বাসার সামনে নিয়মিত বসত মাদকের আসর। এলাকার মানুষ, এ পথে যাতায়াত করা স্কুল-কলেজের মেয়েদের প্রায়শই পড়তে হতো বিপাকে। অনেকেই ইভটিজিং শিকার হলেও বখাটেদের ভয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি। জান্নাতী সিদ্ধান্ত নেয় কিছু একটা করার। বিষয়টা কলেজের বন্ধুদেরও জানান। জনমত তৈরি করতে জান্নাতী এলাকার মানুষকে প্রথমে সচেতন করেন। বিপদে পড়তে পারেন জেনেও বাবাকে আইনের সহযোগিতা নিতে সাহস জোগান। জান্নাতী জানান, বাইরের মানুষকে সচেতন করা সহজ হলেও পরিবারের মানুষকে রাজি করানো কঠিন ছিল। এরপর এলাকার ১২ জন সচেতন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ডিএমপির মিরপুর জোনের উপপুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। আর তারপরই ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হতে হয় তাকে। বুধবার মাদকসেবী রানা হামলা চালায় বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের এ শিক্ষার্থীর ওপর।
জান্নাতী বলেন, আমাদের বাসা মিরপুর ১১ নম্বরে। বুধবার আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে বখাটে রানা (২২), তার ছোট ভাই রায়হান (১৮) বাসার সামনে মাদক সেবন করছিল। বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাদের চলে যেতে বলি। একসময় আমার মা সুরাইয়া বেগমও আমার সঙ্গে আসে। রানাদের এখান থেকে চলে যেতে বললে, ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। পকেট থেকে চাকু বের করে পেটে আঘাত করতে গেলে আমি হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিছু বোঝার আগেই হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখি। এরপর অজ্ঞান হয়ে হয়ে যাই। তিনি বলেন, পরবর্তীতে জানতে পারি, এলাকার মানুষের সহযোগিতায় আমাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। জানতে পারি আমাকে উদ্ধার করতে বাবা মো. জাকির হোসেন (৪০) এগিয়ে আসলে তাকেও আহত করা হয়।জান্নাতী আরো বলেন, থানায় অভিযোগ করার পর থেকে আমি এবং আমার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাবা-মা ভয়ে আছেন।
অভিযুক্ত রানার পরিচয় বিষয়ে জানা যায়, স্থানীয় সিএনজিচালকের ছেলে রানা। এলাকায় দীর্ঘ দিন মাদকের কারবার করে আসছে। তাকে সহযোগিতা করছে তার ছোট ভাই রায়হানসহ এলাকার আরো কিছু বখাটে। এ বিষয়ে স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল রউফ (নান্নু) দেশে রূপান্তরকে জানান, কারও ওপর হামলা হয়েছে, এমন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ আসলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে জান্নাতী বৃহস্পতিবার পল্লবী থানায় অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগে এলাকার মানুষ মাদক বিক্রির জন্য উপপুলিশ কমিশনার লিখিত আবেদন করেছেন, এটা আমার জানা নেই। মেয়েটি লিখিত অভিযোগ করেছে। আমরা তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে আবদুল আজাদ বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক তিনি তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।