কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি সহজভাবে পিডিএফসহ ফজীলত

কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি সহজভাবে পিডিএফসহ ফজীলত

কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি সহজভাবে পিডিএফসহ ফজীলত লেখায় আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি কিভাবে সহজভাবে কোরআন শরীফ শিখা যায় এবং পিডিএফ সহ দেওয়া হল। কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি সহজভাবে পিডিএফসহ ফজীলত সহজভাবে লেকা হয়েছে।

সহীহ কোরআন শরীফ শিখার সহজ পদ্ধতি
রাসুল সা: বলেছেন, তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি উত্তম যে ব্যক্তি নিজে কোরআন শরীফ শিখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী)

অন্য আর এক হাদীসে বলা হয়েছে, পবিত্র কোরআন শরীফের একটি হরফ তিলাওয়াতের জন্য দশটি করে নেকী পাওয়া যায়।

কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি সহজভাবে পিডিএফসহ ফজীলত

আমরা যারা মুসলমান তাদের প্রত্যেকের জন্য কোরআন শরীফ পড়া আবশ্যক। কিন্তু ছোটবেলায় যারা কোরআন শরীফ পড়া শিখেছে পরবর্তীতে চর্চা না থাকার কারণে অনেকেই তা ভুলে যান। আবার বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়, যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়েও বিভিন্ন কারণে কোরআন শরীফ শিখতে পারেনি।

কিন্তু এটা বাঞ্ছনীয় যে, প্রতিদিনের নামাজ আদায়ের জন্য কোরআন শরীফের সূরা আবশ্যক। তাছাড়া সঠিকভাবে ইসলামী জীবন ধারণের জন্য কোরআন শরীফ পড়া ও অর্থ জানা অবশ্যই কর্তব্য। তাই নিজের ও পরিবারের ছোট বড় সকলের জন্যই কোরআন শরীফ শেখার ব্যবস্থা থাকা উচিত।

চাইলে ঘরে বসেই কোরআন শরীফ শেখা যায় বর্তমানে ইন্টারনেট এর যুগে । কোরআন শরীফ শেখার অনেক বই, ইউটিউব এ কোরআন শরীফ শেখার অনেক ভিডিও অথবা অনলাইনে কোরআন শরীফ শেখার বিভিন্ন কোর্স এ ভর্তি হয়ে সহজে কোরআন শরীফ শিখা যায়। আজকের আমরা সহীহ কোরআন শরীফ শিখার সোজা সাপ্টা পদ্ধতির পাশাপাশি নূরানী পদ্ধতিতে শিখা, আধুনিক পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শিক্ষা এবং অনলাইন কোরআন শরীফ শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি
কোরআন শরীফ শুধু পড়তে পারলেই হবে না বরং তা সহীহভাবে হতে হবে। কেননা, ভুলভাবে কোরআন শরীফ পড়লে সওয়াব এর পরিবর্তে গুনাহগার হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এখন আমরা কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি নিয়ে জানবো।

আমরা সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলি, কিন্তু কোরআন শরীফ আরবি ভাষায় লেখা। যে কোন ভাষা পড়তে সবার আগে সেই ভাষার বর্ণমালাগুলো সঠিক উচ্চারণসহ জানতে হবে। তেমনি সহীহ কোরআন শরীফ শেখার প্রথম শর্ত হচ্ছে আরবি বর্ণমালা চিনতে পারা ও উচ্চারণসহ বলতে পারা।

যে কারণেই হোক না কেন মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও অনেকের পক্ষেই কোরআন পড়া শিখা সম্ভব হয় না কিংবা ছোট বেলা পড়া শিখলেও পরবর্তী জীবনে নিয়মিত পড়ার সুযোগ না থাকায় কোরআন পড়া দক্ষতা ধরে রাখা এখন অনেক কঠিন মনে পড়েছে অনেকের জীবনে। আর এই সমস্যা যে, বেশীরভাগ মুসলিম পরিবারের আধুনিক শিক্ষিত অনেকেই, তা অবশ্য অস্বীকার করা যায় না।

কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি সহজভাবে পিডিএফসহ ফজীলত

অতএব যারা সহজে কোরআন শরীফ পড়া শিখতে বা শিখাতে চান তাদের উদ্দেশ্যে আজকের এই প্রচেষ্টা। এখানে কিছু পদ্ধতি দেয়া হল। আশা করি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে কোরআন শরীফ পড়া সহজ হবে। আসলে বাংলা ব্যাকরণ ব্যবহার করেই যে অতি সহজে কোরআন শরীফ পড়া শিখা সম্ভব তা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এই নির্দেশনা নিবন্ধটি সদালাপে দীর্ঘায়ত না করে পাঠকের সুবিধার্থে লিংক দেয়া হয়েছে।

কোরআন শরীফ শিখতে কয়েকটি কাজ করতে হবে:

প্রথম কাজ
প্রথম কাজের তিনটি ধাপ: ক) অক্ষরসমূহের সঠিক নাম জানা – খ) অক্ষরসমূহের সঠিক উচ্চারণ শিখা গ)অক্ষরসমূহের পার্থক্য জেনে নেয়া আরবী অক্ষর মোট ২৮টি এবং পড়তে হয় ডান থেকে বাম দিকে।

আরবি বর্ণ পরিচয়
আরবিতে সর্ব মোট ২৯টি বর্ণমালা রয়েছে। তাই প্রথম কাজ হবে আরবি ভাষার সকল বর্ণ চিনতে পারা এবং উচ্চারণ করা।

আরবি বর্ণমালা - উইকিপিডিয়া

বাংলা ভাষায় আমরা বামদিকে থেকে পড়া শুরু করি কিন্তু আরবি ভাষা বা কোরআন শরীফ পাঠের সময় ডানদিক থেকে শুরু করতে হয়। আরবি বর্ণ ডানদিক থেকে বামে লিখা হয়ে থাকে।

যেমন: و ز ر ذ د ا

নোকতা সম্পর্কে জানুন
প্রথমদিকে অক্ষর চেনার পর আমাদেরকে সংযুক্ত অক্ষর চিনতে হবে। বাংলা বর্ণমালায় ছোট বা বড় অক্ষরের পার্থক্য তেমন না থাকলেও আরবি বর্ণমালায় ছোট বড় অক্ষরের ধরণে ভিন্নতা রয়েছে।

যেমন: ب – بـ – ـبـ – ـب

কুরআন শিক্ষার সহজ পদ্ধতি।কুরআন শিক্ষা ক্লাশ নং-০২। নুকতা কী । নুকতা ও নুকতা  ছাড়া হরফ কয়টি ও কী কী। - YouTube

আরবি বর্ণমালায় নোকতা তথা ফোটার মাধ্যমে অক্ষরের পার্থক্য হয়ে থাকে। তাই নোকতাযুক্ত ও নোকতাছাড়া বর্ণমালাগুলো আলাদাভাবে জেনে নিতে হবে। তেমনি শব্দ গঠনের সময় নোকতা দ্বারা অক্ষরগুলো চিনতে যাতে সমস্যা না হয় সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। যা সহজেই অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ব করা সম্ভব। যেমন: ث–ج–خ–ش

আরবি বর্ণ উচ্চারণ শিখতে হবে
আপনি যদি আরবি অক্ষরের উচ্চারণ ও যুক্তঅক্ষরের পার্থক্য রপ্ত করতে পারেন তবে সহীহ কোরআন শরীফ শিখার সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে অর্ধেক জানা হয়ে যাবে। বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি সহজেই আরবি বর্ণ চেনা ও উচ্চারণগত বিষয়ে অবগত হতে পারেন। যেমন: ـع ـعـ عـ ع

আরবি বর্ণমালা উচ্চারণের জন্য ১৭টি মাখরাজ তথা উচ্চারণের স্থান রয়েছে। বাংলাভাষায় যেমন বর্ণের উচ্চারণের জন্য আলাদা আলাদা স্থান রয়েছে। আরবি বর্ণ তার ব্যতিক্রম নয়। এ জন্য আপনাকে ১৭টি মাখরাজ (উচ্চারণের স্থান) সম্পর্কে জানতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি সহজে অক্ষরগুলো সহীহ মাখরাজসহ উচ্চারণ পদ্ধতি শিখতে পারবেন।

আরবি যুক্তাক্ষর সম্পর্কে জানতে হবে
আরবি বর্ণমালায় সংযুক্ত অক্ষর বা যুক্তাক্ষর শব্দ গঠনের সময় নতুন আকৃতিতে দেখা যায়। আগে থেকে যদি আপনি একই বর্ণের ভিন্ন আকৃতি সম্পর্কে ধারণা তথা চিনতে পারেন তাহলে সহজেই আপনি র্বণগুলো চিনতে পারবেন।

