নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিদ্যুতায়িত খেতের পানিতে নেমে একে একে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিলমুদ গ্রামে স্থানীয় রহিম মিয়ার মার্কেটের পেছনে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া চারজন হলেন শিলমুদ গ্রামের এটিও মাওলানার বাড়ির আবদুর রহিম (৫৫), তাঁর ভাগনে মো. ইউছুফ (৪৫), ভাতিজা মো. সুমন (৩৩) এবং প্রতিবেশী মো. জুয়েল (২০)। প্রথমে আবদুর রহিম খেতে পানি নিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পষ্ট হন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বাকিরাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তিনি রহিম মিয়ার মার্কেটের মালিক ও সোনাইমুড়ীর ইনসাফ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ছিলেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, ওই খেতে থাকা পল্লী বিদ্যুতের স্টিলের খুঁটিটি অনেক বছরের পুরোনো হলেও তা অপসারণে উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাদের গাফিলতির কারণে চারটি প্রাণ ঝরে গেল।
বজরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আবদুর রহিম লাউগাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার জন্য মার্কেটের পেছনের খেত থেকে পানি আনতে যান। কিন্তু খেতে পোঁতা বিদ্যুতের স্টিলের খুঁটি এবং খেতের পানি বিদ্যুতায়িত হয়ে থাকায় তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সেখানে পড়ে থাকেন।
ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামানের ভাষ্য, রহিম ফিরতে দেরি হওয়ায় তাঁকে দেখতে সেখানে যান ভাগনে ইউছুফ। তিনিও পানিতে নেমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে থাকেন। এরপর যান আবদুর রহিমের ভাতিজা মো. সুমন। তিনিও একইভাবে খেতের পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে থাকেন। পরপর তিনজন গিয়ে কেউ ফিরে আসছেন না দেখে যান প্রতিবেশী জুয়েল। এরপর তিনিও একইভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
আক্তারুজ্জামান জানান, এরই মধ্যে বিষয়টি আশপাশের লোকজনের নজরে এলে তাঁরা পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিসহ খেতের পানি বিদ্যুতায়িত হয়েছে বলে সন্দেহ করেন। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনকে খবর দেওয়া হলে তাঁরা বিদ্যুৎ লাইনটি বন্ধ করেন। এরপর স্থানীয় লোকজন চারজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, পল্লী বিদ্যুতের ওই খুঁটি অনেক বছরের পুরোনো হলেও তা অপসারণে উদ্যোগ নেয়নি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া স্টিলের খুঁটিতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে কি না, তা–ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তদারক করেন না। এ কারণে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গেল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দিতে আশপাশের এলাকার মানুষজন ওই বাড়িতে ভিড় করছেন এবং সমবেদনা জানাচ্ছেন।
জানতে চাইলে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। সংশ্লিষ্ট বিদ্যুতের খুঁটিটি স্টিলের ছিল। কোনো কারণে খুঁটি বিদ্যুতায়িত (আর্থিং) হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ লাইনটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী সোনাইমুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাফিজুল হক বলেন, একটি খেতের মধ্যে স্টিলের বৈদ্যুতিক খুঁটি ছিল। ওই খুঁটি কোনো কারণে বিদ্যুতায়িত হয়। এতে খুঁটির চারপাশের পানিও বিদ্যুতায়িত হয়। এতে চারজন লোক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খানকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।