কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ

কোভিড-১৯ মহামারিকে মোকাবিলা করে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বছর বাজেটের তুলনায় এবারের বাজেট ঘোষণার পর তা বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ করোনার প্রথম ঢেউয়ে দেশে মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। চলতি বছরে দ্বিতীয় করোনা ঢেউয়ে আরও মানুষ বেকার হয়েছেন। তাইতো এবার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় বাজেট প্রস্তাব ও অর্থ বিল উত্থাপন করা হবে। এবারের বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে দেশের ইতিহাসের ও ৫০তম বাজেট অধিবেশন এটি।

বাজেট ঘোষণার আগেই অর্থমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন এবার সব ধরনের মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছেন। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট হচ্ছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের ত্রয়োদশ বাজেট। সেদিক থেকে বিগত বছরগুলোর তুনলায় এই বাজেট হবে চ্যালেঞ্জের।

করোনা মহামারিতে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র থেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে এসেছে। এখন প্রায় ছয় কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। এই মানুষগুলোকে বাঁচিতে এবং অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে।

আসন্ন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বেশি। আলোচিত এ বাজেটে অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদান বাদ দিলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। মহামারি করোনার ধাক্কা সামলাতে এবারের বাজেটে আয়ের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে সরকার। সেজন্য বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

অর্থায়ন

অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ঋণ আসবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ৩২ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৫ হাজার ১ কোটি টাকা আসবে অন্যান্য খাত থেকে।

অপরদিকে, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।

সবমিলিয়ে দেশি এবং বিদেশি উৎসে থেকে মোট ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে নতুন বাজেটে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে। এসব ঋণের জন্য সরকারকে সুদ দিতে হবে মোট ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

রাজস্ব প্রাপ্তি

নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি বা আয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে মোট ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর বড় অংশই যোগান আসবে এনবিআর থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

অবশিষ্ট টাকা আসবে এনবিআর বহির্ভূত খাত এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে। এর পরিমাণ ৬২ হাজার কোটি টাকা।

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সরকার আশা করছে, চলতি অর্থবছরে এটি হতে পারে ৬ শতাংশের সামান্য বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা তা গ্রহণ করেননি।

obhijatra

Leave a Comment