চিরিরবন্দরে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাট চাষিরা

চিরিরবন্দরে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাট চাষিরা

আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। চারিদিকে পানি বর্ষার পানি থৈ থৈ করার কথা। অথচ ভরা বর্ষা মৌসুমের আষাঢ় মাস পেরিয়ে শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই। তবে কখনও কখনও আকাশে কালো মেঘে ছেয়ে গিয়ে দু’এক ফোটা বৃষ্টি হয়। কিন্তু কৃষকের হতাশার আকাশের কালো মেঘ কাটেনা। আবহাওয়ার এমন বৈরীতার মাঝে বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন পাট চাষিরা। কাঙ্খিত বৃষ্টির অভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে পাট জাগ দেয়া নিয়ে। চিরিরবন্দর উপজেলায় বৃষ্টির অভাবে নদী নালা, খাল বিল, পুকুরসহ জলাশয় গুলো পানি শুন্য থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। অনেক কৃষকপাট কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছেন।

এখন পাট কাটার ভরা মৌসুম হলেও কৃষকরা পানির অভাবে তা কাটতে বিলম্ব করছেন। অনেকে জমি থেকে পাট কেটে আঁশ তোলার জন্য নদী, খাল ও ডোবার পানিতে প্রক্রিয়া জাতের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু পাটের প্রক্রিয়াজাত করণে বা পাট জাগ দিতে বাঁধ সেধেছে প্রকৃতি। ভরা বর্ষা মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট চাষিরা পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অনেক কৃষক পাট জাগ দিয়ে তাতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৬২৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এরমধ্যে তোষাজাত ৬১৭ হেক্টরএবং দেশি জাতের ১২ হেক্টর জমি রয়েছে।

স্থানীয় চাষিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর পাটের বাজার দর ভালো না থাকায় এটি চাষ করে লোকসান গুণতে হয়েছে চাষিদের। অপরদিকে, অনাবৃষ্টির কারণে এ সোনালী আঁশ কৃষকদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাজারে পাটের দর কমে যাওয়ার কারণে চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারা। বর্তমানে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেয়ার ফলে আবারো সুদিন ফিরে এসেছে পাট চাষিদের। এবছর পাটের বাজার ভালো থাকায় আশানুরুপ দাম পাবেন বলে মনে করছেন তারা।

উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের জোত সাতনালা গ্রামের পাট চাষি অলিমদ্দিন জানান, ‘তিনি দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। চলতি বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনের জন্য অন্তত ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ পাট ২৫-২৬’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

ফতেজংপুর ইউনিয়নের পাট চাষি মজিবর রহমান বলেন, ‘চলতি বছর পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছি। অনেকেই পানির অভাবে পাট কাটছেন না। অনেকেই বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছেন। তারপরেও পর্যাপ্ত বৃৃষ্টি হলে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানো, পাট ও পাট কাঠি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করবেন চাষিরা।’

ইসবপুর ইউনিয়নের বিন্যাকুড়ি গ্রামের ইয়াকুব আলী বলেন, ‘এসময় আমন ধান রোপণ ও পাট জাগ দেয়ার জন্য বৃষ্টির পানির খুবই প্রয়োজন। এবছর ভরা বর্ষাকালেও তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। যেসব পাট কেটে রেখেছেন সেগুলোও রোদে শুকিয়ে লালচে রঙ ধারণকরছে। অনেকেই জমিতেই পাট না কেটে রেখে দিয়েছেন।’

উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জোহরা সুলতানা বলেন,‘চলতি মৌসুমে উপজেলায় পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। এখন পাট কাটার উপযুক্ত সময়। ইতিমধ্যে অনেক চাষি পাট কাটা শুরু করেছেন। কৃষকরা অপেক্ষায় আছেন, বৃষ্টি হলে তারা পুরোদমে পাট কাটা শুরু করবেন। অবে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত না হলে রিবন পদ্ধতিতে পাট পঁচালে অল্প খরচে তা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে পাটের মানও ভালো হয়।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *