কনকনে শীতে খুপড়ী ঘরে দিন কাটাচ্ছে লাজলীর

পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের আসমানী কবিতার আসমানীর মত আবির্ভাব ঘটেছে নব্য এক আসমানীর এক খুপড়ী ঘরে। এই কন কনে শীতের মাঝে একটি ঝুপড়ী ঘরে চারমাস ধরে বসবাস করছে লাজলী খাতুন (২৮)। নিজের তৈরি করা কয়েকটি টিন ও বাঁস দিয়ে ঝুপড়ী ঘরে অতিকষ্টে দূর্বিষহ জীবন কাটছে তার।

পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ খোঁজ না নিলেও দিন দিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে । লাজলী খাতুন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় চন্দ্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামের মৃত আব্দুস সালাম (সালু) মেয়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ক্ষেতের মাঝখানে কয়েকটি টিন দিয়ে বাঁশ দিয়ে ঘিরে ঘরের দিনযাপন করছেন লাজলী। ঘরের আসবাবপত্র এবং শীত নিবারণের জন্য ঘরে কিছুই নাই তার। যেন আসমানী কবিতার আসমানীর মত।

জানা গেছে,গত ৮ বছর আগে লাজলীর বাবা আব্দুস সালাম (সালু) মৃত্যু পর সংসারটিও এলোমেলো হয়ে যায়। ৪ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়। তিন বোনে বিয়ে হয়ে যায়। বড়ভাই বিদেশ যাওয়া কথা বলে গ্রামে ঘরবাড়ি জায়গা জমি বিক্রি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকা। এদিকে মা আয়শা বেগম অভাব অনটনের মধ্যে মেয়ে লাজলী খাতুনকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকা গাজীপুর এলাকায় মা বাসায় বাসায় কাজ করেন আর লাজলী নেয় গার্মেন্টসের চাকুরি। এক সময় সবে ছিল পরিবারে। পরে লাজলী ঢাকা থেকে গ্রামে চলে এসে চাচার বাড়িতে কিছু দিন থাকার পর মায়ে অংশ ২৫ শতক জমির উপর একটি টিনের চালা করে সববাস শুরু করেন।

স্থানীয়রা জানান, লাজলী খাতুন এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। এক সময় গ্রামে একটি ছেলেকে ভালবেসে না পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। লালমনিরহাট শহরে ঘুরে বেড়ালে পুলিশ তাকে সন্দেহবসত জেলহাজতে পাঠান। পরে এক বছর হাজতে থাকা পর। পরিবারে লোকজন বাড়িতে এনে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলেন। এর পর মায়ের সাথে আবারও ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসের চাকুরি নেয়। সে থেকে আর বিয়ে করেন নি লাজলী।

লাজলী খাতুন জানান, অনেক কষ্টে পড়ে আছি। আমার মা ঢাকা থেকে এসে বাড়ি করবে। চাচা বাড়িতে ছিলাম আর কত থাকি। তাই ঘরটি করে আছি।

স্থানীয় নীলা বেগম ও খোরশেদ হোসেন জানান, লাজলী খাতুন আগে ভাল ছিল। পড়াশুনাও করেছেন। সে কি থেকে যে কি হল আমরা জানি না। সে একা বেড় হয়। কাহারও কাছে যায় না খায়ও না। সে সব সময় একা একা থাকেন। একটি প্রতিবন্ধীর কার্ড হয়েছে সে টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে চলেন। গ্রামে তার কেউ নেই। তার মা ভাই তাকে সাহায্য করে না। এভাবেই এই শীতে কষ্ট করে আছেন।

নাজলীর চাচা নুরুজ্জামান বলেন, লাজলী খাতুনের বাবার মৃত্যু পর তার ভাই বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সব জমি বিক্রি করেছেন। এর পর সবাই ঢাকা চলে যায়। লাজলীর মাথার সমস্যার কারনে হাজতে ছিল একবছর। এর পর সুস্থ হয়ে চাচা বাড়িতে কিছু দিন থাকার পর নিজেই টিনের চালা তৈরি করে এই জমিতে চারমাস ধরে বসবাস করছেন।

চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লাজলী খাতুনের অসহায় অবস্থা এবং মানসীক সমস্যার কারনে তাকে একটি প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। সে এলাকায় একটি টিনের চালায় বসবাস করছেন বিষয়টি জেনেছি।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী অফিসার আব্দুল মান্নান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তার বিষয়ে তথ্য দিলে আমরা খোঁজ নিয়ে পূর্নবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Leave a Comment