উৎসব নেই, তবে স্কুলে স্কুলে চলছে বই বিতরণ

উৎসব নেই, তবে স্কুলে স্কুলে চলছে বই বিতরণ

দুই বছর আগেও নতুন বছর ও শিক্ষাবর্ষের শুরু মানেই ছিল সারা দেশে স্কুলে স্কুলে উৎসব। শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে খালি হাতে স্কুলে গিয়ে আনন্দ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিনা মূল্যে পাওয়া নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বাড়ি ফিরত। কিন্তু দুই বছর ধরে সেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মাঝে রেখা টানল করোনার সংক্রমণ। তবে আনন্দ উৎসবে রেখা টানলেও বই বিতরণের কাজে বড় বাধা হতে পারেনি করোনার সংক্রমণ।ভিন্ন প্রক্রিয়ায় বছরের শুরুর দিনেই আজ শনিবার সারা দেশে স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এক দিনে বা একসঙ্গে বই না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দিন বা সময়ে দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যের বই। ফলে, এবার বই বিতরণের কাজটি চলবে আরও কয়েক দিন।

আজ খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শুরুর দিনে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের চারটি বিদ্যালয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, ভিড় ছাড়াই আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা বই পাচ্ছে, তাদের সবাই সব বই পাচ্ছে না। যতগুলো বই পাওয়ার কথা ছিল, কোনো কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তার চেয়ে কম বই পাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনো সব শ্রেণির সমস্ত বই বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। এ জন্যই কোনো কোনো শ্রেণিতে সব বই দেওয়া যায়নি। মূলত, মাধ্যমিক স্তরের কয়েকটি শ্রেণিতেই এ সমস্যা হচ্ছে।এ বছর মোট ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ শিক্ষার্থীর জন্য মোট ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যবই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হবে।জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বই ছাপার কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এবার মাধ্যমিকের বিনা মূল্যের মোট পৌনে ২৫ কোটি বইয়ের মধ্যে গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় পৌনে ২২ কোটি বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ওই দিন পর্যন্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয় প্রায় ২০ কোটি বইয়ের। মাধ্যমিকের বাকি বই ছাপার কাজ শেষ হতে আরও প্রায় এক সপ্তাহ লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির এক কর্মকর্তা। অবশ্য প্রাথমিক স্তরের প্রায় সব বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে।

যেভাবে দেওয়া হচ্ছে বই
সকালে রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে তেমন ভিড় নেই। জানা গেল, আজ সকাল থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত চলবে বিতরণের কাজ। দোতলার একটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেল, শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে সেগুলো দেখছে। তারা প্রভাতি শাখার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দায়িত্বরত শিক্ষক জানান, প্রভাতি শাখার সবাই নয়, বি সেকশনের শিক্ষার্থী তারা।তখন পাশের আরেকটি কক্ষে দেওয়া হচ্ছিল একই শ্রেণির অন্য সেকশনের শিক্ষার্থীদের বই পরে সেখান থেকেই অন্যদিকে দোতলারই আরেকটি শ্রেণিকক্ষের সামনের বারান্দায় কয়েকজন ছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল। নবম শ্রেণির এই ছাত্রীরা জানাল, তারা নতুন বই পেয়েছে। তবে আজ সব বই পায়নি, ছয়টি বই পেয়েছে। বইগুলো দেখিয়ে তারা জানাল, এগুলো হলো বাংলা সহপাঠ, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি গ্রামার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ক্যারিয়ার শিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের বই। উল্লেখ্য, নবম শ্রেণিতে বই ১৩টি। বাকি বই পরে দেওয়া হবে।

সেখান থেকে নিচতলা যেতে যেতে দেখা গেল একটি কক্ষে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী বসা। তাদের একজন অধরা জাবিন জানায়, নতুন বই পেয়ে তার খুব ভালো লেগেছে। সে মোট আটটি বই পেয়েছে; যদিও এই শ্রেণির মোট বই আরও বেশি।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল এক শিক্ষক রংপুর ডেইীৈকে জানান, এখনো মাধ্যমিকের সব শ্রেণির সব বই বিদ্যালয়ে আসেনি; বিশেষ করে ইংরেজি ভার্সনের বইয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন তাঁরা। এর মধ্যে সপ্তম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের বই এখনো বিদ্যালয়ে আসেনি। আর ইংরেজি ভার্সনের নবম শ্রেণির চারটি বই এসেছে। যতগুলো বই এসেছে, সেগুলোই তাঁরা শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের মাধ্যমে বিতরণ করছেন।ওই বিদ্যালয় থেকে মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে দেখা গেল, বিদ্যালয়ের মাঠে কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। ভেতরে গিয়ে জানা গেল, দোতলায় বই বিতরণ করা হচ্ছে। পরে দোতলায় গিয়ে দেখা গেল একাধিক শ্রেণিকক্ষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসানো হয়েছে। তখন বই দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল।এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক কৃষ্ণ অধিকারী জানান, আজ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের বই এলেও অষ্টম শ্রেণির শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বই এসেছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ, দেশের ছয় শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। এই বিদ্যালয়ও এগুলোর একটিপার্শ্ববর্তী মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে একেবারেই ভিড় নেই। বিদ্যালয়ের আঙিনায় কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের একজন ছাত্র তাইফ হাসান জানায়, সে তার শ্রেণির ১৪টি বইয়ের সব কটিই পেয়েছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকারি নির্দেশনায় তারা বিভিন্ন দিনে বই বিতরণের কাজ শুরু করেছেন। আজ দেওয়া হচ্ছে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির একাংশের শিক্ষার্থীদের বই। এভাবে তারা ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বই দেন ভিন্ন ভিন্ন দিনে বই দেওয়ার সময়সূচি টাঙানো আছে পার্শ্ববর্তী মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের ফটকেও।শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে, করোনোর সংক্রমণের কারণে যাতে ভিড় না হয়, সে জন্যই উৎসব না করে এভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই দেওয়া হচ্ছে।

ক্লাস হবে যেসব দিন
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় নতুন শিক্ষাবর্ষে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে প্রতিদিন চারটি বিষয়ের ওপর ক্লাস নিতে হবে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে প্রতিদিন তিনটি বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হবে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস হবে। এই দুই দিনের প্রতিদিন তিনটি করে বিষয়ের ওপর ক্লাস নিতে হবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে এক দিন তিনটি বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হবে। প্রাথমিকে শ্রেণি কার্যক্রম হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *