ঈদের আগের দিন থেকে ডাক্তার ও নার্স না থাকার অভিযোগ উঠেছে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে । আর এজন্য নতুন ভর্তি হওয়া ও চিকিৎসাধীন রোগীরা বিনা চিকিৎসায় অবস্থান করছেন হাসপাতালে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিন রোগী মারা গেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে এদিকে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে । ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন সরেজমিন শুক্রবার বিকালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা গেছে।
জরুরি বিভাগে রোগী নিয়ে এসে ভর্তি হতে ২শ’ টাকা দিতে হচ্ছে ,রোগীদের স্বজনরা অভিযোগ করেন। আর স্ট্রেচারে করে রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে দিতে হচ্ছে দেড় থেকে দুশ’ টাকা। আর ওয়ার্ডে আনার পর একবার নার্স এসে স্যালাইনসহ সব ওষুধ কিনে আনতে বলেন। আর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল পর্যন্ত কিনে আনতে হচ্ছে। তবে সবগুলো ওয়ার্ডেই কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্সদের রুমে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। চেয়ার-টেবিল ফাঁকা পড়ে আছে। আর বিভাগীয় প্রধানসহ চিকিৎসকদের রুমে তালা ঝুলছে।
বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে কাঁদছেন মেয়ে আনোয়ারা বেগম সরেজমিন মেডিসিন ওয়ার্ডে দেখা গেলো। আর তিনি জানান, ঈদের আগের দিন থেকে কোনও ডাক্তার আসেনি। আর তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কী করবেন বুঝতে পারছেন না। তবে নার্স ঈদের আগের দিন কিছু পরীক্ষা করতে বলেছেন। তবে অনেক কষ্টে বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করে রিপোর্ট নিয়ে অপেক্ষা করছেন কাকে দেখাবেন। তার বাবাকে বড় হাসপাতালে এনে কী লাভ হলো হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আনোয়ারা বেগম আক্ষেপ করলেন ?
লালমনিরহাটের মোগলহাট থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে এসেছেন শাহাদত হোসেন সার্জারি বিভাগে গিয়ে দেখা গেলো। তার বাবার পায়ে আঘাতজনিত কারণে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আর তিন দিন ধরে ডাক্তারা নার্স কেউ আসে না। তবে তিনি গজ-ব্যান্ডেজ দেখিয়ে বললেন, তিনি নিজেই ক্ষতস্থানের লাগানো ব্যান্ডেজ খুলে আবার নতুন করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিচ্ছেন। তবে তার প্রশ্ন, ডাক্তার যদি না আসেন, ব্যবস্থাপত্র না দেন, তাহলে এখানে রেখে কী লাভ? আর রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, নানা সমস্যায় রোগীরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও কোনও ডাক্তার বা নার্স দেখতেও আসছেন না। আর তাদের দেখার কেউ নেই। আর এভাবেই দুদিন ধরে বিনা চিকিৎসায় অমানবিকভাবে অবস্থান করছেন মরণাপন্ন রোগীরা। তবে চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্তব্যরত জরুরি বিভাগে কর্মরত এক কর্মচারী সব অভিযোগ অস্বীকার করে দ্রুত চলে যায় । হাসপাতালের গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে সাত জন রোগী মারা গেছেন। আর তাদের মধ্যে তিন জন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছে সর্দার রুমে কর্তব্যরত সর্দার মমতাজ জানান। আর এদিকে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ইন্টার্ন ডা. সৌরভ সাহা জানান, মুমুর্ষ রোগীরা আসছেন। তবে তাদের দেখভাল করতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর তার পরেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সার্বিক বিষয় জানতে হাসপাতালের পরিচালক রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, ডাক্তার-নার্স-আয়া না থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা সাধ্যমতো কাজ করছেন।
আর গাইনি ওয়ার্ডে শতাধিক রোগী অবস্থান করছেন। তবে তাদের কারও সন্তান হয়েছে, কেউ সন্তান হওয়ার অপেক্ষায়। আর এখানে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করলেন, ঈদের দুদিন আগে থেকে ডাক্তার-নার্স কেউ আসে না। আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া দুজন নার্স তাদের খোঁজ নিয়েছেন। তবে জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেলো, বিভিন্ন স্থান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে, ভ্যানে, অটোরিকশায় আসছেন রোগীরা। আর জরুরি বিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর একজন কর্মচারী এসে তাদের নাম-ঠিকানা লিখে ভর্তি রশিদ দিয়ে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ইন্টার্ন ডাক্তার সৌরভ সাহার কাছে পাঠাচ্ছেন। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ভর্তি হতে জরুরি বিভাগের কর্মচারীরা জনপ্রতি দুশ’ টাকা নিচ্ছেন অনেকটা জোর করে। আর টাকা দিলে তাড়াতাড়ি ভর্তি রশিদ দিচ্ছেন আর না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।