আইনমন্ত্রীর এলাকায় ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কাউকে দলীয় নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। তবে নৌকার ওপর ভর করে নয়, নিজের জনপ্রিয়তায় নির্বাচিত হয়ে আসুন, এটাই আমি চাই। জনসমর্থনের ভিত্তিতে নির্বাচন করবেন। পাশাপাশি কসবাতেও নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে না।’

ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার সকালে আখাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আনিসুল হক এসব কথা বলেন। চতুর্থ ধাপে আগামী ২৩ ডিসেম্বর আখাউড়া উপজেলার আখাউড়া উত্তর, আখাউড়া দক্ষিণ, ধরখার, মনিয়ন্দ ও মোগড়া—এ পাঁচ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। কসবা উপজেলার ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। কসবা-আখাউড়ার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪) সাংসদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

ইউপি নির্বাচনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দল থেকে দেশ বড়। জনগণ যাতে তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তাই দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যাতে কারচুপি না হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউপি নির্বাচনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে সভায় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের কাছে ইউপি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। শত বছর ধরে যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেখে আসছি, করে আসছি, সেখানে আগে দলের কোনো প্রার্থী থাকতেন না। যাঁরা দাঁড়াতেন, জনগণ তাঁদের মধ্য থেকে কে ভালো কে মন্দ, সেটা দেখে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। ভোট দেওয়ার অধিকার জনগণ রাখেন। পরিবর্তনটা প্রয়োজন, প্রস্তুতিটাও প্রয়োজন।’

সভায় আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্ব করেন। এটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনির হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মমিন, ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বেগ, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। সভায় সম্ভাব্য প্রার্থীরাসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে কসবার কাইমপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া বলেন, কসবা-আখাউড়ার সাংসদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জনগণের ভোটে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনিই প্রকৃত নেতা। জনগণের কাছে তাঁর কী পরিমাণ গ্রহণযোগ্যতা বা ভালোবাসা আছে, ভোটে তা নির্ধারিত হবে।

কসবার বিনাউটি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘কসবা-আখাউড়ার বিভিন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’ বিনাউটি ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্যসচিব ও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. তছলিমুর রেজা বলেন, ‘প্রতীক ছাড়া নির্বাচন, মন্ত্রী মহোদয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

কসবা পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হলেই ভালো হবে। কোনো ধরনের প্রভাব থাকবে না। জনগণ তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবেন। কসবা-আখাউড়ার গণমানুষের নেতা সাংসদ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটাকে স্বাগত জানাচ্ছি।’

আখাউড়া উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। মন্ত্রী মহোদয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হবে। আমি মনে করি, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবেন। জনগণের সেই ভোটেই আমি নির্বাচিত হব।’

এর আগে দ্বিতীয় ধাপে মাদারীপুরে সাতটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও মাদারীপুরে ১৪ ও শরীয়তপুরের ৮ এবং গোপালগঞ্জের ৭টি ইউনিয়নে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রয়েছে।

এসব ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না দেওয়ার জন্য শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের সাতজন সাংসদ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানান। পরে নোয়াখালী, নরসিংদী, নাটোর থেকেও সাংসদেরা তাঁদের নিজ নিজ জেলায় দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ করেছেন।

Leave a Comment