তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ ও দুনিয়ার নারী।।

।।তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ ও দুনিয়ার নারী।।

আব্দুল্লাহ ইবনু মা’সুদ (রা) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা) বলেছেন- ‘ইন্নাল মার’আতা আউরাতুন’ নারী হল ঢেকে রাখার জিনিস অর্থাৎ নারীকে ঢেকে রাখতে হয়। আমার এক তরুণ সাথী একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন, তিনি বলেছেন পবিত্র কুর’আনে ঢেকে রাখা সম্পর্কে ইঙ্গিত রয়েছে এভাবে, ‘তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ’
(সূরা আর-রহমান- ৭২)।
হাদিসে এসেছে তাঁবু গুলো হল বিশাল লম্বা চাওড়া মুক্তার মত, আর তার মধ্যে লুকায়িত রয়েছে হুরগন। যেমন শামুক বা ঝিনুকের ভিতরে মুক্তা হিফাজত থাকে। এটাই হল নারীর বৈশিষ্ট্য। মেয়েরা হল লুকিয়ে রাখার জিনিস। ‘আল-মার’আতু ক্বুল্লুহা আউরাতুন” নারী তাকেই বলা হয়, যা লুকিয়ে রাখা হয়।

নারীরা যখন ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান খুশি হয়। নারী যখন ঘরের একদম ভিতরে অবস্থান করে তখন সে তার রবের রহমত ও সন্তুষ্টির নৈকট্য লাভ করে। কারন বাহিরে থাকলে হয়তো নানান রকম ফিতনায় জড়িয়ে যেতে পারে বা অন্যের জন্য ফিতনার কারন হতে পারে। তাই হাদিসে এসেছে, ছেলেদের জন্য মসজিদে নামাজ পড়া উত্তম। ২৮ গুন বেশি উত্তম ঘরে নামাজ পড়া থেকে। আর নারীদের জন্য ঘরে নামাজ পড়া মসজিদে নামাজ পড়ার চাইতে উত্তম। নারীদের নামাজ পড়ার জন্য ঘরের আঙিনা মসজিদ থেকে উত্তম, রুম আঙিনা থেকে উত্তম, বেড রুম সাধারন রুম থেকে উত্তম। আর বেড রুমের ভিতরেও যদি কোন রুম বা পর্দা ঘেরা স্থান থাকে তবে সেটা সবচেয়ে উত্তম। এটা হল রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামের হাদিস।

“নারীরা হচ্ছে চাদর এবং যদি সে গৃহের বাইরে যায় তবে শয়তান খুশি হয় (তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে বলে)। সে (নারী) আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না যতটা সে গৃহে থেকে করতে পারতো।”
[ইবনে হিব্বান ও ইবনে আবী খুযাইমাহ, আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন, সিলসিলা আস সহীহাহ ২৬৮৮]

আরো শুনুন, আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং ইবনু আবি সাইবা ইবনু সা’দ (রহিমাহুমুল্লাহ) তাদের কিতাবে একটি রেওয়াত নকল করেছেন, যে আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাযি) কুর’আন তেলাওয়াত করার সময় যখন [وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ অর্থাৎ নিজ গৃহে অবস্থান কর] এই আয়াতে পৌঁছতেন তখন কাঁদতেন। কারন কুর’আন বলছে ঘরে অবস্থা কর। উসমান (রা) শাহাদাতের পরে তিনি বের হয়ে লশকরের জিম্মা নিয়েছিলেন। তাই তিনি এটাকে ভুল মনে করে আফসোস করতেন। হাফেজ আবি বকর (রহ) হযরত আনাস (রা) থেকে নকল করছেন, যে নারীরা একবার হজুর (সা) কে জিজ্ঞাস করলেন, “সকল ফযিলত তো পুরুষরাই নিয়ে যাচ্ছে। তারা জিহাদ করছে, আল্লাহর রাস্তায় বড় বড় কাজ করছে। আমরা নারীরা কোন আমল করলে মুজাহিদিনের সমান নেকি লাভ করতে পারব? জবাবে হজুর (সা) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ঘরে অবস্থান করবে, তারা মুজাহিদিনের নেকি হাসিল করতে পারবে।”

এ কারনেই আমি বলি, উম্মাহ’র বর্তমান অবস্থা পুরুষের কাধে রয়েছে, এবং উম্মাহ’র ভবিষ্যৎ নারীর হাতে থাকে অর্থাৎ পরবর্তী বংশধরদের তরবিয়ত বিশেষ করে মায়ের হাতে হয়। মায়ের দুধের মধ্যদিয়ে নতুন আগত সন্তানের মধ্যে ইমান ও ইসলামের আবেগ প্রবেশ করে। আজকের মায়েরা তো দুধ খাওয়াতেও চায় না। তারা গুড়া দুধ, বোতলজাত দুধ ইত্যাদি খাওয়ায়। সন্তানকে তরবিয়ত কি করে করবে নিজেদেরই তো সঠিক ইসলামিক ইলম নেই।

