কক্সবাজার সৈকতে পা রাখার জায়গা নেই, শহরজুড়ে যানজট

কক্সবাজার সৈকতে পা রাখার জায়গা নেই, শহরজুড়ে যানজটকক্সবাজার সৈকতে পা রাখার জায়গা নেই, শহরজুড়ে যানজট

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট। আজ শুক্রবার বেলা ১১টা। সৈকতের এক কিলোমিটারে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ, কক্সবাজার সৈকতে সাত ঘণ্টায় নেমেছেন দেড় লাখ পর্যটক, শহরজুড়ে যানজট। পর্যটকেরা উত্তাল সমুদ্রে নেমে গোসলে ব্যস্ত, কেউ কেউ পানিতে হাতে খেলছেন ফুটবল, দ্রুতগতির নৌযানে ছুটছেন গভীর জলরাশিতে। প্রচণ্ড গরমে বঙ্গোপসাগরের শীতল লোনাজল যেন পর্যটকদের মনে শান্তির পরশ এনে দিচ্ছে।

সুগন্ধা পয়েন্টে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের কলাতলী, সিগাল, লাবনী পয়েন্টেও ৪০ থেকে ৫০ হাজার পর্যটকের সমাগম। সাগরে গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সি সেফ নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার এমনিতে স্থানীয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষের সমাগম লেগে থাকে। তার ওপর পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। সব মিলিয়ে আজ শুক্রবার সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টা সময়ে সৈকতে নেমেছেন অন্তত দেড় লাখ পর্যটক। আজ দিনের ১২-১৩ ঘণ্টায় একসঙ্গে তিন লাখ মানুষের এমন সমাগম অতীতে ঘটেনি। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৬ জন লাইফগার্ড কর্মীর হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বেলা ১১টার দিকে কলাতলী সৈকতে গোসলে নামে ঢাকার বেইলি রোডের বাসিন্দা সাজ্জাদুল হক। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই কিশোরী মেয়ে। কারও গায়ে লাইফ জ্যাকেট ছিল না। সাগরের বড় বড় ঢেউ তাঁদের ওপর আছড়ে পড়ছিল। লাইফগার্ড কর্মীরা তাঁদের  গভীরে না যেতে অনুরোধ জানাচ্ছিলেন, বাঁশি বাজিয়ে সতর্ক করছিলেন।

সাজ্জাদুল হক (৪৫) বলেন, করোনার দুই বছর পরিবার নিয়ে কোথাও যাওয়া হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এখন বন্ধ। তাই লোনা জলে শরীর ভেজাতে কক্সবাজার ছুটে আসা। কিন্তু এখানে যে মানুষের ঢল, পা রাখার জায়গা নেই। পর্যটকের গিজগিজ অবস্থা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লাইফগার্ড কর্মীরা বলেন, বৈরী পরিবেশের কারণে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়েছে। ঢেউগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় উপকূলে আছড়ে পড়ছে। তাতে পর্যটকের আনন্দ বাড়লেও যেকোনো সময় বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে গুপ্তখাল। সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও সিগাল পয়েন্টে বেশ কয়েকটি গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের সময় গুপ্তখালগুলো ডুবে থাকলে পরখ করার সুযোগ থাকে না। কোমরসমান পানিতে নেমে গোসলের সময় বেখেয়ালে গুপ্তখালে আটকা পড়লে জীবন নিয়ে ফিরে আসা কঠিন। অতীতে গুপ্তখালে আটকা পড়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া গুপ্তখালে তল্লাশি চালিয়ে পর্যটকের উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি কক্সবাজারে নেই। তাই গুপ্তখাল থেকে সাবধান থাকলে আশপাশে বালুচরে লাল নিশান ওড়ানো হচ্ছে। কিন্তু উপচে পড়ার ভিড়ের ঠেলায় সেদিকে অনেকের নজর থাকে না।

সরেজমিন দেখা গেছে, সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি পর্যটকেরা ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, নাফ নদীর মিয়ানমার সীমান্ত, ঐতিহাসিক প্রেমকাহিনির মাথিন কূপ, উখিয়ার পাথুরে সৈকত, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানে।

গত বুধবার থেকে মেরিন ড্রাইভ, শহরের কলাতলী সৈকত সড়ক, শহরের অভ্যন্তরের প্রধান সড়ক, কলাতলী হোটেল মোটেল জোন সড়কে যানজট লেগে আছে।
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দূরপাল্লার তিন হাজারের বেশি যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি অন্তত পাঁচ-ছয় হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে শহরে এসেছেন লাখো মানুষ। গাড়িগুলো সড়কের এক পাশে দাঁড় করে রাখায় যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। তার ওপর শহরে চলছে ১০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এর বাইরে কয়েক হাজার মোটরসাইকেলের  চলাচল জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, সৈকতে এখন পা রাখার জায়গা নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই শতাধিক ট্যুরিস্ট পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ পর্যটকদের পানির পিপাসা মেটাতে খাওয়া পানি সরবরাহ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সৈকত এলাকায় মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য বন্ধের পাশাপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, উখিয়া ও টেকনাফের সমুদ্রসৈকত ও বিনোদনকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আজ দুপুর পর্যন্ত কোনো পর্যটকের বিপদে পড়ার খবর নেই। টাউট-দালাল কর্তৃক কোনো পর্যটক প্রতারণার শিকার হলে ট্যুরিস্ট পুলিশকে জানানো জন্য সৈকতে পৃথক সাতটি তথ্যকেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকের হয়রানি রোধ, রেস্তোরাঁ ও দোকানপাটে ভেজাল খাবার ও পণ্য পরিবেশন ও বেচাবিক্রি বন্ধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক চারটি  ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে।

কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, আজ শুক্রবার পর্যটকের আগমন অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বাড়ছে। আগামী রোববার থেকে পর্যটকের আগমন কমতে শুরু করবে। ১০ মের পরে সৈকতজুড়ে ভ্রমণে আসা পর্যটকের সংখ্যা কমে ৩০ থেকে ৪০ হাজারে নেমে আসবে।

 

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *