বরিশালে গত রাতে একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও’র) বাসায় হামলা করেছে সেখানকার সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কর্মীরা। অর্থাৎ সরকারি দলের কর্মীরা।
তো কেন হামলা করেছে?
শোক দিবস উপলক্ষে সেখানে বেশ কিছু ব্যানার লাগিয়েছিল ওই এলাকার আরেকজন নেতা, যিনি আবার প্রতিমন্ত্রীও বটে। তার নিজের ছবি সহ বেশ কিছু ব্যনার তিনি লাগিয়েছিলেন।
কিন্তু মেয়র মশাইয়ের সেটা পছন্দ হবে কেন? তিনিও তো একজন বড় স্থানীয় নেতা। তাই তিনি তার কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন ব্যানার সরিয়ে ফেলতে। তার কর্মীরা ব্যানার সরিয়ে ফেলছিল; তখন এই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাঁধা দেন। এতে করে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়রের কর্মীরা তার বাসায় হামলা চালিয়েছে।
এই বিসিএস ক্যাডার নিজেও কিন্তু ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। সরকারি বড় কর্তার হিসাব বাদ দিলাম; ছাত্রলীগের একজন সাবেক কর্মী’র পরিচয়ের পরেও রক্ষা হয়নি। তার ঘরে হামলে পড়েছে একই দলের কর্মীরা। কারন হচ্ছে- তাদের নিজেদের স্বার্থে আঘাত এসছে।
তবে আমার কাছে মূল বিষয় এইসবের কিছু’ই না। হামলা করার সময় সরকারি দলের এই কর্মীরা বার বার বলছিল
“শোক-টোক মানি না, শুধু সাদিক ভাইয়ের ব্যানার থাকবে!”
অর্থাৎর এদের কাছে শোক দিবস কোন বিষয় না। তাদের নেতা, অর্থাৎ স্থানীয় মেয়র’ই সব কিছু।
এই ইউএনও ঘরে করোনা আক্রান্ত বাবা-মা ছিল। এরপরও রক্ষা হয়নি।
এবার আসা যাক অধ্যাপক আসিফ নজরুলে বিষয়ে। আফগানিস্তনে এখন যা হচ্ছে; এই নিয়ে তিনি ফেসবুকে একটা পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন- “সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দরের মতো দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে”
কেন তিনি এমন একটা লেখা লিখলেন; এই জন্য এখন আপনারা চাইছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে চাকরীচ্যুত করা হোক। তাকে নাকি হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
পরিচিত এক ব্যরিস্টারকে দেখলাম লিখেছে- বর্তমান সরকারের আমলে কি ভাবে আসিফ নজরুলে ডিপার্টমেন্টের হেড হয়!
লেখালেখির সূত্রে অধ্যাপক আসিফ নজরুল’কে আমি চিনি। তিনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডও বটে। আমরা একই পত্রিকাতে লেখালেখিও করেছি। উনার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক দর্শনের কোন মিল নেই। একদম ভিন্ন।
ভিন্নমত থাকতেই পারে। তার মতের সঙ্গে আপনার মত মিলতে না’ই পারে। কিন্তু তাই বলে তাকে হুমকি দিতে হবে কেন? তার চাকরি নিয়ে কথা বলতে হবে কেন?
একটা কথা পরিষ্কার করে বলে নেই। আপনারা যদি কোন বড় পদ-পদবী দেন, সেটা আমি নিতে যাবো না। দিয়েছিলেনও। নিতে যাইনি। এখন যদি এসে বলেন- কোন একটা দেশের রাষ্ট্রদূত হতে; সেই প্রস্তাবও আমি বিনয়ের সাথেই ফিরিয়ে দেব।
আমি বরং আমার মতো করে সমালোচনা করে যাবো। এতে যদি আপনাদের বোধবুদ্ধি হয়। আপনাদের ভালো করে বলে রাখি- আফগানিস্তানে যা হচ্ছে, ভালো করে নজর রাখুন। সেখানে কোন ফাইটিং হয়নি। কোন মানুষ মারা যায়নি। কি করে বিনা যুদ্ধে তালেবানরা কাবুল দখল করল?
কারন সেখানকার মানুষজন দীর্ঘদিন ধরে দেশটি সরকারের দুর্নীতির জন্য অতিষ্ঠ হয়ে ছিল। দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো যে দেশটির পুলিশ/সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যরা গোপনে তালেবানদের সাথে যোগাযোগ রাখছিল। এরপর যা হয়েছে; সেটা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।
আপনাদের দলের কর্মীরা একজন সরকারি কর্মকর্তার বাসায় নির্দ্বিধায় হামলা করে বলেছে
- “শোক-টোক মানি না, শুধু সাদিক ভাইয়ের ব্যানার থাকবে!”
ভালো করে শুনে রাখুন- এইসব কর্মীরা একদিন সাদিক ভাইকেও মানবে না। কারন এরা শুধু আপনাদের ক্ষমতার সুবিধা ভোগ করছে। যে দিন ক্ষমতা থাকবেন না। সেদিন এরাই আপনাদের সবার প্রথমে আঘাত করবে।
যেই ব্যরিস্টার বলছে- “আসিফ নজরুল কি করে বর্তমান সরকারের আমলে ডিপার্টমেন্টের প্রধান হয়।” জেনে রাখুন, এই রকম ব্যরিস্টারাই যখন ক্ষমতা থাকবে না; তখন আপনাদের জেলে ঢুকানোর জন্য আদালতে যাবে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে মতাদর্শে আমার সেই অর্থে মিল নেই। আমরা দুই মেরুর বাসিন্দা। বিশেষ করে রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে। কিন্তু তাই বলে- তার সকল লেখা আমার খারাপ লাগতে হবে; এমন তো না। বরং তার অনেক লেখা আমার ভালোও লাগে।
মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। ভিন্নতা থাকলে কাউকে হুমকি দিতে হবে; এটা কোন ধরনের প্র্যাকটিস?
এমন প্র্যাকটিস করতে থাকলে একদিন সেটা আপনাদের নিজেদের গায়ে এসেই লাগবে।
বরিশালের ঘটনাটাই এর ভালো উদাহরণ। ইউএনও নিজেও কিন্তু ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। কিন্তু তার সাথে মতের মিল না হওয়ায় স্থানীয় কর্মীরা তার উপর হামলে পড়েছে।
সহনশীল হন। আফগানিদের তাও আমেরিকা যাবার একটা সুযোগ আছে। আপনাদের কী সেই সুযোগ আছে?
ভাবুন। চিন্তা করুন এবং আমার মতো যারা সমালোচনা করছে; তারা কেন সমালোচনা করছে সেটা বিশ্লেষণ করুন।