ঘরে মহিলাদের ইতি’কাফের ব্যাপারে বিস্তারিত নিয়ম কানুন যারা জানতে চান তাদের জন্য এই লিখা-

🍀 ঘরে মহিলাদের ইতি’কাফের ব্যাপারে বিস্তারিত নিয়ম কানুন যারা জানতে চান তাদের জন্য এই লিখা-

#ই’তিকাফ অর্থ হচ্ছে, অবস্থান করা, বিচ্ছিন্ন হওয়া, নিঃসঙ্গ হওয়া৷ বান্দা ই’তেকাফে বসবে একমাত্র আল্লাহ পাকের সঙ্গে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যে৷

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন।
তাই শেষ ১০ রমজান ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়াহ।

◼ রমজানের শেষ ১০ দিন সুন্নত ইতেকাফ করতে চাইলে সুন্নত ইতেকাফের নিয়ত করে ২০ রমজান সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্বে
অর্থাৎ মাগরীব হবার পূর্বেই ইতেকাফের স্থানে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে
এবং ঈদের চাঁদ উঠলে ইতেকাফ শেষ হবে।
(মাগরীব হয়ে গেলে তারপর নির্ধারিত স্থানে প্রবেশ করলে সুন্নত ইতিকাফ হবে না)

◼ যদি ১০ দিন সুন্নত ইতিকাফ করার সুযোগ না থাকে
বরং একদিন বা অল্প কয়েকদিন নফল ই’তিকাফ করতে চান তাইলে করতে পারেন।
সেক্ষেত্রে একদিন করলে ই’তিকাফের নিয়ত করে সূর্যাস্তের আগেই ই’তিকাফের স্থানে অবস্থান শুরু করবেন এবং পরদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ই’তিকাফ করবেন।

◼ পুরুষদের ইতিকাফ মাসজিদেই করতে হবে। আর নারীরা নিজেদের ঘরের নির্দিষ্ট ইবাদতের স্থানে ই’তিকাফে বসবেন
যেখানে সবসময় নামাজ পড়ে থাকেন।
আর ইবাদতের জায়গা নির্দিষ্ট না থাকলে ই’তিকাফের জন্যে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে নিবেন৷ খাবার-দাবার এখানেই সারবেন৷ শরীয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া এই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবেন না৷
বড় কোন কক্ষ ইতেকাফের স্থান হতে পারবেনা।
ছোট কামরা হতে হবে,
অবশ্য বড় কক্ষের এই পরিমান স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে পারবে, যাতে সে নিরাপত্তার সাথে অবস্থান করতে পারে
ই’তিকাফের জায়গা ছেড়ে ঘরের অন্য জায়গাতে গেলেও ই’তিকাফ নস্ট হয়ে যাবে৷ স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকতে পারলেও স্বামী-স্ত্রীসূলভ ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে৷
.
◼ যে কোনো কারণে ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে পরবর্তীতে রোযাসহ কেবল একদিনের ই’তিকাফের কাযা করতে হবে৷

◼ পিরিয়ডের সময় ইতিকাফ নয়:
মহিলাদের ইতিকাফের জন্য হায়েজ, নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। হায়েজ নেফাসের অবস্থায় ইতিকাফ সহি হয় না। (বাদায়ে ২/২৭৪,
আলমগীরি ১/২১১, শামী ৩/৪৩০)।

মহিলাদের সুন্নাত ইতিকাফে বসার আগেই হায়েজ-নেফাসের দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশ করে বসাই উচিত। যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর হায়েজ পিরিয়ড শুরু হয়ে না যায়। তবে কারও যদি রমজানের শেষ দশকে হায়েজ হওয়ার নিয়ম থাকে তাহলে তিনি হায়েজ শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতে পারেন। হায়েজ শুরু হওয়ার আগেই ওষুধ-বড়ি খেয়ে হায়েজ পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখলে ইতিকাফ করলে রোজা ও ইতিকাফ সহি হবে। কোনো মহিলা ইতিকাফ শুরু করার পর যদি তার হায়েজ পিরিয়ড শুরু হয়ে যায় তাহলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। (আহসানুল কাতাওয়া ৪/৫০২)।

◼ মহিলারা ঘরের যে স্থান ইতিকাফের জন্য নির্ধারণ করবে এতেকাফ অবস্থায়, তা পুরুষের ক্ষেত্রে মসজিদের মতো গণ্য হবে। অর্থাৎ মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে না। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে গেলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
(আলমগীরি ১/২১১, বাদায়ে ২/২৮২)

◼ মানবিক প্রয়োজন বলতে বোঝায় প্রস্রাব-পায়খানা। মহিলারা ইতিকাফ অবস্থায় ঘরের নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে শুরু কেবল প্রস্রাব-পায়খানার জন্য বের হতে পারবেন। অজুর জন্যও বাইরে যেতে পারবেন। খাবার পৌঁছে দেয়ার লোক না থাকলে খাবার আনার জন্য বাইরে যেতে পারবেন।
(বাদায়ে ২/২৮২, হেদায়া /২৩০, শামী ৩/৪৩৫)

◼পানাহার ইতিকাফের জায়গায় অর্থাৎ নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে করতে হবে। বাইরে করা যাবে না। (হেদায়া ১/২৩০)
ইতিকাফের জায়গায় থেকে অন্যদের সাংসারিক কাজের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া যাবে। বাইরে যাওয়া যাবে না। রান্না-বান্নার লোক না থাকলে ইতিকাফের স্থান থেকে রান্না-বান্নার কাজ সম্ভব হলে করা যাবে। (মাহমুদিয়া ১৫/৩৩৪)

◼ ইতিকাফরত ব্যক্তি পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে গেলে অর্থাৎ ইতিকাফের স্থানের বাইরে গেলে  আসা-যাওয়ার পথে পথ চলতে চলতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবেন। তদ্রূপ এ সময় পথ চলতে চলতে কারও সঙ্গে অল্পস্বল্প কথাও বলতে পারবেন। এতে ইতিকাফের ক্ষতি হবে না। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ অবস্থায় চলতে চলতে রোগীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। কিন্তু এর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতেন না। -সুনানে আবু দাউদ: ২৪৭২

তবে কারও সঙ্গে কথা বলা বা কুশলাদি জিজ্ঞাসার জন্য ইতিকাফের স্থানের বাইরে অল্প সময়ও দাঁড়ানো জায়েজ হবে না।

আর দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরে এলে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন।
ই’তিকাফ অবস্থায় কেউ সাক্ষাতের জন্যে এলে তার সঙ্গে কথা বলা, কুশল বিনিময় করা জায়েয আছে৷ তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন অনর্থক কথাবার্তা না হয়৷
ইতিকাফ কক্ষে এমন কেউও অবস্থান করতে পারবেন যারা ইতিকাফ করছেন না।

◼ ফরজ গোসল ব্যতীত সাধারণ গোসল এর জন্য ইতিকাফের স্থান হতে বের হওয়া যাবেনা।
তবে হ্যাঁ, মুফতীয়ানে কেরাম একটি সূরত বলেছেন, সেটি হল এই যে, গোসল খানায় আগে থেকে কাউকে দিয়ে পানি ভরে রাখবে, তারপর ইস্তিঞ্জার জন্য বের হবে, ইস্তিঞ্জা শেষ করে অজু করার সময় দ্রুত গায়ে কিছু পানি ঢেলে চলে আসবে। এতে করে ইতিকাফ ভাঙ্গবে না। তবে গোসল করতে গিয়ে দেরী করবে না।
(ইনআমুল বারী, ৫৫৮)
[নিজের জামাকাপড় ও ধোয়া যাবেনা।
মোটকথা অজু এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারা বাদে আর কোন কিছুর জন্যেই বাথরুম এ দেরী করা যাবেনা মোটেই)

◼বিবাহিত নারীদের ইতিকাফ:
বিবাহিতা মহিলারা রমজানের শেষ দশকের এতিকাফ বা অন্য সময়ের নফল ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। বিবাহিতা মহিলা স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। স্বামীর অনুমতি নিয়ে মহিলারা ইতিকাফ করতে পারবেন। আর স্বামীদের উচিত যুক্তিসঙ্গত, গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফ বারণ না করা, তাদের ইতিকাফের সওয়াব থেকে বঞ্চিত না করা।
(বাদায়ে ২/২৭৪।
স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের জন্য অনুমতি দেয়ার পর তাকে আর ইতিকাফে বাধা দিতে পারবে না। যদি বাধা দেয় তাহলে সে বাধা মানা স্ত্রীর কর্তব্য নয়। (শামী ৩/৪২৯, আলমগীরি ১/২১১)।
.
◼ ইতিকাফ অবস্থায় স্বামী স্ত্রীর মিলন:
ইতিকাফ অবস্থায় দিন-রাতে কোনো সময়ই স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা করা যাবে না। করলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। (সূরা বাকারা আয়াত ১৮৭, বাদায়ে ২/২৮৫, শামী ৩/৪৪২, হেদায়া ১/২৩১)।
স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের জন্য অনুমতি দেয়ার পর তার সঙ্গে সহবাস করতে পারবে না। (শামী, ৩/৪২৯)

◼ ইতিকাফ কক্ষটি যদি শয়নকক্ষ হয় এবং একই কক্ষে বা একই বিছানায় অন্য যে কোনো কেউ অবস্থান করেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই; এমনকি স্বামীও পাশে থাকতে পারবেন, তবে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ; এর দ্বারা ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

◼ কোনো মহিলার স্বামী যদি মাজুর হয় তার সেবা-যত্নেরর প্রয়োজন হয়, তাহলে সে মহিলার উচিত হচ্ছে ইতিকাফে না বসে বরং স্বামীর সেবা-যত্ন, দেখাশোনা করা। কারণ সওয়াবের নিয়তে স্বামীর খিদমত সেবা-যত্ন করলে ইতিকাফের চেয়ে অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে। যে মহিলার
ছোট ছোট সন্তান আছে এবং তাদের লালন-পালন ও দেখাশোনার কেউ নেই এমন মহিলারও উচিত ইতিকাফে না বসে সন্তানের লালন-পালন ও দেখাশোনা করা। যে মহিলার সাবালগ মেয়ে আছে। তাদের দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। সে মহিলারও উচিত ইতিকাফে না বসে বরং সাবালগ মেয়ের দেখাশোনা করা।
(আহকামে রমজান ও জাকাত, ৬৪)

◼ ইতিকাফ অবস্থায় যা যা করা বৈধ-

– প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা,
(সরাসরি হোক বা ফোনে)
-খাওয়া, ঘুমানো,
-চুল আঁচড়ানো, নখ কাটা, শরীর হতে ময়লা
পরিস্কার করা, সুগন্ধি লাগানো,
উত্তম পোশাক পরা।

◼ যে যে কারনে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে-

-ইতিকাফের স্থান হতে শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন বা মানবিক প্রয়োজন ব্যতীত বের
হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে।
শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন হলে বের হওয়া যায়
যেমন – ফরজ গোসলের জন্য বের হওয়া।
আর মানবিক প্রয়োজনেও বের হওয়া যায়
যেমন – পেশাব পায়খানার জন্য বের হওয়া।
খাবার এনে দেয়ার জন্য লোক না থাকলে খাওয়ার জন্য বের হওয়া, পানি এনে দেয়ার কেও না থাকলে
উযুর পানির জন্য বাইরে যাওয়া।
যে কাজের জন্য নির্ধারিত স্থানের বাইরে যাওয়া হবে সে কাজ করে দ্রুত ফিরে আসতে হবে, সময় সামান্য ও নস্ট করা যাবেনা। বাইরে গিয়ে বিনা প্রয়োজনে কারো সাথে কথা বলবেন না।

বিঃদ্রঃ ইতিকাফ অবস্থায় নিজের বা অন্যের জান বাচানোর জন্য অনন্যোপায় অবস্থায় ইতেকাফের স্থান হতে বের হলে গুনাহ নেই
বরং তা জরুরী। তবে এতে ইতিকাফ ভেঙে যাবে।

– সহবাস বা যে কোন ধরনের যৌন সম্ভোগ করলে।
– পিরিয়ড শুরু হলে।

#ইতিকাফ অবস্থায় যা করা উচিত যা অনুচিত –

◼ ইতেকাফ অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরুহে তাহরীমি।

◼ যদিও ই’তিকাফে ল্যাপটপ বা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করলে বা ব্যবহার করলে, পত্রিকা কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ই’তিকাফ নষ্ট হবে না৷ কিন্তু আদবের খেলাফ এবং অনুচিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ অযথা সময় নষ্ট হবে৷ ই’তেকাফের মূল উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হবে৷ তাই সওয়াবও কম হবে নিঃসন্দেহে৷ বেশ থেকে বেশ মোবাইল সঙ্গে রাখা যেতে পারে৷ শুধু রিসিভ করবেন৷ প্রয়োজনীয় কথা সেরে রেখে দিবেন

◼ নেক কথা ব্যতীত অন্য কথা না বলা উচিত।

◼ বেকার বসে না থেকে ইবাদত এ মশগুল থাকা উচিত

◼ ইতিকাফ অবস্থায় বিশেষ কোন ইবাদত করা শর্ত না। যে ইবাদত মনে চায় করা যাবে।

◼ ইতিকাফের সময় ইবাদাত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। যেমন- কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা, নফল নামাজ পড়া, কাজা নামাজ আদায় করা, দোয়া-দরুদ পাঠ করা, জিকির-আজকার করা, এছাড়াও দ্বীনি কথাবার্তা ও ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা করাও সওয়াবের কাজ। যথা- কোরআন হাদিস, ফিকাহ তাফসির ইত্যাদি পাঠ করা ও তালিম করা।
(মাজমুআ ফাতাওয়া)

[শাইখ মুফতি উছমান গনি, মুফতি জিয়াউর রহমান, মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন,
মুফতি আবু সায়েম প্রমুখ আলিমদের লিখা হতে সংগ্রহীত]

বিঃদ্রঃ অনেকে মত দেন যে মেয়েরা মাসজিদ
ছাড়া অন্য খানে ইতিকাফ করতে পারবেনা।
কিন্তু হানাফী আলিমদের মতে পারবে
এবং এই মত ই আমরা প্রাধান্য দেই।
নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো-

#মহিলাদের এতেকাফ কি ঘরে করা যাবে না?

#মহিলাদের এতেকাফের অবস্থানস্থল সালাফে সালেহীনদের যুগ থেকেই কয়েকটি মত রয়েছে। সাহাবী হোযায়ফা রা. এর মতে মসজিদে নববী, মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসা। কেবল এই ৩ মসজিদেই এতেকাফ করা যাবে। তাবেয়ী আতা রহ. এর মতে মাত্র দুটি মসজিদে এতেকাফ করা যাবে। মসজিদে নববী ও মসজিদে হারাম! অপর তাবেয়ী ইবনুল মুসায়্যিব এর মতে শুধুমাত্র মসজিদে নববীতেই এতেকাফ করা যাবে।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪/৩৪৯)
এদিকে, অনেক ইমামের মতে কেবল জুময়া হয় এমন মসজিদে এতেকাফ করা যাবে।
#এই জাতীয় বিভিন্ন মতামত সাহাবী তাবেয়ীদের থেকে প্রমাণিত।
হানাফী মাজহাব মতে, মহিলাদের এতেকাফ বাসার যে স্থানে নামাজ আদায় করে।
সে স্থানে বা কক্ষে এতেকাফ করতে হবে। নির্দিষ্ট না থাকলে নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
একই মত ইমাম শাফেয়ী রহ.। এছাড়া মালেকী মাজহাবের অনেক ফকীহদের মতও তাই। কারণ, হাদিসে নফল ঘরকে ইবাদাতের স্থান বলা হয়েছে।

#সম্প্রতি প্রচার করা হচ্ছে যে, মহিলারা মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও এতেকাফ করতে পারবে না। সাথে স্বভাবসুলভ এ দাবীও করা হচ্ছে, মসজিদের বাইরে এতেকাফের কোন দলীল নেই! এই লেখায় কিছু দলীল উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ, যাতে ঘরে মহিলারা এতেকাফ করতে দ্বিধা ও হীনম্মন্যতায় না ভোগেন। যারা মনে করেন মসজিদের বাইরে এতেকাফ হবেই না, তাদেরকে আমাদের মত মানতে বাধ্য করা মোটেও উদ্দেশ্য না।

#দলীল-
১- মেয়েদের মসজিদ হচ্ছে, মেয়েদের ঘর। একাধিক সহীহ হাদিসে মহিলাদেরকে ঘরের কোণে নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে।
ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺃَﻥّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ – ﻗَﺎﻝَ : ” ﺧَﻴْﺮُ ﻣَﺴَﺎﺟِﺪِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻗَﻌْﺮُ ﺑِﻴُﻮﺗِﻬِﻦَّ “.
উম্মে সালাম রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন
“মেয়েদের উত্তম মাসজিদ হচ্ছে তাদের ঘরের কোণ।”
(মুসনাদে আহমদ- ২৬৫৪২, সহীহ ইবনে খুযাইমা- ১৬৮৩, তাবারানী কাবীর- ৭০৯, মুস্তাদরাক ৭৫৬, (ইমাম যাহাবী, বুসীরী প্রমুখের মতে হাদিসটি সহীহ। শায়খ আরনাউত, শায়খ আলবানি এটাকে হাসান বলেছেন)
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, ঘরই হচ্ছে মহিলাদের জন্যে উত্তম মসজিদ। মহিলারা ঘরেই একটা স্থান নির্ধারণ করে এতকাফ করবে।

২- আয়েশা রা. মসজিদের বাইরে এতেকাফ করেছিলেন।
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻠَﻴْﻜَﺔَ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺍﻋْﺘَﻜَﻔَﺖْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﺑَﻴْﻦَ ﺣِﺮَﺍﺀَ، ﻭَﺛَﺒِﻴﺮٍ ﻓَﻜُﻨَّﺎ ﻧَﺄْﺗِﻴﻬَﺎ ﻫُﻨَﺎﻙَ، ﻭَﻋَﺒْﺪٌ ﻟَﻬَﺎ ﻳَﺆُﻣُّﻬَﺎ »
ইবনে আবী মুলাইকা বলেন, আয়েশা রা. হেরা ও ছাবীর/ছুবাইর পাহাড়ের মাঝে এতেকাফ করলেন। আমরা তাকে সেখানে নিয়ে যেতাম, আর তার এক গোলাম তাকে পথনির্দেশ করত।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক- ৮০২১ সহীহ)

৩- বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখয়ী রহ. এর মতেও মহিলারা তাদের ঘরের নির্ধারিত নামাজের স্থানে এতেকাফ করতে পারবে।
ﻋَﻦْ ﻣُﻐِﻴﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﺄَﻟْﺖُ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺍﻋْﺘَﻜَﻔَﺖْ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِ ﺑَﻴْﺘِﻬَﺎ، ﺃَﺗَﻤُﺮُّ ﻓِﻲ ﻇُﻠَّﺘِﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻧَﻌَﻢْ، ﻫُﻮَ ﻃَﺮِﻳﻖٌ ‏» ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ : ﺍﻋْﺘَﻜَﻔَﺖْ ﻓِﻲ ﻇُﻠَّﺘِﻬَﺎ، ﺃَﺗَﻤُﺮُّ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺘِﻬَﺎ؟ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻟَﺎ »
মুগীরা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন। আমি ইবরাহীম নাখয়ী রহ. কে জিজ্ঞেস করলাম ঐ মহিলা সম্পর্কে যে তার নিজ ঘরে নামাজের স্থানে এতেকাফ করেছে। উক্ত মহিলা কি তাবুতে যেতে পারবে? ইবরাহীম নাখয়ী বললেন, হ্যা পারবে। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, যে মহিলা তাবুতে এতেকাফ করেছে। সে কি ঘরে যেতে পারবে? তিনি বললেন, পারবে না।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক- ৮০২৩ সহীহ)

৪- এছাড়াও শাবী, সুফিয়ান ছাওরী, ইবনে উলাইয়্যাহ প্রমুখ ফকীহ তাবেয়ীদের মতও অনুরুপ!
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ৮০২৪)

– ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, ‘মহিলাদের ঘরের নির্দিষ্ট নামাজের স্থান এর বাদে মসজিদে এতেকাফ করাকে আমি অপছন্দ করি। কারণ সেখানে মুসাফির থেকে নিয়ে নানারকম পুরুষ রাত্রিযাপন করে।’
(মারেফাতুস সুনানি ওয়াল আছার- তাহাবী ৬/৪০২- ৯১১৪)
ইমাম শাফেয়ীর অন্য একটি মত হচ্ছে, মহিলারা, গোলাম ও মুসাফির যেখানে খুশি এতেকাফ করতে পারবে। কেননা তাদের উপর জুময়া ফরজ নয়। সুতরাং জামে মসজিদে এতেকাফ করা জরুরি না।
(শারহু সাহিহীল বুখারী – ইবনে বাত্তাল ৪/১৬৯
আল এস্তেযকার – ইবনে আব্দিল বার ৩/৩৮৬)
ইমাম শাফেয়ী রহ. এই মতটি দেয়ার পিছনে যে দলীলটি দেন, যে একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতেকাফ এর নিয়ত করেও সেটা বাদ দিয়ে দেন, কারণ উনার তাবুর পাশে একাধিক স্ত্রী তাবু গেড়েছিল এতেকাফের জন্যে। পরবর্তীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাযাও করেন।
এই ঘটনাটি বুখারীসহ বিভিন্ন কিতাবে শব্দের বর্ণনার ভিন্নতাসমেত উদ্ধৃত হয়েছে। (বুখারী ২০৩৩, এতেকাফ অধ্যায়। ফাতহুল বারী এই সংশ্লিষ্ট পুরো আলোচনাটা অধ্যয়ন করা যেতে পারে।)

#এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের এভাবে মসজিদে এতেকাফ করাকে পছন্দ করেন নি।
ﺃﻭﻻ ﻛﺎﻥ ﺫﻟﻚ ﺧﻔﻴﻔﺎ ﺑﺎﻟﻨﺴﺒﺔ ﺇﻟﻰ ﻣﺎ ﻳﻔﻀﻲ ﺇﻟﻴﻪ ﺍﻷﻣﺮ ﻣﻦ ﺗﻮﺍﺭﺩ ﺑﻘﻴﺔ ﺍﻟﻨﺴﻮﺓ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﻓﻴﻀﻴﻖ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺼﻠﻴﻦ ، ﺃﻭ ﺑﺎﻟﻨﺴﺒﺔ ﺇﻟﻰ ﺃﻥ ﺍﺟﺘﻤﺎﻉ ﺍﻟﻨﺴﻮﺓ ﻋﻨﺪﻩ ﻳﺼﻴﺮﻩ ﻛﺎﻟﺠﺎﻟﺲ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ ، ﻭﺭﺑﻤﺎ ﺷﻐﻠﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﺘﺨﻠﻲ ﻟﻤﺎ ﻗﺼﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ ﻓﻴﻔﻮﺕ ﻣﻘﺼﻮﺩ ﺍﻻﻋﺘﻜﺎﻑ .
ইবনে হাজার রহ. কতক কারণ উল্লেখ করেছেন কেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতেকাফ ছেড়ে দিলেন। তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে, মহিলাদের এভাবে উপস্থিতির কারণে স্থান সংকীর্ণ হয়ে যাবে মুসল্লীদের জন্যে। অথবা মহিলাদের এভাবে উপস্থিতির ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে মনে হতে পারে যে তিনি মসজিদে নয়, যেন বাড়িতেই অবস্থান করছেন। এতে এতকাফের উদ্দেশ্যই বিঘ্নিত হয়।
(ফাতহুল বারী ৪/২৭৫)

আরো দেখুনঃ
বাদায়েউস সানায়ে’ খন্ড ২ পেজঃ১১২ ,কিতাবুল ই’তেকাফ-সিহহাতু শারায়িত্বিল ইতেকাফ; আবুল হাসান আব্দুল্লাহ আল মুবারাকপুরির কিতাব(আহলে হাদিস) ”মিরআতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৭/১৪৪;উমদাতুল কারি ১১ /২৮৭,কিতাবুল ইতেকাফ
.
এখানে একটি অভিযোগের খন্ডন সংযোজন করা হল-

অনেকেই বলে থাকে কুরানে আল্লাহ্‌ বলেনঃ
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ

ওয়া আনতুম আ’কিফুনা ফি মাসাজিদ…….
.
সুতরাং এতেকাফের জন্য মাসজিদ জরুরী!
জবাবঃ
আসলে এখানে মাসজিদের সাথে আল্লাহ্‌ ই’তেকাফকে শর্ত করেছেন তার স্পষ্ট কোন কিনায়া(ইশারা) পাওয়া যায়না।
বরং এর ভিন্নই বুঝা যায়।
উপরন্তু মাসজিদ যদি শর্ত হয়েও থাকে তবুও উপরে সহীহ হাদিস প্রদান করা হয়েছে যে মহিলাদের উত্তম মাসজিদ তাদের ঘর।
.
মূলত  উক্ত আয়াতটি ই’তেকাফের স্থানের হুকুম মাসজিদের সাথে আ’ম হয়েছে খাছ হয়নি, যার কারনে এতে এই শর্ত যুক্ত হয়নি যে,মাসজিদ ছাড়া একদমই এ’তেকাফ হবেইনা।

#যাহোক, আলোচনা দীর্ঘ না করে এখানেই থামতে হচ্ছে। যারা প্রচার করছেন যে মহিলারা ঘরে এতেকাফ করবে না। তাদের প্রতি বিনয়াবনত অনুরোধ, অযথা উম্মাহকে পেরেশান করবেন না। এতেকাফের স্থান নিয়ে সালাফে সালেহীনদের থেকেই নানা মত ছিল। আপনার কাছে কোন মত প্রাধান্য পেলে মানতে থাকুন, অন্যকে মানানোর জন্যে জোর করতে গেলেই ফেতনা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়। কী দরকার নতুন নতুন পেরেশানি সৃষ্টি করার?

✍ লেখাটি প্রস্তুত করেছেন শাইখ মুফতি Abdullah al mahmud ও
শাইখ Abdullah al mamun যৌথভাবে।

রিপোর্টারঃ মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *