রোমাঞ্চকর ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা

সৈকত আলির দাপুটে ব্যাটিংয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুঠো থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল ম্যাচটা। ১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮ ওভারেই ১ উইকেটে ৬৯ রান তুলে ফেলে ফরচুন বরিশাল। অর্থাৎ ৯ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ১২ ওভারে ৮৩ রান লাগত দলটির। কিন্তু সৈকতকে থামিয়ে বোলারদের নৈপুণ্যে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে কুমিল্লা। রোমাঞ্চ শেষে দলটি জিতে নেয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সপ্তম আসরের শিরোপা।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুক্রবার ফরচুন বরিশালকে ১ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেষ ৪ ওভারে ৬ উইকেটে হাতে নিয়ে ২৭ রান করতে হতো বরিশালকে। কিন্তু হতাশার ব্যাটিংয়ে শেষ ওভারে ১০ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় তাদের। হাতে তিন উইকেট নিয়ে যে সমীকরণ মেলাতে পারেনি সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দল।

বিপিএলে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতল কুমিল্লা। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথম ও ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল দলটি। বিপিএলে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয়ের রেকর্ড এখন কুমিল্লার দখলে। দুইবার শিরোপা জিতে তাদের পরের স্থানে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস।

টস হেরে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লার পক্ষে এদিনও ঝড় তুলেছিলেন সুনিল নারিন। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে যিনি ১৩ বলে ফিফটি করে বিপিএলের রেকর্ড গড়েন। আর এদিন ২১ বলে ফিফটি করেন নারিন।

তবে নারিনের ঝড়ের পর বরিশালের বোলাররা দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে। ফলে ৯ উইকেটে ১৫১ রানে থামে কুমিল্লার ইনিংস।

এরপর বরিশালের পক্ষে সৈকত আলি ঝড় তুলেছিলেন। সেই ঝড় থামিয়ে কুমিল্লা জিতে নেয় শিরোপা। বরিশাল ৮ উইকেটে ১৫০ রানে থামে।

ফাইনালে মিলে টুর্নামেন্টে মোট চারবার মুখোমুখি হলো কুমিল্লা ও বরিশাল। এদিন কুমিল্লার জয়ে ২-২ সমতা থাকল। অবশ্য শিরোপা ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বাধীন কুমিল্লার।

লিগ পর্বে দুইবারের দেখায় প্রথমটিতে কুমিল্লা জিতলেও দ্বিতীয়টিতে জিতে বরিশাল। এরপর প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লাকে হারিয়ে সবার আগে ফাইনালে উঠে বরিশাল। আর কুমিল্লা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতে ফাইনালে উঠে আসে।

টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ খেলা মুনিম শাহরিয়ার এদিন ভালো করতে পারেননি। লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই তাকে হারায় বরিশাল। তবে দ্বিতীয় উইকেটে গেইলকে নিয়ে সৈকত আলি ৫১ বলে ৭৪ রানের জুটি উপহার দেন। যেখানে গেইলের অবদান মাত্র ১৭ বলে ১২।

সৈকতকে থামান তানভির ইসলাম। ৩৪ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৫৮ রান করেন তিনি। তখনও মনে হয়নি বরিশাল এই ম্যাচটা হারতে পারে। কিন্তু সৈকতের পর ক্রিস গেইলও ফিরলে ম্যাচের রং বদলাতে থাকে। গেইল জাতীয় দলের সতীর্থ নারিনের শিকার হন ৩১ বলে ৩৩ রান করে।

এরপর সাকিব আল হাসান (৭ বলে ৭), নুরুল হাসান সোহান (১৩ বলে ১৪), ডোয়াইন ব্রাভো (২ বলে ১), নাজমুল হোসেন শান্তরা (১৫ বলে ১২) আসা যাওয়ার মিছিলে ছিলেন। ফলে ম্যাচ কঠিন থেকে কঠিন হয়ে পড়ে বরিশালের জন্য।

ব্যাটিংয়ে মাত করা সুনিল নারিন বোলিংয়েও মাত্র ১৫ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন। তানভির ২৫ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ, শহিদুল ইসলাম।

১৯তম ওভারে ৬ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখেন কাটার মাস্টার খ্যাত মোস্তাফিজ। শেষ ওভারে দারুণ বোলিংয়ে শহিদুল দলকে জয় উপহার দেন।

ব্যাটিংয়ে সুনিল নারিন ২৩ বলে ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৫৭ রান করেন। নারিনের পর ইংলিশ অলরাউন্ডার মইন আলি বাদে কুমিল্লার আর কেউ সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। মইনের দৃঢ়তাতেই মূলত কুমিল্লার পুঁজিটা পরে দেড় শ ছুঁয়েছিল। কৃতিত্ব দিতে হবে আবু হায়দারকেও। সপ্তম উইকেটে দুজন ৫১ বলে ৫৩ রানের জুটি উপহার দেন।

মাইন ও রনি শেষ ওভারে ফেরেন। সঙ্গে শহিদুল ইসলামও ফেরেন ওই ওভারে। ৩ উইকেট হারিয়ে শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান তুলতে পারে কুমিল্লা। না হলে তাদের স্কোরটা আরেকটু বড় হতে পারত।

রান আউটে কাটা পড়া মইন ৩২ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৮ রান করেন। রনি ২৭ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় করেন ১৯ রান।

বরিশালের পক্ষে ২৭ রান খরচায় ২ উইকেট নেন মুজিব। ৩১ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন শফিকুল। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব, ব্রাভো ও মেহেদী রানা।

ম্যাচসেরা হয়েছেন সুনিল নারিন। টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *