: আপনি কেমন যেন!
– কেমন?
: মেহেদি পাতার মতোন।
– মানে?
: মেহেদি পাতার দিকে তাকিয়ে দেখবেন, সবুজের মায়াকাড়া সৌন্দর্যে মুগ্ধ করে সবাইকে অথচ ভেতরে পুষে রাখে রক্তাক্ত ক্ষত।
– বুঝলাম। কিন্তু আমাকে ওমন মনে হবার কারণ কী?
: কারণ আপনি হলেন প্রজাপতি-মায়াবতী। অথচ আপনার অন্তরের সিংহভাগ বেদনার নীল চাদরে আচ্ছাদিত।
– তাই নাকি?
: একদম তাই।
– বাব্বাহ! এত নিশ্চিত হচ্ছেন কেমন করে? ওয়েট! তার আগে বলুন প্রজাপতি-মায়াবতী কেন বললেন?
: প্রথমত, আমি যা বললাম তাতে আমার মন আমাকে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়েছে। এজন্য আমিও ওভাবে বলতে পেরেছি।
দ্বিতীয়ত, প্রজাপতির মতো চঞ্চল আপনি, তাই প্রজাপতি। আর আপনার চোখে মুখে রয়েছে উপচে পড়া মায়া, এজন্য আপনি মায়াবতী। আর এই দুটোর সমন্বয়ে আপনি আমার কাছে হয়ে উঠেছেন প্রজাপতি-মায়াবতী।

প্রিয়মের মুখে কথাগুলো শুনে আমি বেশ খানিকটা সময় নিশ্চুপে কাটিয়ে দিলাম। হঠাৎই যেন মনের আকাশে জমলো নিকষ কালো মেঘ। চোখে বৃষ্টির আগমন টের পেয়ে আমি তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম।
গ্রিলের ঐপাড়ে মুক্ত আকাশে সদ্য উদিত পূর্ণিমার লোভনীয় চাঁদ। আমার জ্যোৎস্না ভালোলাগে বলে, সমস্ত কাজ ফেলে প্রিয়ম আমাকে নিয়ে বসেছে জ্যোৎস্নার মোহনীয়তা উপভোগ করতে।

কিন্তু ওনার কথাগুলো শুনে ব্যালকনিতে আর মন বসছে না। ভাবছি, রুমের দরজা লাগিয়ে ধুমছে অশ্রু প্লাবনে ভাসবো। ভাবনানুসারে উঠে যেই না চৌকাঠের দিকে পা বাড়ালাম, পিছন থেকে প্রিয়ম হ্যাঁচকা টান দিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড় করালো। আমি কাঠগড়ার আসামীর মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম আর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম চোখের জল লুকোনোর।

: প্রিয়া, তাকান আমার দিকে।
-(নতমুখে নিশ্চুপ আমি)
: তাকান বলছি।
-( তাকাইনি আমি। কিন্তু আমার অবাধ্য আঁখি তার উপচে পড়া কষ্টের এক ফোঁটা জল টুপ করে প্রিয়মের হাতে ফেললো)
উনি আমার হাতে আলতো চাপ দিয়ে আকুলিত কন্ঠে বলছে-

: প্রিয়া, আমি কি আপনার অব্যক্ত কষ্টের একটুখানি ভাগ নেয়ারও যোগ্য নই? কেন দূরে সরিয়ে দেন এভাবে? আমি যে আপনার খুচরো বিষাদের ভীষণ কাঙালি।
আমার সব সুখ মুঠো ভরে তুলে দিব আপনার আঁচলে,
বিনিময়ে কি আমার বুক পকেট ভরাবেন আপনার বিষাদে?

মুখ উঁচু করে আমি প্রিয়মের দিকে তাকালাম না। জলভর্তি ছলছল চোখে তাকালাম ঐ দূর আকাশে। যার শেষ প্রান্তে বসে রব্বের কারীম আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কৃতজ্ঞতায় আমার মন আপনাআপনি বলে উঠল, ‘আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আ’লামিন।’ হঠাৎ মনে হলো, আমার রব বোধ হয় আমাদের দেখে মুচকি হাসছেন। এই ভেবে, চোখভর্তি জল নিয়ে আমিও হেসে ফেললাম। এরপর প্রিয়মের দিকে ফিরে দেখি, তাঁর মুগ্ধতা মেশানো অপলক নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে শুধু আমারই বসবাস।

|| কৃতজ্ঞতা ||
~মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *