কেন হাসেননি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)

আপনি কি জানেন, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ‌ﷺ কখনো জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) এর হাসিমুখ দেখেননি।

স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে কৌতূহলের উদ্রেক ঘটতে পারে। কুঞ্চিত কপালে হয়তো মনে মনে বলবেন, কেন? আল্লাহর চারজন প্রধান ফেরেস্তার একজন হাসিমুখে থাকবেন না, কেন? তাঁরা তো নিষ্পাপ, আমাদের মতো গুনাহগার না। আল্লাহ জিকিরে সবসময়ই তাঁরা মশগুল থাকেন। তবে কী কারণ থাকতে পারে না হাসার?

হ্যাঁ, কারণ তো অবশ্যই আছে। তবে সেই কারণটা অত্যন্ত ভয়াবহ। মুমিনের কলিজা কেঁপে উঠবে সেই কারণটা শুনলে।

চলুন তবে শুনে আসি। “রাসূলের চোখে দুনিয়া” বইয়ের ১৪০ নং হাদিসে এই কারণটা সুন্দরভাবে উল্লেখ করা আছে।

রবাহ (রাহিমাহুল) থেকে বর্ণিত,
‘নবী ‌ﷺ জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,
“আপনি যতবার আমার নিকট এসেছেন, ততবারই আপনার কপালে শোক ও দুশ্চিন্তার ছাপ ছিল।”
[এর কারণ দর্শাতে গিয়ে] জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ‘জাহান্নাম সৃষ্টির পর থেকে আমার ঠোঁটে কখনো হাসি ফোটেনি।”

হাদিসটি আরো একবার পড়ুন, আরো একবার। এবার নিরিবিলি একটি পরিবেশে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) এর উক্তিটি নিয়ে চিন্তা করুন একা একা। কান্না পাচ্ছে না? চোখ ফেটে যেন জল বেরিয়ে আসতে চাইছে, তাইতো?

তাহলে আপনাকে জানাচ্ছি, আহলান সাহলান। আপনার অন্তর মরে যায়নি কিংবা এখনো শক্ত হয়ে যায়নি। আপনার অন্তরে আছে আল্লাহভীতি। ঈমানের দীপবর্তিকা এখনো অবশিষ্ট রয়ে গেছে আপনার ভিতরে। বলুন, আলহামদুলিল্লাহ।

আমরা কম বেশি অনেকেই জানি, জাহান্নামের জ্বালানির মধ্যে আমরা মানুষেরাও থাকবো। ফেরেস্তাদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবুও যদি জাহান্নাম সৃষ্টির পর থেকে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) এর মুখে হাসি না ফোটে, তাহলে আমরা কী?

আমরা এখনো কীভাবে নিশ্চিন্তে দিনাতিপাত করছি? কীভাবে আমরা দিনের পর দিন পাপ করেই চলছি কিন্তু তওবা করছি না?

প্রতিটা দিনের ২৪টা ঘন্টা করে আমরা পাচ্ছি। একটা ঘন্টাও কী আমরা আমাদের অনন্ত জীবনের কথা ভাবছি? নাকি প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় এখনো মেতে আছি?

বন্ধুগণ, আমরা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা পার করছি এই মুহূর্তে, অন্ততপক্ষে জাহান্নামের তুলনায়। চলুন না, এই সময়টা কাজে লাগাই। হিসেব কষতে বসি আমাদের সকল পাপাচারের। সিজদায় মাথা লুটে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মালিকের দরবারে ক্ষমা ভিক্ষা চাই। আমরা তো তার প্রিয়তম বান্দা আর তিনি তো অতিশয় দয়ালু ও পরম ক্ষমাশীল। নিশ্চয়ই তিনি আমাদের আকুলিত মনের তওবা কবুল করবেন, বি’ইযনিল্লাহ।

লেখা: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।

Leave a Comment