চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে হত্যা- ক্লিনিকের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব

চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে হত্যা- ক্লিনিকের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বচেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে হত্যা- ক্লিনিকের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব

বগুড়ায় ক্লিনিকের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেলিম হোসেন (২৭) নামের এক ব্যবসায়িক অংশীদারকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একটি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ক্লিনিকের আরেক অংশীদার সাদ্দাম হোসেনকে (২৬) আটক করে হাসপাতাল প্রশাসন রাতেই পুলিশে সোপর্দ করে। সেলিম হোসেনের বড় ভাই আবদুস সামাদ বাদী হয়ে আজ শুক্রবার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর পুলিশ সাদ্দামকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। সেলিম হোসেন গাবতলী উপজেলার আটবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। আর গ্রেপ্তার সাদ্দাম হোসেন একই উপজেলার রামেশ্বরপুর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সেলিম, সাদ্দাম হোসেনসহ কয়েকজন যৌথ মালিকানায় বগুড়ার সদরের পীরগাছা বাজারের সালমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছিলেন। ক্লিনিকের মালিকানা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সেলিম ও সাদ্দামের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ক্লিনিকে অবস্থানকালে বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সেলিম হোসেন উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্লিনিকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা রোগীকে দেখার পর স্যালাইন পুশ করার পরামর্শ দেন নার্সদের। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা চলছিল। রাত ১২টার দিকে রোগীর সঙ্গে থাকা তাঁর ভাইয়েরা বারান্দায় কথা বলতে গেলে কক্ষে শুধু ব্যবসায়িক অংশীদার সাদ্দাম হোসেন ছিলেন। এ সুযোগে সাদ্দাম হোসেন চিকিৎসক বা নার্স কাউকে কিছু না জানিয়েই পকেট থেকে ইনজেকশন বের করে সেলিমের হাতে লাগানো স্যালাইনের ক্যানুলা দিয়ে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করেন। সঙ্গে সঙ্গে সেলিম অচেতন হয়ে পড়েন।

পুলিশ জানিয়েছে, একটু পরে স্বজনেরা সেখানে উপস্থিত হলে সাদ্দাম তাঁর হাতে থাকা চেতনানাশক বোতলের লেবেল তড়িঘড়ি করে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। হত্যার উদ্দেশ্যে চেতনানাশক পুশ করার বিষয়টি স্বজনেরা টের পেলে সাদ্দাম দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। স্বজনদের চিৎকারে চিকিৎসক ও নার্সরা সেখানে ছুটে এসে অজ্ঞান করার দুই বোতল তরল চেতনানাশক, স্যালাইন, ইনজেকশনের সিরিঞ্জসহ সাদ্দামকে আটক করেন। ইনজেকশন পুশ করার মিনিট দশেক পর রাত সোয়া ১২টার দিকে সেলিম হোসেন মারা যান। পরে হাসপাতাল প্রশাসন আটক সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশে সোপর্দ করে।

মামলার বাদী সেলিমের বড় ভাই আবদুস সামাদ বলেন, কয়েক মাস আগে যৌথ অংশীদারত্বে পীরগাছা বাজারে সালমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক চালু করা হয়। এর মধ্যে সেলিমের পরিবারের ৫০ শতাংশ শেয়ার এবং সাদ্দামের একা ৫০ শতাংশের শেয়ার রয়েছে। ক্লিনিক ব্যবসার লাভের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সেলিম ও সাদ্দামের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

আবদুস সামাদ আরও বলেন, গত ৭ জুলাই তাঁর আরেক ছোট ভাই শাহীন আলম অসুস্থ হলে নিজেদের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। তখনো স্যালাইন পুশ করার পর রাতে শাহীন মারা যান। এখন তাঁরা সন্দেহ করছেন, একই কায়দায় শাহীনকেও হত্যা করেছেন সাদ্দাম। ক্লিনিকের মালিকানার দ্বন্দ্বে পরপর দুটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন সাদ্দাম।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চিকিৎসক-নার্সদের অজ্ঞাতসারে এক রোগীকে স্যালাইনের সঙ্গে অতিমাত্রায় চেতনানাশক পুশ করা হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগী মারা যান। বিষয়টি টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়িত ওই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে।

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ক্লিনিক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ব্যবসায়িক অংশীদার সেলিম হোসেনকে ইনজেকশন পুশ করে হত্যার অভিযোগে সাদ্দাম হোসেনকে হাসপাতাল প্রশাসন ও সেলিমের স্বজনেরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। কাল শনিবার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হবে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *