জাতীয় সংসদে পুলিশের সমালোচনায় সংসদ সদস্যরা

পুলিশের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, পুলিশ এখন দলীয় বাহিনী। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে নির্যাতন, সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সরকার পুলিশকে সব কাজের লাইসেন্স দিয়েছে।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২১–২২ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, পুলিশ বহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমের অভিযোগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অসত্য নয়।

সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য পুলিশকে সব কাজের লাইসেন্স দিচ্ছে মন্তব্য করে হারুন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নামে প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত করে দেন। এটাকে পুলিশ বাহিনীর হাতে ন্যস্ত করে দেন। কী প্রয়োজন, খামাখা? প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প–২০৪১, এই পর্যন্ত যত দিন থাকবেন, সেই পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের দরকার নেই। পুলিশের আইজিপিকে প্রধান করে দেন। তাদের অধীনে নির্বাচন দেন। দরকার নেই। আইন করেন সংসদে, সেইভাবে নির্বাচন হবে।’

এ সময় হারুন আরও বলেন, তাঁর এলাকায় সম্প্রতি র‌্যাবের ডিজির সফর উপলক্ষে নিরাপত্তার নামে সব সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখান থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে বের হতে দেওয়া হয়নি।

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী নয়, পুলিশ দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। পুলিশের কাছে গেলে নতুন সমস্যায় পড়তে হয় কি না, এই আশঙ্কায় মহাবিপদে পড়লেও মানুষ পুলিশের কাছে যেতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা গুম তো করেই, হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এর প্রতিকার চাইতে গেলেও নির্যাতন নেমে আসে।

 

পুলিশের কেউ অন্যায় করলে এখন মানবাধিকার কমিশন নিশ্চুপ থাকে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কোনো পুলিশ অন্যায় করলে সব পুলিশ একত্রিত হয়ে তাঁকে সাপোর্ট করে। এতে করে জুডিশিয়ারি অসহায় হয়ে যায়। জনগণের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিন্তু তাঁদের যাওয়ার জায়গা নেই।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী আরও বলেন, পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে জনগণকে তাদের চাকর মনে করে। পুলিশের দায়বদ্ধতা প্রয়োজন। পুলিশ মনে করে অস্ত্র তার হাতে। তার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তারা সীমাহীন ক্ষমতার মালিক।

সংসদে মানবাধিকার–বিষয়ক সর্বদলীয় বিশেষ কমিটি করার দাবি জানিয়ে শামীম হায়দার বলেন, এই মানবাধিকার–বিষয়ক কমিটি জনগণের যেকোনো অভিযোগ এলে তা তদন্ত করবে এবং দায়বদ্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা গেলে বহির্বিশ্ব থেকে নিষেধাজ্ঞা আসত না।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। কারণ, যেসব পুলিশ অপরাধ করছে, তার শাস্তি হচ্ছে না। এ কারণে গোটা পুলিশ বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

সাবেক আইজিপি কে এম শহীদুল হকের একটি মন্তব্য তুলে ধরে বিএনপির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সাবেক হলেই বলে, কিন্তু বর্তমান থাকতে কেন বলে না? যেমন দেখলাম সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে, যিনি নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এই “ফ্রুটিকাটি” যদি আগেই খেত, আরও ভালো করেই বলতে পারত।’ তিনি তাঁর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দেন। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্য রাজনৈতিক। পুলিশের কাজ দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। বর্তমান সরকারের অধীনে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।

অপরাধে জড়িত হলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে দাবি করে মোজাম্মেল হক বলেন, পুলিশে কেউ খারাপ নেই, এটা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। কিন্তু দেখতে হবে, অন্যায় সরকার বরদাশত করছে নাকি ব্যবস্থা নিচ্ছে। কারও ক্ষেত্রে অন্যায়–অনিয়মের সত্যতা প্রমাণিত হলে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।

Leave a Comment