অনেক সময় আমরা পুরুষরা দায়িত্বের অবহেলার জন্য তাওবা করি, কিন্তু শুধু তাওবা করলেই হবে না। নিজেকে এবং নিজের ঘরকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। ঘরে কি তোমার নিয়ন্ত্রন আছে? যদি না থাকে তবে ডুবে মর। এরা বলে, “নারীরা তো মানতে চায় না, কথাও শুনে না।” তাহলে কি আর করবে মরে যাও। আমি রাসুল (সা) এর কথা বলছি। তিনি বলেছেন, যখন তোমাদের মুয়ামালাত (ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ) তোমাদের মহিলার হাতে চলে যাবে, তখন মাটির গর্ভ তোমাদের জন্য বেশি উত্তম হবে মাটির উপরিভাগ থেকে। অর্থাৎ তখন বেঁচে থাকার চাইতে মৃত্যু অধিক শ্রেয় হবে। নিজের জাত, পরিবার ও ঘরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মুসলিম দেশ গুলোতে তো জবরদস্তী হিজাব নামানো হয় নি, যারা হিজাব খুলে ফেলেছে তারা সেচ্ছায় খুলেছে। বর্তমানে কিছু টাকার মালিক হয়ে বা শিক্ষিত হয়ে নারীরা পর্দাকে ছুড়ে ফেলেছে। প্রথমে বুরখা খুলে, উড়না এসেছিল। এখন বাকি যে কাপড় রয়েছে তা, এমন টাইট এবং আরো যা কিছু আছে তা আমি আর কি বলব। আপনারা সকলেই জানেন। আমাদের কোন উন্নতি যদি হয়েছে তবে তা হয়েছে বেপর্দায়, অশ্লীলতায়, বেহায়াপনায়। তাই বলছি শুধু তাওবা করলেই হবে না, নিজেকে নিজ ঘরকেও ঠিক করতে হবে। ঘরে গিয়ে শরয়ী পর্দার বাস্তবায়ন কর। যদি না কর তবে, ইসলামের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো বিধান কেন দেয়া হয়েছে? সূরা আন-নুর’এ এত আহকাম কেন নাযিল করা হয়েছে? সূরা আল-আহযাব’এ এত বিধান গুলো কেন এসেছে? তেলাওয়াত করে নেকি হাসিলের জন্য শুধু?
২য় অংশ👇

পুরুষের মধ্যে আপনাদের অধিকাংশের অবস্থা তো এই। স্ত্রী’র প্রতি আপনার সীমাতিরিক্ত ভালোবাসা আছে। আপনার সন্তনাকে উন্নত থেকে উন্নতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিতে হবে। হালাল থেকে নাহলে হারাম থেকে এই সব পূরণ করতে হবে। বাসা ছাড়, শহর ছাড়, বাহিরে যাও। বৃদ্ধ পিতা-মাতা মৃত্যুর মুখে, পানি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার মত কেউ নেই তাতে কি ডলার কামাতে সন্তান বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। কি করবে? বাসা বানাতে হবে, এই প্রজেক্ট সেই প্রজেক্ট এর প্লান আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর যদি কোন ভাবে আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দেন তবে সাধারনত প্রথমেই এদের বাধা হয়ে দাড়ায় স্ত্রী। স্ত্রী বলে তোমার মাথা খারাব হয়ে গেছে? তাকে দেখ সেও তো অনেক বড় দ্বীনদার, তোমার চাইতেও বড় দাঁড়ি আছে তার। সে তো ঘুস নেয়, সুদও খায়, ব্যাংকে জব করে আর তুমি এখন বড় দ্বীনদারীত্ব দেখাচ্ছ?

আল্লাহ পবিত্র কুর’আনে বলেছেন- হে মুমিনগণ, তোমাদের কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক।  (সুরা আত-তাগাবুন – ১৪)

আল্লাহ আমাদেরকে পরিবারে ভারসম্য রক্ষা করার শিক্ষা দিয়েছেন। এমন না হয় যেন ঘরকে যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে ফেলি।  আয়াতের পরবর্তী অংশে আল্লাহ বলেছেন, “যদি মার্জনা কর, উপেক্ষা কর, এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুনাময়” অর্থাৎ তারা যদি ভুল বুঝে ফিরে আসে তবে তাদেরকে ক্ষমা করে দাও। তাদের ক্ষুদ্র দোষ ত্রুটিকে উপেক্ষা কর। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।

( মূল কন্সেপ্ট শাইখ ইসরার আহমদ রহিমাহুল্লা’র কিছু লেকচারের নির্বাচিত অংশ থেকে নেওয়া। অবশ্যই অনুবাদ করার সময় বেশ কিছু সোংযজন ও বিয়োজন করতে হয়েছে )

– কায়সার আহমাদ ভাই থেকে সংগ্রহীত

Leave a Comment