পোষা হাতিটির নাম নূরজাহান। তার দুটি বাচ্চা। বড়টি স্ত্রী হাতি, নাম রাখা হয়েছে নূরী। চার বছর বয়সী ছোটটি পুরুষ শাবক। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নামকরণ করা না হলেও, বাড়ির লোকজন ‘টাইগার’ নামেই ডাকেন। মায়ের পিছু পিছু ঘুরেই দিন কাটছিল টাইগারের।এখন টাইগারকে কাজে নামাতে চান মালিক। তাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য একদল প্রশিক্ষকও এসেছেন। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ইসলামাবাদ চা-বাগান এলাকায় আজ সোমবার দুপুরে হাতির বাচ্চাটির দুই মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের শুরু।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে এ প্রশিক্ষণকে ‘হাদানি’ বলা হয়। এ সময় বাচ্চা হাতিটিকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে বেঁধে রাখা হয়। পোষ মানানোর নানা কলাকৌশল শেখাতে তার ওপর শারীরিক নির্যাতনও চালানো হয়।হাতিটির মালিকের নাম নিপার রেজা। জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে তাঁদের বাড়ি।প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, হাতির প্রশিক্ষণ দেখতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন সকাল থেকেই ইসলামাবাদ চা-বাগান এলাকায় ভিড় জমান। সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে প্রধান প্রশিক্ষক আকবর আলীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল প্রশিক্ষণ শুরু করে। প্রথমে হাতিটিকে মায়ের কাছ থেকে কৌশলে আলাদা করা হয়। এরপর এটির চার পাসহ শরীর দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। পরে এটিকে মাটিতে পুঁতে রাখা কাঠের গুঁড়ির সঙ্গে বাঁধা হয়।
হাতিটি শৃঙ্খলমুক্ত হতে জোরাজুরি চালায়, পারে না। যন্ত্রণায় শুঁড় ওপরে তুলে কাতরায়। প্রায় দুই ঘণ্টা এ রকম চলে। এর ফাঁকে ফাঁকে খড়ের সঙ্গে মিষ্টান্ন মিশিয়ে হাতিটিকে খাওয়ানো হয়। এরপর কাঠের গুঁড়ি থেকে ছাড়িয়ে দড়ি দিয়ে টেনে টেনে মাঠের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো হয়।প্রশিক্ষক আকবর আলী মুঠোফোনে বললেন, একসময় তিনি হাতির ‘মাহুত’ ছিলেন। ২০-২৫ বছর আগে প্রশিক্ষকের কাজে যোগ দেন। বৃহত্তর সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বহুকাল ধরে পোষা হাতিকে পাহাড় থেকে গাছ টেনে নামানোর কাজ, সার্কাস ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। সে কারণে শৈশবে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়। হাতি বড় হয়ে গেলে এ কাজ দুঃসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
আকবর বলেন, পশুদেরও আবেগ-অনুভূতি আছে। প্রশিক্ষণের সময় অনেক শারীরিক নির্যাতন সইতে হয়। মা কাছে থাকলে তা সহ্য করতে পারবে না। মানুষের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। তাই মাকে সরিয়ে রাখতে হয়। প্রশিক্ষণ দুই মাস চলবে। এ সময়ে সার্কাসে প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলা, শারীরিক কসরত ও গাছ টানানো শেখানো হবে। এ ছাড়া মানুষের সঙ্গে যাতে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে, সে জন্য তাকে মাঝেমধ্যে লোকালয়েও নিয়ে যাওয়া হবে। প্রশিক্ষণকালে হাতিকে আখ, খড়, কলাগাছ ও মিষ্টান্ন খাওয়ানো হয়।প্রশিক্ষণে নির্যাতনের ব্যাপারে জানতে চাইলে আকবর বলেন, প্রশিক্ষণকালে হাতির শরীরে ক্ষত হলে পাহাড়ি গাছের লতাপাতা দিয়া মলম বানিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেন। তাতেই সেরে যায়।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারে অবস্থিত বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, লাইসেন্স নিয়েই মালিকেরা হাতি পোষেন। হাতি লালন-পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরও সচেতন থাকা দরকার। শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে হাতিদের প্রশিক্ষণে উন্নতমানের নানা ব্যবস্থা রয়েছে। বন্য প্রাণী বিভাগের পক্ষ থেকে এসব প্রশিক্ষণের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।