অপারেটরের কাছ থেকেই নিতে হবে ‘সেট টপ বক্স’

অপারেটরের কাছ থেকেই নিতে হবে ‘সেট টপ বক্স’

ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্যাটেলাইট টেলিভিশন দেখতে হলে গ্রাহককে সেট টপ বক্স বসাতে হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। আর এই বক্স কিনতে হবে কেবল অপারেটরদের কাছ থেকে।অপারেটরেরা ইতিমধ্যে গ্রাহকদের সেট টপ বক্স নিতে বলছেন। বক্সের দাম বাবদ ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্রাহকদের কাছ থেকে দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দাম আরও কম হওয়া উচিত।তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম নয়, অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহর, সব বিভাগীয় শহর এবং কুমিল্লা, বগুড়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, রাঙামাটি ও কক্সবাজার জেলা শহরেও সেট টপ বক্স বসাতে হবে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে সময় পাওয়া যাবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সরকার কেবল টেলিভিশন সেবা খাতকে ডিজিটাল ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা এবং রাজস্ব আদায়ে সেট টপ বক্স নিশ্চিত করতে চাইছে। এই সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) রয়েছে। গ্রাহকের সুবিধা হলো, তাঁরা টেলিভিশনে ঝকঝকে ছবি ও উন্নত মানের শব্দ পাবেন।তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ রংপুর ডেইলীকে বলেন, সরকার এই খাতকে ডিজিটাল করছে। এতে গ্রাহকেরই লাভ। তিনি বলেন, সেট টপ বক্স নিয়ে যেন কোনো ধরনের মনোপলি (একচেটিয়া ব্যবসা) না হয় সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সতর্ক রয়েছে। গ্রাহকের স্বার্থ এখানে আগে দেখা হবে।

দাম ২, ০০০ থেকে ৩, ৫০০
‘ডিশ লাইন’ নামে পরিচিত কেব্‌ল অপারেটরদের সংযোগের মাধ্যমে আসা সিগন্যালকে ডিজিটালে রূপান্তর করাই হলো সেট টপ বক্সের কাজ। ঢাকার লালমাটিয়া এলাকায় প্রতিটি বক্সের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কেব্‌ল অপারেটর কসমিক স্যাটেলাইট টিভি নেটওয়ার্কের মালিক মুজিবর রহমান রংপুর ডেইলীকে বলেন, আগামী দিনগুলোতে দাম হয়তো কমবে। ঢাকার ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান ও বারিধারায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেট টপ বক্সের দাম তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। তবে মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী ও রামপুরা এলাকায় কেব্‌ল অপারেটরেরা জানান, এই বক্স কিনতে গ্রাহকদের দুই হাজার টাকার মতো লাগতে পারে। চট্টগ্রামের চিটাগাং কেব্‌ল লিমিটেড নামের একটি অপারেটর প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্যামল পালিত রংপুর ডেইলীকে বলেন, তাঁরা এখন বক্সের জন্য তিন হাজার টাকা নিচ্ছেন। তাঁদের কাছে খুব বেশি বক্স নেই। তাই দাম একটু বেশি পড়ছে।

অপারেটরের কাছ থেকেই নিতে হবে ‘সেট টপ বক্স’
সেট টপ বক্স নিয়ে যেন কোনো ধরনের মনোপলি (একচেটিয়া ব্যবসা) না হয় সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সতর্ক রয়েছে। গ্রাহকের স্বার্থ এখানে আগে দেখা হবে।

বাজার থেকে কেনা যাবে না
গ্রাহক চাইলে নিজে থেকে বক্স কিনে বসাতে পারবেন না। কেবল নেটওয়ার্ক সেবাদাতা দুটি প্রতিষ্ঠানের দুজন কর্মকর্তা রংপুর ডেইলীকে বলেন, গ্রাহকের কাছে যে বক্সটি থাকছে, তাতে একটি কোড নম্বর থাকবে। অপারেটর প্রান্তে একটি সার্ভার থাকবে, সেখানে এই কোড নম্বরটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দুই কোড না মিললে সেবা পাওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অপারেটরদের কাছ থেকে কেনার বাধ্যবাধকতার কারণে কেউ যাতে একচেটিয়া (মনোপলি) ব্যবসা করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। সুলভ মূল্যে গ্রাহকদের ভালো মানের বক্স দেওয়া হচ্ছে কি না, সে ক্ষেত্রে তদারকি দরকার। সেট টপ বক্সের মান ও বৈশিষ্টে৵ ভিন্নতা রয়েছে। কোনো কোনো সেট টপ বক্সে অনুষ্ঠান রেকর্ড করে রাখা যায়। মান ও বৈশিষ্টে৵র ভিন্নতায় দামও কম-বেশি হয়। চীনা ই-কমার্স সাইট আলিবাবার ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, পাইকারি কেনার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সেট টপ বক্সের দাম ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। অপারেটরেরা জানিয়েছেন, তাঁরা যে বক্স আনছেন, তার প্রতিটিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা শুল্ক-কর পড়ছে। জাহাজভাড়া ও অন্যান্য খরচও রয়েছে।

বাংলাদেশে কেব্‌ল নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড কেব্‌ল সার্ভিস (ইউসিএস) অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মোশারফ আলী রংপুর ডেইলীকে বলেন, তাঁরা একসঙ্গে অনেক বক্স আনছেন। ফলে দাম কমে আসবে। ১ হাজার ৬০০ টাকায় গ্রাহককে সেট টপ বক্স দিতে পারবেন বলে আশা করছেন। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন প্রভাবশালীরা। তাঁরা গ্রাহকদের সাশ্রয়ী দামে সেট টপ বক্স দেবেন কি না, সে প্রশ্নও রয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শতে৴ ঢাকার শেওড়াপাড়ার একজন গ্রাহক বলেন, ডিশ সংযোগে জোর করে সংযোগ ফি ও বিল বেশি নেওয়া হয়। এখন দেড় হাজার টাকার বক্স তিন হাজার টাকা নিলে গ্রাহকের উপায় থাকবে না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বাড়তি দাম নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না বলে দাবি করছেন কেব্‌ল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াবের সভাপতি আনোয়ার পারভেজ। তিনি বলেন, একটি মূল সুবিধাসম্পন্ন বা বেসিক বক্স আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দাম যাতে বেশি নেওয়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

সময় আর ১৩ দিন
চলতি মাসের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বক্স বসানোর বিষয়ে আনোয়ার পারভেজ বলেন, নেটওয়ার্ক তৈরি আছে। তবে বাসায় বাসায় বক্স বসানো নিশ্চিত করা কঠিন। বাংলাদেশে মোট পরিবারের সংখ্যা (খানা) প্রায় চার কোটি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এর ৬০ শতাংশ ধরে প্রায় আড়াই কোটি বাসায় কেব্‌ল সংযোগ রয়েছে। বড় অংশের গ্রাহক ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তাঁদের সেট টপ বক্সের আওতায় আনতে সময় আছে আর ১৩ দিন। অবশ্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকেরা চান, ঘোষণা অনুযায়ী যথাসময়ে সেট টপ বক্স বসানো নিশ্চিত করা হোক। মালিকদের সমিতি অ্যাটকোর সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল বাবু রংপুর ডেইলীকে বলেন, এটা নিশ্চিত হলে ভবিষ্যতে পে-চ্যানেলের দিকে যাওয়া যাবে। এতে সংকটে থাকা চ্যানেলগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। ফলে অনুষ্ঠানের মান বাড়াতে বিনিয়োগ করা যাবে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *