সহশিক্ষা ও ফ্রি মিক্সিং

সহশিক্ষায় পড়ার মত শক্ত ব্যক্তিত্ব তৈরী করার যে পরামর্শ আমাদের বোনেরা পাচ্ছেন, এ ব্যাপারে কিছু কথা সুস্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করি ।

তার আগে সহশিক্ষা এবং ফ্রি মিক্সিং এক না – এই যুক্তির বিপরীতে কিছু কথা বলে নেই । একজন সম্মানিত আলেম বলেছেন, ইসলামী শরীয়াহ’র পরিভাষায় ফ্রি মিক্সিং হলো – এমন কোন জায়গায় নারী পুরুষ একসাথে হওয়া যেখানে উভয়ের মাঝে দৃষ্টি বিনিময় সম্ভব, কথা বলা সম্ভব এবং কোন বাঁধা ছাড়া চলাফেরা সম্ভব ।

খেয়াল করুন, এখানে শুধু সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ সম্ভাবনা তৈরী হলেই সেটা শরীয়াহ মতে ফ্রি মিক্সিং হিসেবে গন্য হবে ।

এবার আসুন ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে … বেশি কথা না বলে কুরআন থেকে জাস্ট একটা ঘটনা উল্লেখ করবো । আল্লাহর নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামকে আযীযের স্ত্রী কুপ্রস্তাবের জন্য আহবান করলো । ইউসুফ আলাইহিস সালাম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং আযীযের স্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিলেন সীমা লংঘন না করতে । এই ঘটনাটা সুরা ইউসুফের ২৩ নং আয়াতে বর্নিত আছে ।

পরের আয়াত অর্থাৎ ২৪ নং আয়াতে এসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা কি বলেছিলেন ?

“ And indeed she desired him and he (yousuf) would have inclined to her desire, had he not seen the evidence of his Lord. “

– নিশ্চয় সেই মহিলা তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল আর সেও (ইউসুফ) তার প্রতি আসক্ত হয়েই যেত যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার মহিমা অবলোকন করতো ।”

এই আয়াতের তাফসীরে একজন শায়খ বলছিলেন, ইউসুফ আলাইহিস সালাম আল্লাহর নবী ছিলেন তথাপি তিনি মানবীয় দুর্বলতার উর্ধ্বে ছিলেন না । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা এটাই বলেছেন যে, তিনি অনুগ্রহ না করলে ইউসুফ আলাইহিস সালাম ঐ মহিলার প্রতি ঝুঁকে যেতে পারতেন ।

এখন প্রশ্ন হলো, আমরা যারা শক্ত ব্যক্তিত্বের দোহাই দিচ্ছি তারা কতটা নিশ্চিত হতে পারবেন যে শরীয়াহর ভাষায় সহশিক্ষার মত ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে গিয়েও শক্ত থাকতে পারবেন । কোন ধরণের মন্দ ওয়াসওয়াসা শয়তান আমাদের মনে দিবেনা কিংবা দিলেও সে শয়তানকে হারিয়ে শক্ত ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে পারবে যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা কুরআনে তাঁর একজন নবীর মানবীয় দুর্বলতা তুলে ধরে আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন ।

আমরা কি নিজেদেরকে একজন নবীর চেয়েও বেশি তাকওয়াবান মনে করি ?

আল্লাহ ক্ষমা করুন …

এখন আবার অনেকে দেখি আরেক যুক্তি দেন এই বলে যে, মাসজিদে নারী পুরুষের জাম’আতে সালাত আদায় কেও তো তাহলে ফ্রি মিক্সং বলা যেতে পারে । মা’আযাল্লাহ …

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাসজিদে জাম’আতে সালাতের কাতার সম্পর্কে কি বলে গিয়েছেন সেটা কি আমরা ভুলে গেলাম ?

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন – পুরুষের জন্য সালাতে সবচেয়ে উত্তম কাতার হলো প্রথম কাতার আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাতার হলো, শেষ কাতার । আর নারীদের জন্য সবচেয়ে উত্তম কাতার হলো শেষ কাতার আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাতার হলো প্রথম কাতার ।

উল্লেখ্য একজন আলেমের লেকচার থেকে জেনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় মাসজিদে তিন ধরণের মানুষের কাতার হতো । ইমামের পিছনে প্রথম দিকে থাকতেন পুরুষরা, মাঝে ছোট ছোট নাবালেগ বাচ্চারা এবং সবশেষে নারীরা ।

নারী ও পুরুষকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা তৈরী-ই করেছেন এমন ফিতরাত দিয়ে যে একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ কাজ করবেই যদি না সে পাগল এবং শিশু হয় । এখন আপনি যদি বলেন, আল্লাহ আমাদের কে এভাবে বানালেন কেন, তাহলে অবশ্য আমার আর কিছু বলার নাই ।

যেতে যেতে অনেক দিন আগে পড়া, আতা রহিমাহুল্লাহর একটা কথা বলে যাই । তিনি বলেছিলেন –

আমাকে যদি পুরো মুসলিম খিলাফতের ধন ভান্ডার সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমি হয়তোবা তা যথাযথ রাখতে সক্ষম হবো কিন্তু আমাকে যদি মক্কার সবচেয়ে নিকৃষ্ট কুৎসিত নারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়, আমি নিজের প্রতি সে বিশ্বাস রাখতে পারিনা যে আমি তার যথাযথ সংরক্ষণ করতে পারবো ।

অর্থাৎ ধন সম্পদ আমাদের জন্য অনেক বড় ফিতনা কিন্তু আরও বড় সত্য হলো, একজন পুরুষের জন্য নারী তার চেয়েও বড় ফিতনা যদিও বা সে অসুন্দরও হয়ে থাকে তবুও ।

সহশিক্ষা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য হারাম, হারাম এবং হারাম । কিন্তু পুরুষের জন্য এই ব্যাপারে কিছুটা ছাড় আলেমগন দিয়েছেন যেহেতু পরিবারের ভরণ পোষণের পুরো দায়িত্ব তার উপর বর্তায় । আর জীবিকার অন্বেষণে তার সার্টিফিকেটের প্রয়োজন আছে । তবুও তাদেরকে কঠোর ভাবে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে । নজরের হিফাযতের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সাধ্য ও সুযোগ থাকলে সহশিক্ষা থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসতে বলা হয়েছে । কিন্তু এদিক থেকে নারীর জন্য তা অবধারিত নয় বিধায় তাদেরকে যথা সম্ভব সহশিক্ষা পরিহার করতে বলা হয়েছে । পড়াশোনার জন্য গার্লস অনলি প্রতিষ্ঠানকে প্রাধান্য দেওয়া অথবা ঘরে থেকে অন লাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ।
২য় অংশ👇

বোনেরা আমার !
আল্লাহ’র দ্বীন আল্লাহ বিজয় করবেনই করবেন । কিন্তু দ্বীনের খেদমতের নামে আমরা যদি ভুল পথ অবলম্বন করি তবে দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্থ আমারাই হবো ।
আর উম্মাহর খেদমতে আমরা মেয়েরাও যে আছি এবং থাকবো । নট নেসেসারিলি আমাদেরকে পুরুষের পাশাপাশি প্রকাশ্যমান থাকতে হবে । বরং আমরা তো হলাম মাটির নিচের সেই মজবুত ফাউন্ডেশন বা স্তম্ভ যাকে দেখা যায়না কিন্তু যার শক্তি, যার দৃড়তার উপর দাঁড়িয়ে থাকে একেকটা উঁচু থেকে উঁচুতর ইমারত …

– নুসরাত জাহান

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *