তিনজন নিহতের পর ৩৬ ঘণ্টার মাথায় আবার আ.লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ

নরসিংদী সদরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোকবালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (উত্তরপাড়া গ্রাম) চার ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। রাত সাড়ে ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।

এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন সরকার। তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত ওই এলাকা থেকে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গতকালের তিনটি মৃত্যুর ক্ষত শুকাতে না শুকাতে আবার তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আলোকবালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে (নেকজানপুর গ্রাম) সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তিনজনই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন সরকারের কর্মী-সমর্থক। এ ছাড়া অন্তত ৫০ জন গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাঁদের মধ্যে ৭ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে (উত্তরপাড়া গ্রাম) আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন তাঁরা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকারের সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহর দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। কিছুদিন পরপরই দুই পক্ষের সমর্থকেরা টেঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে আলোকবালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দেলোয়ার। অন্যদিকে মো. আসাদুল্লাহ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে তিনি তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

পুলিশ বলছে, গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার পরপরই আবার যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, এর জন্য ঘটনাস্থল ও এর আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া আজ দিনভর ওই এলাকায় বিভিন্ন বাড়িঘরে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালায় নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ। এর মধ্যে আজ বিকেলে ইউনিয়নটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ওই গ্রাম ও আশপাশের এলাকা থেকে থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে (উত্তরপাড়া গ্রাম) ইউপি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জব্বার মিয়া, নাসির মিয়া, আমির হোসেন ও মামুন মিয়া। এই নির্বাচনে মো. আসাদুল্লাহ সমর্থিত প্রার্থী জব্বার মিয়া ও নাসির মিয়া। অন্যদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার সমর্থিত প্রার্থী হলেন আমির হোসেন ও মামুন মিয়া। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে থেকেই আমির হোসেন ও মামুন মিয়া এলাকাছাড়া ছিলেন। গতকালের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় পুলিশ পাহারা থাকার সুযোগে আমির হোসেন ও মামুন মিয়া এলাকায় ঢুকতে চেয়েছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার খবর পেয়ে মো. আসাদুল্লাহ সমর্থিত প্রার্থী জব্বার মিয়া ও নাসির মিয়ার সমর্থকেরা তাঁদের ধাওয়া দেন।

রাত ৮টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইউপি সদস্য প্রার্থী ওই দুজন আলোকবালী বাজারে অবস্থান করছেন। আতঙ্ক সৃষ্টি করতে থেমে থেমে ৫০টির বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জব্বার মিয়া, নাসির মিয়া, আমির হোসেন ও মামুন মিয়া এই চারজনেরই মুঠোফোনে কল দেন এই প্রতিবেদক। তবে তাঁদের সবার মুঠোফোনই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোকবালীতে দুই পক্ষের চার ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে পুলিশ তাঁদের সংঘর্ষে জড়াতে দেয়নি। এরপরও যাঁরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।

Leave a Comment