করোনায় ৮৪ ভাগ শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায়

প্রতি আসনের জন্য শিক্ষার্থী ২০ ঢাবি ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ

দেশে করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ৮৪ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্রছাত্রী। সম্প্রতি পরিচালিত একটি জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। মন খারাপ, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, নিজেকে তুচ্ছ ভাবার মতো নেতিবাচক কারণগুলোকে মাসনিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেছে সংগঠনটি। এছাড়া অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, একাকিত্ব, সেশনজট, আর্থিক অসচ্ছলতা, পারিবারিক কলহ, অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, বিয়ের চাপসহ নানাবিধ কারণও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্তদের প্রতি দ্রুত বিশেষ নজর দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।

এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২১ পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো-‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য।’ এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, করোনা মহামারিরর এই বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে জনসাধারণের মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়াও পরিবারের সদস্য, সমাজের নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন। এ পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিধি আরও বাড়াতে হবে।

দেশে ১২ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন একটি জরিপ চালায়। ‘করোনাকালীন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব’ শীর্ষক জরিপে ২৫৫২ জন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে ২১৬০ জন বা ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীদের মানসিক অশান্তির হার সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। করোনাকালীন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ সঠিক সময়ে না ঘুমানো। জরিপে দেখা যায় যে, ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ঠিক সময়ে ঘুমান না। তাদের বেশিরভাগ অনলাইনের মাধ্যমে প্রাত্যহিক কার্যক্রম চালিয়েছেন। ফলে দিনের বড় একটা সময় ডিভাইসের সামনে কেটেছে। ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এতে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মাথাব্যথা, কাজে মনোযোগ কমে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছে।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সি। ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ ২৪ থেকে ২৮ বছর বয়সি ও শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ ২৮ বছরের বেশি। অন্যদিকে লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় জরিপে অংশগ্রহণকারী পুরুষ ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ বা ৯৯৯ জন। নারী অংশগ্রহণকারী ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ বা ১ হাজার ৫৫২ জন।

পুরুষ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থীর ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ মহামারিতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। অর্থাৎ পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ বা ১ হাজার ২৬ জন সরকারি ও ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৭৩৩ জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও মেডিকেলসহ বাকিদের অংশগ্রহণ ছিল ৩১ দশমিক ১ শতাংশ। এরমধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগছে। যা মোট অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণকারী ৭৩৩ জনের মধ্যে ৫৯১ জন বা ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ।

করোনা সংক্রমণের ভয়ে দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এ সময়ে অনেকের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। এই সংখ্যা ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য মাত্র ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ কাউন্সিলরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। বাকিরা তাদের মন ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন উপায়ে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন- ‘এটার একপাক্ষিক সমাধান করা কঠিন। দেখা গেছে যেসব শিক্ষার্থী ঠিকমতো ঘুমাতে যায় না তাদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি। যারা অতিমাত্রায় ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের ডিপ্রেশনের হার বেশি। ফলে পরিমিত ঘুম, সঠিক মাত্রায় ডিভাইস ব্যবহার, কোনো কিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দীপন সরকার বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এ সময় বন্ধুদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ কমে গেছে। পাশাপাশি নিয়মিত পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে। ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবন ও সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

দিবসের কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ আজ বেলা ১১টা ওয়েবিনার সভা করবে। ২৯, ৩০ অক্টোবর ও ৫ নভেম্বর ৪ দিন বিশেষ অনুষ্ঠান করবে। এছাড়া বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে দিবসটি পালন করবে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *