টিকিট কেটে ওঠা শিক্ষার্থীদের ট্রেন থেকে পুলিশ নামিয়ে দিল

টিকিট কেটে ওঠা শিক্ষার্থীদের ট্রেন থেকে পুলিশ নামিয়ে দিলটিকিট কেটে ওঠা শিক্ষার্থীদের ট্রেন থেকে পুলিশ নামিয়ে দিল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় ফিরতে ‘এক্সট্রা ফেয়ার টিকিট’ (ইএফটি) কেটেছিলেন শতাধিক শিক্ষার্থী। এরপর বুধবার বিকেলে পদ্মা আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন তাঁরা। তবে রেলওয়ে পুলিশ তাঁদের ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা ট্রেন থেকে নেমে এসে স্টেশন মাস্টারের দরজায় লাথি মারেন। স্টেশনের বাইরের ফটক বন্ধ করে ভেতরে বিক্ষোভও করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের কাছে সাড়ে ৩০০ টাকার টিকিট ৮০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এরপরও ট্রেন থেকে তাঁদের ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার শেষ দিন ছিল। শিক্ষার্থীরা বিকেলে ঢাকাগামী পদ্মা আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকায় ফেরার জন্য স্টেশনে এসেছিলেন। টিকিট না পেয়ে তাঁরা স্টেশন থেকে ইএফটি সংগ্রহ করেন। নির্ধারিত আসনের টিকিট শেষ হয়ে গেলে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীদের যাওয়ার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই বিশেষ টিকিটের ব্যবস্থা করে থাকে। এই টিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলেন। রাজশাহী স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল বিকেল চারটা। এর কিছুক্ষণ আগে রেলওয়ে পুলিশ ট্রেনে উঠে তাঁদের নামিয়ে দেয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন যাত্রী বলেন, তাঁর কাছে সাড়ে ৩০০ টাকার টিকিটের জন্য ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কোনো বিকল্প না থাকায় তিনি ৫০০ টাকা দিয়েই টিকিট কেটেছেন। অথচ টিকিট দেখানোর পরও তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরেক যাত্রী বলেন, তাঁর কাছ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকার টিকিটের জন্য নেওয়া হয়েছে ৮০০ টাকা। আরেক যাত্রীর কাছে ৬০০ এবং আরও দুই যাত্রীর কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঢাকা থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে সেখানে যান নাহিদ সাজিদ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, তাঁদের আটজনকে ৪০০ টাকা করে টিকিট দিয়ে আবার ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন হয়রানি করা হলো, তাঁরা এর প্রতিকার চান। ঢাকা থেকে যাওয়া আরমান আলী ও শুভ ইসলামও একই অভিযোগ করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে স্টেশনমাস্টারের বন্ধ দরজায় গিয়ে লাথি মারতে থাকেন। এ সময় ভেতরে কেউ ছিলেন না। স্টেশনমাস্টার দরজায় তালা লাগিয়ে চলে যান। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্টেশনের বাইরে দরজা লাগিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় অন্য যাত্রীরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলেও কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টিকিটের টাকা ফেরত চাইছিলেন। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। এ সময় স্টেশনে মাইকিং

করে বলা হচ্ছিল, রাতে নিজ দায়িত্বে নাটোর গিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে ঢাকায় যেতে হবে। অথবা সকালে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা কেউ রাজি হননি। তাঁরা বিক্ষোভ করতেই থাকেন।

খবর পেয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পুলিশের সামনেই শিক্ষার্থীরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতারণার কথা তুলে ধরেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ঢাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে।

জানতে চাইলে স্টেশনমাস্টার আবদুল করিম সন্ধ্যায় জানান, তাঁরা এই ছাত্রদের ঢাকায় পাঠানোর জন্য একটা ব্যবস্থা করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে কমিউটার ট্রেনে তাঁদের ঈশ্বরদীতে পাঠানো হবে। পরে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুন্দরবন আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ঈশ্বরদীতে অতিরিক্ত একটি বগি যোগ করে দেওয়া হবে। সেই বগিতে এই শিক্ষার্থীদের তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, সব শিক্ষার্থীকে কমিউটার ট্রেনে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা সন্তুষ্ট চিত্তে ওই ট্রেনে যেতে রাজি হয়েছেন। কেউ যাতে বাদ না পড়েন, এ জন্য তিনি মাইকিং করছেন।

যাত্রীদের টিকিট দিয়ে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বলেন, আসলে তাঁরা বিনা টিকিটে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁদের যেতে দেওয়া হয়নি। এ জন্যই তাঁরা বিক্ষোভ করছিলেন। বিনা টিকিটে যেতে দিলে তাঁরা খুশি হতেন।

মিহির কান্তি গুহ বলেন, নির্ধারিত আসনের বেশি যাত্রী হলে তাঁদের ইএফটি দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু কারও কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়া হয়নি। বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *