ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ৩

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিনজন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার ঘিডোব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।তিনজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে আজ সোমবার বেলা পৌনে একটার দিকে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম রংপুর ডেইলীকে বলেন, উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করার জন্য বিজিবি গুলি ছোড়ে। সেই গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন।নিহত তিনজন হলেন ঘিডোব গ্রামের অবিনাশ রায়ের ছেলে আদিত্য কুমার রায় (২২), হাবিবপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. সাহাবুলি (৩৭) ও ছিট ঘিডোব গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে মোজাহারুল ইসলাম (৩৫)। নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিজ নিজ বাড়িতে রাখা আছে।

গুলিবিদ্ধ তিনজন হলেন ঘিডোব গ্রামের আবদুল বারীর স্ত্রী রহিমা বেগম (৬৫), খনগাঁও গ্রামের উজ্জ্বল ইসলামের ছেলে গোলাম রব্বানী (২৭) ও হাবিবপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাইফুর রহমান (১৭)। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম ও তোফায়েল আহমেদ জানান, গতকাল রাতে ভোটের ফলের কাগজ পোলিং এজেন্টদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছিল না। এতে এজেন্টরা ক্ষুব্ধ হন। ভোটারদের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা লাঠিসোঁটা নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিজিবির সদস্যদের দিকে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবি গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন মারা যান। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।গ্রামবাসীর ভাষ্য, খনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পীরগঞ্জ উপজেলার ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা ও অন্যান্য কার্যক্রম শেষে গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করতে বিজিবি ৪৫ থেকে ৫০টি গুলি ছোড়ে। এতে হতাহত হওয়ার ওই ঘটনা ঘটে। পরে স্কুলের মাঠ ফাঁকা হয়ে গেলে বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ভোটের মালপত্র নিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে এলাকা থেকে চলে যান। হতাহত ব্যক্তিরা মাঠে পড়ে ছিলেন।

ঘিডোব প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. জামালউদ্দীন বলেন, ‘আমি ভোট কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে ঘটনার আগেই উপজেলায় চলে আসি।’এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু হামিদ মণ্ডল বাদী আজ সোমবার দুপুর ১২টায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।গুলিতে নিহত মো. সাহাবুলির বাবা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মোর বেটা গতকাল দুপুরে ওই সেন্টারত ভোট দিচে। ভোটের ফল জানিবার জন্য সান (গোসল) করে সন্ধ্যায় ঘিডোব স্কুলত গেছিল। কিন্তু গুলি লাগে মরে গেল। লাশ হয়ে গেল মোর বেটা।’

গুলিতে নিহত আদিত্য কুমারের বাবা অবিনাশ বায় বলেন, ভোট সেন্টার থেকে বাড়িতে চলে আসতে ছেলেকে কয়েকবার ফোন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আদিত্য বাড়িতে না এসে সেখানেই ছিলেন। শেষ পর্যন্ত গুলিতে ছেলের মৃত্যু হলো।বিজিবি ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ইউপি নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের সদস্যারা দায়িত্বে ছিলেন। ভোট কেন্দ্রে হামলা হলে আত্মরক্ষায় ইউএনওর নির্দেশে গুলি ছুড়তে বাধ্য হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে কোন বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তা বলা যাচ্ছে না।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে থাকা লোকজনের ওপর আক্রমণ করলে এই ঘটনা ঘটে। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *