গত ১ এপ্রিল থেকে পর্যটকসহ লোকজনের সমাগম নিষিদ্ধ করে জেলা প্রশাসন ,করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে । এখনো চলমান সেই নির্দেশনা । বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে তবে ১৯ আগস্ট থেকে সমুদ্রসৈকতসহ । আর এতে খুশি হোটেল–মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায় জড়িত লাখো বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক-কর্মচারী সকলে । তবে তাঁরা বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন ।
টানা সাড়ে চার মাস ধরে সৈকতে পর্যটক না থাকায় শহরে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, সাত শতাধিক রেস্তোরাঁ এবং শুঁটকি, শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি পণ্যসহ রকমারি তিন হাজারের বেশি দোকানপাট বন্ধ ছিল কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী এই কথা জানান । দেড় হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে ,এতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় । সেই ক্ষতি পুষিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা ১৯ আগস্ট থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চালুর মাধ্যমে ।
তবে এদিকে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণায় কক্সবাজারের অধিকাংশ দোকানপাট, শপিং মল, বিপণিবিতান, হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে বলে জানান তারা । তবে সড়কে চলছে গণপরিবহন। পুরো সৈকত ফাঁকা আজ শুক্রবার সকাল নয়টায় সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্টে দেখা যায়। বালুচরে বিচরণ করছে , খাদ্যের সন্ধানে কয়েকটি ঘোড়া । কিন্তু ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ড কর্মীরা তাঁদের নামতে দিচ্ছেন না ,কিছু মানুষ সৈকতে নামার চেষ্টা করছেন । তবে সৈকত এলাকার দোকানপাট, রেস্তোরাঁগুলোও বন্ধ । আর সৈকতের কিটকটগুলো (চেয়ার ছাতা) সংস্কার করা হচ্ছে।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কক্সবাজারের সাত শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও রেস্তোরাঁর মালিকদের পৃথক সাতটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত । করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের বিধিনিষেধের কারণে বেকার হয়ে পড়েন লাখো কর্মজীবী মানুষ এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার এই কথা বলেন । দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি এ সময়ে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে । রাতে থাকার জন্য দুজন অতিথি এসেছেন আজ সকাল ১০টায় কলাতলী সৈকতের ‘সি ওয়েল পার্ক’ নামের একটি গেস্ট হাউসে দেখা গেছে।
আরও ৮৯টি কক্ষ খালি পড়ে আছে ,গেস্ট হাউসের । ১১ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-গেস্ট হাউসগুলো খোলার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন সি ওয়েল পার্কের মালিক মোহাম্মদ সেলিম বলেন । তবে পর্যটকদের সৈকতে নামা নিষিদ্ধ থাকায় কেউ আসছেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন ।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একটি হোটেলের মালিক বলেন, ১৯ আগস্ট থেকে একসঙ্গে পাঁচ-ছয় হাজার পর্যটক হোটেলে উঠতে পারেন ,এ জন্য অনেকে হোটেলকক্ষ অগ্রিম ভাড়া নিয়ে রাখছেন।
মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচারদ্বীপের পরিবেশবান্ধব ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট দেশি-বিদেশি পর্যটকের পছন্দের জায়গা’। তবে এখানে ১০০ জন ধারণক্ষমতার ৫১টি কটেজ আছে । বিনোদনের নানা সুবিধা আছে আধুনিক মানের রেস্তোরাঁসহ । এই রিসোর্টও বন্ধ গত ১ এপ্রিল থেকে। রিসোর্টের কক্ষ ও রেস্তোরাঁ পরিষ্কার করতে দেখা যায় ,আজ দুপুর থেকে অতিথিদের জন্য ।
প্রতিবছর কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন অন্তত ২৫ লাখের বেশি পর্যটক ,মারমেইড বিচ রিসোর্টের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন। তবে এত দিন সৈকত ভ্রমণ বন্ধ থাকায় পর্যটকের সমাগম ঘটেনি। তবে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো বন্ধ ছিল । আর এখন প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি পুষিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা ।
টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর, হিমছড়ি সৈকতে বেশ কিছু মানুষকে বিচারণ করতে দেখা গেছে আজ বেলা ১১টার দিকে ।
কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত ,উত্তাল সাগরের ঠান্ডা লোনাজলে কেউ শরীর ভেজাচ্ছেন । কেউ নেই এসব পয়েন্টে বাঁধা দেওয়ার ।
করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি অল্প সময়ের মধ্যে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয় ,কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন । সারা বছর খোলা রাখার সিদ্ধান্ত আসা জরুরি ফলে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল–রেস্তোরাঁগুলো । তা না হলে লক্ষকোটি টাকার বিনিয়োগ মাঠে মারা যাবে বলে জানান তারা ।
১৯ আগস্ট থেকে সীমিত আকারে পর্যটকসহ লোকজনকে সৈকতে নামার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর আসনসংখ্যা ৫০ শতাংশ চালু রাখা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি তদারকির জন্য মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জেলা সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, ১২ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় করোনার সংক্রমণে মারা গেছেন ২৩১ জন। তাঁদের মধ্যে রোহিঙ্গা ২৯ জন। জেলায় করোনা শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৪০। সৈকতে লোকসমাগম বাড়লে করোনার সংক্রমণও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।