Arabic alphabet, pronunciation and language

এ পর্যায়ে এসে আপনি আরবী হরফের বিভিন্ন রূপ চিনতে ও পড়তে পারবেন। আরবি বর্ণের মিলিত রুপ পরিপূর্ণভাবে চেনা থাকলে আপনি সহজেই কোরআন শরীফ পড়তে ও লিখতে পারবেন। যেমন: سُكُون এখানে চারটি বর্ণ রয়েছে। তা হলো ن – و — ك – س

আরবি বর্ণের উচ্চারণের ধরন
এখন আমরা আরবি বর্ণমালায় হরকত তথা উচ্চারণের ধরণ নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলাভাষায় যেমন আকার, ইকার রয়েছে আরবি ভাষায় তা হরকত নামে পরিচিত। তা হলো যবর, যের এবং পেশ। এইসব হরকত বর্ণের উপর নিচে ব্যবহার করার মাধ্যমে উচ্চারণের ভিন্নতা তৈরি হয়ে থাকে।

অবসরে শিখতে পারেন কুরআনিক আরবি (রামাদান স্পেসাল পোস্ট)-১ম পর্ব - জাফরুল  মবীন এর বাংলা ব্লগ । bangla blog | সামহোয়্যার ইন ব্লগ - বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ

এছাড়া যদি কোন হরকত অক্ষরের উপর দুইবার দেয়া হয় তাকে তানভীন বলা হয়ে থাকে।

তিনটি হরকত ছাড়াও আরবি বর্ণে আরেকটি হরকত দেয়া থাকে। যা জযম নামে পরিচিত। আরবি ভাষায় দুইটি বর্ণ যুক্ত হয়ে উচ্চারণ করার জন্য জযম ব্যবহার করা হয়।

তাশদীদ সম্পর্কে জানুন
উচ্চারণের সময় কোন অক্ষরকে দুইবার উচ্চারণের জন্য আলাদা হরকত ব্যবহার করা হয়। আরবি ভাষায় তা তাশদীদ নামে পরিচিত। আরবি ভাষার কোন বর্ণকে দুইবার তথা দ্বিত উচ্চারণের জন্য তাশদীদ চিহ্নের ব্যবহার করা হয়। কোনআর শেখার জন্য সহীহভাবে তাশদীদ যুক্ত শব্দ সঠিকভাবে পড়তে পারা জানতে হবে।

তাশদীদ কাকে বলে?

আরবি বর্ণমালায় দুটি বর্ণে তাশদীদ আসলে তা নাকের বাঁশি থেকে উচ্চারণ করতে হয়। যা গুন্নাহ নামে পরিচিত। বর্ণদুটি হলো م এবং ن । গুন্নাহসহ উচ্চারণ শিখতে হবে। কখন গুন্নাহ করে পড়তে হয় এবং কখন গুন্নাহ করতে হয় না তা জানতে হবে।

মাদ্দ সম্পর্কে জানতে হবে
কোরআন শরীফ পড়ার সময় কিছু বর্ণ লম্বা বা টেনে পড়তে হয়। আরবি ভাষায় তা মাদ্দ বলা হয়ে থাকে। মাদ্দ-এর অক্ষর টেনে পড়তে হয়।

দি রিয়েল লাইট- প্রকৃত আলো : পবিত্র কোরআন শিক্ষা পদ্ধতি...

সহীহ কোরআন শরীফ শেখার জন্য কোন কোন বর্ণ ও শব্দ মোটা এবং কোন কোন বর্ণ ও শব্দ চিকন করে পড়তে হয়।

কোরআন শরীফ পড়ার জন্য যথা নিয়মে গোল তা এবং সিক্তা পড়ার নিয়ম জানতে হবে।

কোরআন শরীফ পড়ার সময় বাক্যের শেষে অথবা মাঝখানে রিবতি দিতে হয়। আরবি এই বিরতি দেয়ার নিয়মকে ওয়াকফ বলা হয়। ওয়াকফের জন্য কতগুলো চিহ্ন রয়েছে। বাংলায় যেমন বিরাম চিহ্ন আরবিতে ওয়াকফ নামে পরিচিত। সহীহ কোরআন শরীফ শিখার জন্য ওয়াকফের নিয়মগুলো জেনে নিতে হবে।

নূরানী পদ্ধতিতে শিখা
পূর্বে কোরআন শরীফের কয়েকটি সূরা মুখস্ত করার নিয়ম চালু ছিল। যা শুধুমাত্র নামাজ ও বিভিন্ন দোয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছিল। কোরআন শরীফ শিখার উপায় হিসেবে বর্তমানে নূরানী পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শিখা খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সহজ ও কম সময়ে নূরানী পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শেখা যায়।

নূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘন্টায় কুরআন শিক্ষা (হার্ডকভার)-nurany sataish 27  ghontay quran shikkha

আমাদের দেশে প্রচলিত কোরআন শরীফ শেখার পরেও অনেকে সহীহভাবে কোরআন শরীফ পড়তে পারে না। কেউ যদি আরবি ভাষা পড়তে পারে অবশ্যই কোরআন শরীফ পড়তে পারবে। সাধারণ ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু শুধুমাত্র কোরআন শরীফ শেখার জন্য আলাদা করে আরবি ভাষা শেখার প্রয়োজন নেই।

নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করেই কোরআন শরীফ সহজে শেখা যায়। বাংলাভাষাীদের জন্য খুব সহজে কোরআন শরীফ শেখার জন্য নূরানী পদ্ধতি রয়েছে। তাই বর্তমানে খুব সহজেই কোরআন শরীফ নূরানী পদ্ধতিতে শিখা যায়। এ জন্য নূরানী পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শিক্ষা নামে বই রয়েছে। পাশাপাশি এই বইয়ের অনলাইন ভার্সন পিডিএফ হিসেবে পাওয়া যায়। নূরানী পদ্ধতি কোরআন শরীফ শিক্ষার সহজ পদ্ধতি হিসেবে সাফল্য লাভ করেছে।

আধুনিক পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শিক্ষা
আধুনিক পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শিক্ষা করা যায়। এ পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে যে কেউ কোরআন শরীফ শিখতে পারে। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

নূরানী পদ্ধতিতে ২৭ ঘন্টায় কুরআন শিক্ষা: মওলানা জহুরুল হক - Nurany Sataish  27 Ghontay Quran Shikkha (Bangla Uccharon O Shunnothan Puronsoho): Maolana  Johurul Haque | Rokomari.com

আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব কম সময়ে ও সহজে কোরআন শরীফ শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ছোট বড় সকলে আধুনিক পদ্ধতিতে কোরআন শরীফ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

কোরআন শরীফ শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফজিলত

কোরআন শরীফ মানবজাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। প্রত্যেক নবী ও রাসুলকে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য কিতাব দান করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দান করা হয় কোরআন শরীফ মাজিদ। সৃষ্টিকূলের ওপর যেমন স্রষ্টার সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম, তেমনি সব বাণীর ওপর পবিত্র কোরআন শরীফের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয়।

কোরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফজিলত

মানুষের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হয়, তার মধ্যে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত সর্বাধিক উত্তম। কোরআন শরীফে কারিম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পঠিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। কোরআন শরীফ মাজিদ তেলাওয়াত ও শিক্ষার অনেক গুরুত্ব অনেক। কোরআন শরীফের আয়াত ও হাদিসের একাধিক জায়গায় এর ফজিলতের কথা আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে কোরআন শরীফ-হাদিসের আলোকে বর্ণনা করা হলো-

কোরআন শরীফ তেলাওয়াত কেন লাভজনক ?
পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত আল্লাহর সঙ্গে একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দু’টিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোনো প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে, যাতে কখনও লোকসান হবে না।’

কোরআন শরীফের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি

পরবর্তী আয়াতে আরও বলা হয়েছে, ‘পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’ -সুরা ফাতির : ২৯-৩০

প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভ
কোরআন শরীফে কারিম তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন শরীফের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।’ -তিরমিজি : ২৯১০

কোরআন শরীফের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি
পবিত্র কোরআন শরীফ শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শরীফ শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ -সহিহ বোখারি : ৫০২৭

কোরআন শরীফ তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে
কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার সময় কোরআন শরীফ তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করো, কারণ, কোরআন শরীফ কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ -সহিহ মুসলিম : ১৯১০

কোরআন শরীফ পড়া উত্তম সম্পদ অর্জন
কোরআন শরীফ পড়া বা শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কোরআন শরীফ হতে দু’টি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না?

কোরআন শরীফ তেলাওয়াত ঈমান বাড়ায়

তাহলে সেটি তার জন্য দু’টি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়ত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম। -সহিহ মুসলিম : ১৩৩৬

কোরআন শরীফ তেলাওয়াত ঈমান বাড়ায়
পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত বান্দার জন্য এমন উপকারী যে, তা তেলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে।’ -সুরা আনফাল : ২

কোরআন শরীফের ধারক-বাহক ঈর্ষণীয় ব্যক্তি
কোনো ব্যক্তি পবিত্র কোরআন শরীফের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে তার হক আদায় করে তেলাওয়াত করলে তার সঙ্গে ঈর্ষা কিংবা তার মতো হওয়ার আকাঙ্খা করা যাবে।

ইসলামি শরিয়তে একমাত্র দুই ব্যক্তির ওপর ঈর্ষা করা যায়। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহতায়ালা কোরআন শরীফের ইলম দান করেছেন, সে দিবা-রাত্রি ওই কোরআন শরীফ তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয় সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদ দান করেছেন। সে তা দিনরাত (বৈধ কাজে) খরচ করে। -সহিহ বোখারি : ৭৫২৯

অনলাইন কোরআন শরীফ শিক্ষা কোর্স
বর্তমান যুগ ইন্টারনেট তথা অনলাইনের যুগ। আগে আমরা কোন কিছু শেখার জন্য নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানে যেতে হতো। অথবা ঘরে শিক্ষক এর মাধ্যমে পাঠ নিতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট এর ফলে আমরা সহজেই ঘরে বসে অনলাইন কোরআন শরীফ শিক্ষা কোর্স এর মাধ্যমে কোরআন শরীফ শিখতে পারছি।

সহজে কোরআন শরীফ শেখার জন্য নানা প্রতিষ্ঠান অনলাইন কোরআন শরীফ শিক্ষা কোর্স চালু করেছে। অনলাইন কোরআন শরীফ শিক্ষা কোর্স এ ভর্তি হয়ে ঘরে বসেই আমরা কোরআন শরীফ শিক্ষা করতে পারছি। যারা কোরআন শরীফ শিখতে আগ্রহী তারা অনলাইন কোরআন শরীফ শিক্ষা কোর্সের মাধ্যমে সহজেই কোরআন শরীফ শিখে নিতে পারেন।

আল-কোরআন শরীফের আমলকারীর মর্যাদা
আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.) এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত সকল বাতিল দ্বীনের উপরে দ্বীন ইসলামকে বিজয় করার জন্য। আল-কোরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।’ (সূরা আস-সফ-৯)

আল-কোরআন শরীফ বিশ্ব মানব সভ্যতার দরবারে সবচেয়ে সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ কিতাব। এ কিতাবের আমলকারীকে এবং কিতাবের বিধান প্রতিষ্ঠাকারীকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং পরিবারের লোকদের জন্য জান্নাতের শুপারিশ করার অধিকার দিবেন। এ সম্পর্কে আল-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন শরীফ অধ্যয়ন করবে এবং কোরআন শরীফকে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবে। কোরআন শরীফে বর্ণিত হালালকে হালাল হিসেবে মেনে নেবে, হারামকে হারাম হিসেবে মেনে নেবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং পরিবারের দশজনের জন্য সুপারিশ করার অধিকার দিবেন যাদের সকলের ব্যাপারে জাহান্নামের ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল।’ (সূনান আত-তিরমিযি)

পরকালীন জীবনে জান্নাত পাওয়ার জন্য এবং আল্লাহর কাছে উচ্চ মাকাম বা (উচ্চ মর্যাদা) পাওয়ার জন্য আমাদের সকলের আল-কোরআন শরীফ অধ্যয়ন করা, নিজের জীবনে মেনেচলা এবং এই দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা প্রয়োজন।

আল-কোরআন শরীফ শিক্ষার পথ হচ্ছে জান্নাতের পথ
আল-কোরআন শরীফ শিক্ষার গুরুত্ব এতই বেশি দেয়া হয়েছে যে, কুরআন শিক্ষার জন্য বা দ্বীন শিক্ষার জন্য যদি কেউ রাস্তায় বের হয় সে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে গেলো। এবং যতক্ষণ সে এ কাজ থেকে ফিরে না আসলো ততক্ষণ আল্লাহর রাস্তায় থাকলো। এ সম্পর্কে আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীন শিক্ষা করার জন্য বের হলো, সে আল্লাহর রাস্তায় বের হলো যতক্ষণ না সে ফিরে আসলো।’ (সূনান আত-তিরমিযি)

দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের পথ হচ্ছে জান্নাতের পথ। তাই জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো ব্যক্তি রাস্তায় চলতে থাকলে এ পথে চলতে চলতে সে এক সময় জান্নাতের সন্ধান পেয়ে যাবে। আর এ পথে থাকা অবস্থায় যদি তার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে জান্নাত দিয়ে দিবেন। এ সম্পর্কে আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে; যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, আল্লাহ তাআালা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।’ (সহীহ মুসলিম ও তিরমিযী)

একাজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, আল-কোরআন শরীফ শিক্ষার জন্য যেখানে যাওয়া প্রয়োজন যেতে হবে, যত কষ্টই হোক সে কষ্ট করতে হবে, এর পরেও আল-কোরআন শরীফ শিক্ষা করতে হবে।

কোরআন শরীফ বিহীন শরীর বিরান বাড়ির মত
আল-কোরআন শরীফ এসেছে বিশ্ব মানবতার জীবনকে কোরআন শরীফের আলোয় আলোকিত করতে। সত্যের সন্ধান দেয়ার জন্য, অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য। তবে যে ব্যক্তি কোরআন শরীফ অধ্যয়ন করবে না, কোরআন শরীফকে বোঝার চেষ্টা করবে না, কোরআন শরীফ নিয়ে গবেষণা করবে না অর্থাৎ যে দেহের মধ্যে আল-কোরআন শরীফের আলো নেয় সেটা উজাড় বাড়ির মতো, ছাড়া বাড়ির মতো। একটা ছাড়া বাড়িতে যেমন সাপ, বিচ্ছু, তেলাপোকা ইত্যাদি পোকা-মাকড় বসবাস করে। ঠিক তেমনি যে দেহের মধ্যে কোরআন শরীফ নেই সেই দেহে শয়তান বাস করে। আল-হাদীসে এর সমর্থনে বর্নিত হয়েছে, ‘হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যেই দেহের মধ্যে আল-কোরআন শরীফের কোনো শিক্ষা নেই সেই দেহটা হচ্ছে উজাড় বাড়ির মতো।’ (সূনান আত-তিরমিযি)

আল-কোরআন শরীফের কথা সঠিক কথা
আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদেরকে পৃথিবীতে পঠিয়েছিলেন সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আর আল-কোরআন শরীফ হচ্ছে সেই ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার একমাত্র মানদ-। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,‘নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদ- নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।’ (সূরা হাদীদ-২৫)

আল-কোরআন শরীফই হচ্ছে সত্য কিতাব এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘এটি (আল্লাহর) কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত।’ (সূরা আল-বাকারা-২) তাই সত্য কথা বলতে হলে, নেক আমল করতে হলে, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হলে আল-কোরআন শরীফ জানতে হবে, আল-কোরআন শরীফ বুঝতে হবে, আল-কোরআন শরীফকে মেনে চলতে হবে, আল-কোরআন শরীফ দিয়ে বিচার-ফয়সালা করতে হবে। তাহলে উত্তম প্রতিদান পাওয়া যাবে।

এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন শরীফ দিয়ে যে কথা বলে সে সত্য কথা বলে, কোরআন শরীফ থেকে যে আমল করে সে তার প্রতিদান পাবে, কোরআন শরীফ দিয়ে যে বিচার-ফয়সালা করে সে ন্যায় বিচার করে এবং যে কোরআন শরীফের দিকে মানুষকে আহবান করে সে সঠিক পথের সন্ধান পায়।’ (সূনান আত-তিরমিযি)

কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি পিডিএফ
কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি পিডিএফ নিচে দেওয়া হল। নিচের ডাউনলোড বাটন টি ক্লিক করে কোরআন শরীফ শিখার পদ্ধতি পিডিএফ টি ডাউনলোড করে ফেলুন।

শেষ কথা
আমাদের সকলকে কোরআন শরীফ শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে হবে। কোরআন শরীফ শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যক। নানা কারণে কোরআন শরীফ শিক্ষা না করলেও আধুনিক পদ্ধতিতে খুব সহজেই কোরআন শরীফ শিক্ষা করা যায়। তাই যথাসম্ভব দ্রুত কোরআন শরীফ শিক্ষা কোর্স এর মাধ্যমে আপনি ও আপনার পরিবারের সকলে কোরআন শরীফ শিখে নিতে পারেন।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *