করোনায় লেখাপড়ায় বেশি ক্ষতি ছেলে শিক্ষার্থীদের: জরিপ

করোনায় লেখাপড়ায় বেশি ক্ষতি ছেলে শিক্ষার্থীদের: জরিপ

দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখার ক্ষতির (লার্নিং লসের) ঝুঁকি বেড়েছে। এ প্রবণতা মাধ্যমিক পর্যায়ের ছেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি। বর্তমানে দেশে পড়ালেখায় ক্ষতির মুখে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। গ্রাম ও শহরের বস্তি এলাকায় করা সাম্প্রতিক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বেসরকারি সংগঠন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) জরিপটি করেছে। আজ সোমবার এক ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।

শিক্ষার ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি চলতি বছরের মার্চ মাসে একই ধরনের জরিপ করেছিল। আজ সোমবার প্রকাশিত জরিপটি চালানো হয় গত ২১ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীদের ৪ হাজার ৮৭২ জন অভিভাবক অংশ নেন। টেলিফোনে প্রশ্ন করে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, মার্চে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখার ঝুঁকিতে ছিল। আগস্টে তা বেড়ে ২২ শতাংশে দাঁড়ায়। আবার মার্চে ২৫ শতাংশ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী এই ক্ষতির ঝুঁকিতে ছিল। আগস্টে তা বেড়ে হয় ৩০ শতাংশ। মাধ্যমিকে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। মার্চে ছেলে শিক্ষার্থীদের ২৬ শতাংশ ক্ষতির মুখে থাকলেও আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ শতাংশে। অন্যদিকে মার্চে ২৪ শতাংশ মাধ্যমিক স্তরের মেয়ে শিক্ষার্থী পড়ালেখার ক্ষতির মুখে ছিল; আগস্টে সেটি সামান্য বেড়ে ২৫ শতাংশে দাঁড়ায়।

সোমবার জরিপের ফলাফল ওয়েবিনারে তুলে ধরেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন। তিনি বলেন, আগস্টে শিক্ষণ ক্ষতি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ও বিধিনিষেধের প্রভাব ছিল। মার্চে একধরনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়। করোনাকালে নানা ধরনের ক্ষতির মধ্যে শিক্ষার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।এই জরিপ যখন হয়, তখন দেশে স্কুলগুলো বন্ধ ছিল। সে সময় ৭৫ শতাংশ অভিভাবকই স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে বিকল্প পদ্ধতির পাঠদান ব্যবস্থা নিয়েও জরিপে তথ্য তুলে ধরা হয়। দেখা যায়, গ্রামের ৪৪ শতাংশ পরিবারের ও শহরের ৩৬ শতাংশ বস্তিবাসী শিক্ষার্থীর অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই।

মহামারির ফলে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী ১৫ শতাংশের বেশি পরিবার জানায়, মহামারির শুরু থেকে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপে ভুগছে। শিক্ষার্থীদের মা–বাবারা জানান, স্কুল বন্ধ থাকাকালে সন্তানদের আচরণ তুলনামূলক বেশি অসহনশীল, খিটমিটে ও রাগান্বিত ছিল। এই হার মার্চে ৩৬ শতাংশ থাকলেও আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে।ওয়েবিনারে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা মোটেও হেলাফেলা করে দেখলে হবে না। এর জন্য মনো–সামাজিক সহায়তা দরকার।

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য কিছু সুপারিশ করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে ঝরে পড়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে। তাদের জন্য সম্পূরক শিক্ষা কর্মসূচি দরকার। এটা স্কুলের সময়ের পরে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংগঠন বা এনজিওর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, মাধ্যমিকের ছেলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তাদের জন্য সরকারের বৃত্তির ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে শিক্ষাসহায়ক যন্ত্র দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *