অসঙ্গতি পর্ব-১

দরজা খোলার সাথে সাথে আমার চোখ পড়লো নিঝুমের উপর। ওর দিকে তাকিয়ে আমার নিজেরই খারাপ লাগলো!

মুখটা শুকনো লাগছে। চোখের নীচটা ফুলে গেছে, চোখে লালিমা ভাব একদম স্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরেই কেঁদেছে। তাড়াহুড়ো করে চোখের পানি মুছতে গিয়ে পুরোটা মুছতে পারে নি। বাম চোখের কোণে একটু জল এখনও চিকচিক করছে। আর চোখের পাতা এখনও ভেজা।

ওর ঐ অশ্রুসিক্ত চোখ যেন আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলছে, “তুই একটা স্বার্থপর! তুই একটা প্রতারক! তুই মেয়েটাকে ঠকাচ্ছিস!” নিঝুম মিথ্যে হাসি হেসে আমাকে সালাম দিল।

আমি বেশিক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। সালামের উত্তর দিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। খুব দ্রুত হেঁটে চলে আসলাম নিজের রুমে। ড্রেস চেইঞ্জ না করেই এসি অন করে শুয়ে পড়লাম।

আজ বড্ড দেরি করে ফেলেছি। তাকে আগে থেকে জানানো উচিত ছিল। ফোন না করে একটা টেক্সট দিলেও পারতাম! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত একটা বেজে পনের মিনিট।

অফিস শেষে আমি প্রতিদিন ৯টার মধ্যেই বাসায় ফিরি। ৯.৩০ এ আমরা একসাথে ডিনার সারি। এই একটা সময়ই আমি ওর সাথে খেতে বসি। নাহ্! আমাদের ডিনারে কোনো রোমান্টিকতা নেই। অচেনা দু’জন মানুষ রেস্টুরেন্টে একই টেবিলে খেতে বসলেও দু-চারটে কথা বলে। আমরা সেটাও বলি না। যে যার মতো খেয়ে উঠে যাই।

তবুও এই মেয়েটা আমার জন্য আগেভাগে খাবার সাজিয়ে বসে থাকে। খেতে খেতে মাঝেমধ্যে আমি ওর দিকে আড়চোখে তাকাই। কি উচ্ছ্বাস ঐ চোখে! কত আনন্দ যে খেলা করে ঐ চোখ দু’টোয়! হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কোনো জিনিস অনেকদিন পর খুঁজে পেলে মানুষের মুখে যে অভিব্যক্তি ফুটে উঠে, এই সময়টাতে তার মুখে আমি একই অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই।

খুব বুঝতে পারছি, মেয়েটা আজও ৯টার পরে খাবার সাজিয়ে বসে ছিল আমার প্রতিক্ষায়। কিচ্ছুটি মুখে দেয় নি এখন পর্যন্ত। অথচ আমি বাইরে খেয়ে আসলাম। খাবার সময়ও তার কথা একটুও মনে পড়লো না? সে না পড়ুক, ও খায় নি জেনেও ভদ্রতাসূচক ওকে বলতে পারতাম, “আপনি খেয়েছেন? না খেলে এখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি খেয়ে এসেছি।” সেটাও বলি নি! ধ্যাৎ! দিনদিন আমি যে কি হয়ে যাচ্ছি। সামান্য কমন সেন্সটাও দেখি বিলুপ্তির পথে!

দরজায় ওপাড়ে দাঁড়নো নিঝুমের ঐ অসহায় চাহনি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুললো। আমি আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। উঠে চলে গেলাম ওর রুমের সামনে।

দরজায় নক করলাম। কোনো সাড়া নেই। ঘুমিয়ে পড়লো নাকি ওভাবেই? ফিরে আসতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। কেমন যেন অপরাধবোধ কাজ করছে। আবার ফিরে গেলাম। দরজা লক করা ছিল না। এবার সরাসরি রুমেই ঢুকে পড়লাম। বিছানায় সে নেই! ওয়াসরুমের দরজাও বাইরের দিকে লাগানো। তার মানে ওয়াসরুমেও নেই।একটু খানি ভয় পেলাম! এত রাতে কই যাবে মেয়েটা?

ওর নাম ধরে ডাকি নি কখনও। আজ ডাকতে গিয়েও কেন যেন ভিতর থেকে আসলো না নামটা। ভাবতে ভাবতে একটু এগিয়ে দেখলাম আধো আলোয় মেয়েটা খাবার টেবিলে বসে আছে। পাগল নাকি সে? আমাকে ডাকবে না? খাবো কি-না জিজ্ঞেস করবে না? আমি যদি ঘুমিয়ে পড়তাম, ও তো ওভাবেই কাটিয়ে দিতো! কি আশ্চর্য!

আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। তার কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম,
-শুনুন!
সে চমকে ফিরে তাকাল।
-হ্যাঁ, বলুন।

[চলবে]

Writer: Mahazabin Sharmin Priya

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *