সাজিয়ে সাজিয়ে আর মামলা দেবেন না, সরকারকে ফখরুল

গায়েবি মামলা দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রতিটি মামলার হিসাব নিচ্ছি। সাক্ষীদের কথা শুনছি। কিছুই হয়নি। সাজিয়ে সাজিয়ে আর মামলা দেবেন না। হিসাব কিন্তু একদিন হয়। নিষেধাজ্ঞা এসেছে। জনগণের নিষেধাজ্ঞা যদি আসে, তখন আরও বড় বিপদ সৃষ্টি হবে।’

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। পুলিশের মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, পুলিশের নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি।

 

 

সমাবেশে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ সরকার এত ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছে যে তারা বিভাগীয় সমাবেশ বন্ধ করার জন্য, আন্দোলনকে দমন করার জন্য এখন মরিয়া হয়ে আক্রমণ করছে। গায়েবি মামলা দিচ্ছে। মিথ্যা মামলা নিচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, গ্রেপ্তার করছে।

গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের একটা হিসাবও দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে ১৬৯টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় নাম দিয়ে আসামি করেছে ৬ হাজার ৭২৩ জনকে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫০ জনকে। আর ইতিমধ্যে ছয় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছেন, সেখান থেকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাতের বেলায় নেতা-কর্মীদের ডিবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আবার সেই একইভাবে একই কায়দায় ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে যে কায়দায় দেশের মানুষের আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল, সেভাবেই আবার তারা (সরকার) শুরু করেছে। তবে মানুষকে স্তব্ধ করে রাখা যায়নি। আজকে মানুষ জেগে উঠেছে।

পুলিশকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান

আগামী ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বিএনপিকে যে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা পরিবর্তন করে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দয়া করে সংঘাতের পথে যাবেন না। নয়াপল্টনেই যেন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হতে পারে, সে ব্যবস্থা করুন।’

উল্লেখ্য, নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে ২৬টি শর্ত দিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সমাবেশে এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক মাস আগে দলের পক্ষ থেকে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি যে আমরা নয়াপল্টনের সামনে বিভাগীয় সমাবেশ করতে চাই। এখানে বহু সমাবেশ হয়েছে। এখানে জাতীয় সমাবেশ হয়েছে। মহাসমাবেশ হয়েছে। সেখানে খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেছেন। ২০–দলীয় জোটের সমাবেশ হয়েছে। কোনো দিন কোনো সমস্যা হয়নি। সুতরাং আমরা যে চিঠি দিয়েছি, অনেক ভেবেচিন্তে দিয়েছি। এটা ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ, এটা জাতীয় সমাবেশ নয়। ঢাকা বিভাগের সমাবেশের জন্য নয়াপল্টন অফিসের সামনেই জায়গা দিতে হবে।

যানজটের কথা বলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যানবাহনের কথা বলেছেন, এটা খোঁড়া যুক্তি। শনিবার সরকারি ছুটির দিন। সেদিন যানবাহনের জট থাকে না এখানে। যে জায়গায় আপনারা দিতে চান, সেই জায়গায় আমরা কমফোর্টেবল নই। সেখানে চারদিকে দেয়াল দিয়ে আবদ্ধ করা। একটা মাত্র গেট। যে গেট দিয়ে একজন মানুষ ঠুকতে পারে, বেরোতে পারে না।’

ঢাকা বিভাগের জন্য আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করাকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব সমাবেশে আগত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ১০ তারিখে বিভাগীয় সমাবেশকে সফল করতে হবে। নেতা-কর্মীরা সমাবেশ সফল করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্ন করলে সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা দুই হাত তুলে পারবেন বলে জবাব দেন। তখন মির্জা ফখরুল বলেন, তরুণ ও যুবকেরা জেগে উঠেছে। কারও ক্ষমতা নেই তাদের রুদ্ধ করে রাখে। এই কাফেলা চলবেই।

অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সব ব্যাংকেই তো গোলমাল। লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল। ভুয়া কোম্পানি তৈরি করেছে কয়েকটা, নিয়ে চলে গেছে। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কিছুই হয় না। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে, কিছুই হয় না। ওয়াসার এমডিকে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হয় বছরে। তা–ও সব নিয়মকানুন ভঙ্গ করে। বেশির ভাগ সময় আবার তিনি দেশের বাইরে থাকেন। আমেরিকাতে থাকেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে এরা অনাচার–অবিচার করে দেশের মূল্যবোধ শেষ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল।

বেআইনি ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রযন্ত্রগুলো ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তারা (সরকার) পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করছে। গায়েবি মামলা দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘প্রতিটি মামলার হিসাব নিচ্ছি। সাক্ষীদের কথা শুনছি। কিছুই হয়নি। সাজিয়ে সাজিয়ে আর মামলা দেবেন না। হিসাব একদিন হয়। সেনশন এসেছে। আবার জনগণের সেনশন যদি আসে, তখন আরও বড় বিপদ সৃষ্টি হবে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (এ্যানি) প্রমুখ।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *