মক চিত্র ধরা পড়েছে এই প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য ৩৩টি আইসিইউ শয্যা আছে, সেখানে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে আছে মাত্র দুটি। সাব-সাহারা অঞ্চলে এ চিত্র আরও করুণ। সেখানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ শয্যা আছে শূন্য দশমিক ৬টি। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ সাতটি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণের শুরুতে এক-তৃতীয়াংশের কম হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যথেষ্ট পরিমাণে মাস্ক ছিল।কাজের সময়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশের মানুষেরা বঞ্চনার শিকার হন। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ণকালীন কর্মীরা বছরে কাজ করেন ২ হাজার ১০০ ঘণ্টা। অথচ উন্নত দেশের পূর্ণকালীন কর্মীরা কাজ করেন ১ হাজার ৬০০ ঘণ্টা। আবার ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণকালীন কর্মীরা বেশি কাজ করেন।


প্রতিবেদনের মুখবন্ধ লিখেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো। মুখবন্ধে তাঁরা বলেন, সঠিক নীতি করা হলে অসমতা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আবার ভুল নীতির কারণে অসমতা লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা রোনাল্ড রিগ্যান ও মার্গারেট থ্যাচারের নব্য উদারনীতিবাদী (বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধি) নীতির সমালোচনা করেছেন। এই নীতির ফলে ভারত ও চীনের প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে অসম দেশের একটি। সে জন্য যথাযথ নীতি প্রণয়নে গুরুত্ব দেন তাঁরা।চলতি বছর বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার তথা অতিধনীদের পারিবারিক সম্পদ বৈশ্বিক মোট সম্পদের ৩ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২০ সালের প্রথম দিকে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে যা ছিল ২ শতাংশের সামান্য বেশি।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *