সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মানুষের নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর অর্থ সন্দেহভাজন তিনজনের মধ্যে একজন করোনা রোগী। এই সংক্রমণের পেছনে আছে অমিক্রন। এখন প্রশ্ন, এই অমিক্রন–ঝড় থামবে কবে?
অমিক্রন বাংলাদেশে ঢুকবে, বাংলাদেশের অনেক মানুষ করোনার নতুন ধরন অমিক্রনে সংক্রমিত হবে, এটা অনুমিতই ছিল। পৃথিবীর কোনো দেশ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেনি।
দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বা আন্তরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে সংক্রমণ বন্ধ করা যায়নি। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সংক্রমণের গতি শ্লথ করা সম্ভব হয়েছে।এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছিল, তারা সতর্ক আছে। অমিক্রন মোকাবিলার প্রস্তুতিও তাদের আছে।২০২০ ও ২০২১ সাল—এই দুই বছরে করোনা সম্পর্কে জনস্বাস্থ্যবিদ, ভাইরাস বিশেষজ্ঞ, মহামারি বিশেষজ্ঞ, ওষুধ ও টিকা বিজ্ঞানীদের কোনো বৈজ্ঞানিক অনুমান কোথাও পরিপূর্ণভাবে সঠিক হতে দেখা যায়নি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে অমিক্রনের এই ঢেউ কবে থামবে? এই প্রশ্নের সঙ্গে কিছু সম্পূরক প্রশ্ন আছে। আজ ২৪ জানুয়ারি সংক্রমণ কি ‘চূড়ায়’ বা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ বা ‘পিকে’? না কি সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, অর্থাৎ চূড়ার দিকে।মহামারির তৃতীয় বছরের প্রথম মাসটি পার হচ্ছে সংকটের মধ্য দিয়ে। দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হতো (দৈনিক) গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে। তখন দৈনিক শনাক্তের সর্বোচ্চ হার সাড়ে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু এবার তৃতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই দৈনিক শনাক্তের হার ৩১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিকে খুবই উদ্বেগজনক বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে গভীর অনিশ্চয়তা রয়েছে আগামী মাসগুলো নিয়ে।
অমিক্রনের আবির্ভাবের পর মোটা দাগে দুটো বৈজ্ঞানিক অনুমানের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ দেখা গেছে। বিজ্ঞানীদের একটি অংশ বলছেন, ‘পাতলা স্বভাবের’ অমিক্রন মহামারি শেষ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।অন্য একদল বিজ্ঞানী এই আশঙ্কা করছেন যে, অমিক্রনের ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা নতুন বা নতুন-নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট তৈরি করছে।এই দুই ধারার বাইরে আছে আরও নানা ধরনের পূর্বানুমান প্রাকৃতিক নিয়মেই অমিক্রনের দাপট কমে যাবে বলে মনে করেন কোনো কোনো জনস্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ববিদ। কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ থেকে অথবা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার কমতে থাকবে। এক দিন বাড়বে, তো দুই দিন কমবে। এভাবে কমতে থাকবে।অমিক্রন প্রবলভাবে আঘাত হেনেছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে হচ্ছে।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের একটি অংশ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বাকি অংশ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছে।অমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমানুপাতিক হারে হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় চাপ বাড়ছে। উন্নত বা উন্নয়নশীল যে কোনো দেশের মতো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও অসীম ক্ষমতার অধিকারী নয়। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা সীমিত, জনবল সীমিত, অক্সিজেন সরবরাহ সীমিত, ওষুধপত্র সীমিত।এখন প্রশ্ন উঠেছে অমিক্রনের এই ঢেউ কবে থামবে? এই প্রশ্নের সঙ্গে কিছু সম্পূরক প্রশ্ন আছে। আজ ২৪ জানুয়ারি সংক্রমণ কি ‘চূড়ায়’ বা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ বা ‘পিকে’? না কি সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, অর্থাৎ চূড়ার দিকে।
এ নিয়ে এই প্রতিবেদক একাধিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক কিছু অভিজ্ঞতাও আছে।দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও ইউরোপের অভিজ্ঞতা বলছে, সামাজিক সংক্রমণ শুরু হওয়ার চার থেকে ছয় সপ্তাহের শেষে ‘পিক’ শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। তবে দুই বছরের অভিজ্ঞতা এ কথাও বলছে যে, এগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কোনো সূত্র নয়।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ অবধি। এর একটি অর্থ এই যে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন শনাক্তের হার বাড়তেই থাকবে।একটি পর্যায়ের পর শনাক্তের হার আর বাড়বে না। অর্থাৎ, শনাক্তের হারে স্থিতাবস্থা আসবে। তারপর শনাক্তের হার ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
এখানে প্রশ্ন দুটো: স্থিতাবস্থা কবে নাগাদ শুরু হবে? স্থিতাবস্থা কত দিন অব্যাহত থাকবে?জনস্বাস্থ্যবিদ ও রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, হুবহু না মিললেও এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব। তবে তার জন্য দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতির সঠিক তথ্য হাতে থাকা দরকার। সংক্রমণ পরিস্থিতির নির্ভরযোগ্য তথ্য কারও কাছে নেই। প্রতিদিনের নমুনা পরীক্ষায় যে ফল পাওয়া যায়, তা সংক্রমণ পরিস্থিতির একটি অংশের চিত্র তুলে ধরে। সেটি পূর্ণ চিত্র নয়।
প্রাকৃতিক নিয়মেই অমিক্রনের দাপট কমে যাবে বলে মনে করেন কোনো কোনো জনস্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ববিদ। কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ থেকে অথবা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার কমতে থাকবে। এক দিন বাড়বে, তো দুই দিন কমবে। এভাবে কমতে থাকবে।জনস্বাস্থ্যবিদ ও রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, ঝড় একেবারে থেমে যাওয়ার আগে সকলকে ঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। প্রয়োজনীয় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।